ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়াকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে হত্যা মধ্যপ্রাচ্যকে আরো অস্থিতিশীল এবং এ অঞ্চল জুড়ে যুদ্ধের বিস্তৃতি ঘটবে বলে বিশ্বের নেতৃবৃন্দ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
বুধবার (৩১ জুলাই) ইরানের তেহরানে নিজ বাসভবনে অবস্থানের সময় এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হন ইসমাইল হানিয়া।
ইরানের নতুন প্রেসিডিন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তেহরান গিয়েছিলেন হামাসের এই নেতা। সেখানে গিয়েই বুধবার হত্যার শিকার হয়েছেন ইসমাইল হানিয়া। ২০১৯ সাল থেকে স্বেচ্ছানির্বাসনে কুয়েতে বসবাস করছিলেন তিনি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভেতরে ঢুকে সহস্রাধিক ইসরায়েলিকে হত্যা করেন হামাস সদস্যরা। এরপর গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী হামাসকে নির্মূল করতে নির্বিচারে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তখন থেকেই ইসরায়েলের হত্যার তালিকার শীর্ষে ছিলেন হামাসের এই শীর্ষ নেতা। তাকে হত্যার পর অভিযোগের তীর ইসরায়েলের দিকে। এঘটনায় ক্ষুব্ধ ইরান, হামাস ও লেবাননভিত্তিক সংগঠন হেজবুল্লাহ প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে।
হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের পর কয়েকটি দেশ হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির জন্য আহ্বান জানায় ও এবিষয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে থাকে।
দি উইক ম্যাগাজিনের বুধবারের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির মূল মধ্যস্থতাকারী ছিলেন ইসমাইল হানিয়া।
রাশিয়া, চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশ ইসমাইল হানিয়া হত্যার নিন্দা জানিয়েছে। রাশিয়া এ ঘটনাকে ‘অপ্রত্যাশিত রাজনৈতিক হত্যা’ বলে জানিয়েছে। এ বিষয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কারো নাম উল্লেখ না করে ‘সবপক্ষ’কে উত্তেজনা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায়।
এক বিবৃতিতে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার হত্যা বিশ্বকে এক বিপজ্জনক অবস্থায় দাঁড় করিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের বিস্তৃতি যেন আর ঘটে, সে জন্য সব পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছে রাশিয়া।
দি উইক-এর প্রতিবেদন জানানো হয়, ইসমাইল হানিয়া ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আলোচনার মূল মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাকে হত্যার পর যুদ্ধবিরতির আলোচনা ভেঙে পড়তে পারে।
ইসমাইল হানিয়ার হত্যার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কাতার। এ হত্যাকে ‘জঘন্য অপরাধ’ হিসেবে অভিহিত করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করা হয়েছে। এটি পরিস্থিতিকে বিপজ্জনক করে তুলেছে। কাতার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, এই হত্যা (ইসমাইল হানিয়া) ইসরায়েলের গন্তব্যহীন আচরণ এ অঞ্চলকে চরম অশান্ত করে তুলেছে। এতে করে আরো উত্তেজনা বাড়বে এবং বিশ্বশান্তি বিঘ্নিত হবে।
এদিকে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট তাইয়েপ এন্ড্রোগান বলেছেন, এই হত্যা (ইসমাইল হানিয়া) আমাদের ফিলিস্তিনিভাইদের শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যচূত করবে। তিনি আরো বলেন, গাজার মহান প্রতিরোধ যোদ্ধা এবং আমাদের ফিলিস্তিনি স্বজনরা তাদের অধিকারের জন্য লড়ছেন। এ ঘটনার মাধ্যমে তাদের ইচ্ছাকে হত্যা করা হয়েছে।
অন্যদিকে, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসমাইল হানিয়া হত্যা মধ্যপ্রাচ্যকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলবে।
হামাসের সামরিক কমান্ডার মোহাম্মেদ দাইয়েফ হত্যার পর এটিই ছিল হামাসের জন্য বড় একটি ধাক্কা। তাকে চলতি বছরের জুন মাসে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে হত্যা করা হয়। ইসমাইল হানিয়া হত্যার মধ্য দিয়ে হামাসের সমমনাদের আরো ঘনিষ্ঠ হতে সহায়তা করবে এবং ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যের যুদ্ধের দামামাব বাজাবে।
প্রসঙ্গত, হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়া ২০১৯ সাল স্বেচ্ছানির্বাসনে কাতারে অবস্থান করছিলেন। তিনি তুরস্ক এবং ইরান সফর করে কূটনৈতিক মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করেন।
লেবাননের সংসদে হেজবুল্লাহর প্রতিনিধি আলী আম্মার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, এই শত্রু (ইসরায়েল) যুদ্ধ চায়। আমরা এর জন্য প্রস্তুত! আল্লাহ চাইলে আমরা উঠে দাঁড়াবো।
ইসমাইল হানিয়াকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে হত্যার কয়েক ঘণ্টা আগে হেজবুল্লাহর সেক্রেটারি জেনারেল হাসান নাসরুল্লাহ ‘ডানহাত’ হিসেবে পরিচিত ফুয়াদ শুকুরকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে হত্যা করে ইসরায়েল।
এরই প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আলী আম্মার লেবাননের সংসদে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় বয়ে গেলেও ও প্রতিপক্ষের হুঁশিয়ারি উচ্চারণের পরেও ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য আসেনি। এসব ঘটনা ঘটার পর সাধারণত ইসরায়েলকে চুপ থাকতে দেখা যায় বলে জানায়, দ্য উইক।