হামাস কখনো নেতৃত্ব শূন্যতায় ভোগে না- হামাস বিশ্লেষক

মধ্যপ্রাচ্য, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2024-08-03 20:53:03

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়া নিহত হওয়ার পর সংগঠনটি নেতৃত্ব শূন্যতায় পড়তে পারে বলে এমন একটি ধারণা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এ ধারণাকে উড়িয়ে দিয়েছেন হামাসবিষয়ে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ।

‘আরব পুনর্গঠন উদ্যোগ’-এর ঊর্ধ্বতন এক ফেলো আবদাল হাদি আলিজলা। তিনি ফিলিস্তিনের সামাজিক এবং রাজনৈতিক বিজ্ঞানীও। এবিষয়ে আবদাল হাদি আলিজলা বলেন, হামাস কখনো নেতৃত্ব শূন্যতায় ভোগে না। এ ব্যাপারে হামাস খুবই নমনীয়।

আবদাল হাদি মনে করেন, ইসমাইল হানিয়ার হত্যা হামাসকে ‘আরো শক্তিশালী’ করবে। সেইসঙ্গে ‘হামাসের জনপ্রিয়তা বাড়বে’।

আবদাল হাদি বলেন, ইসমাইল হানিয়া ছিলেন হামাস-ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির একজন মধ্যস্থকারী। ফিলিস্তিনিদের কাছে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ‘দুই দেশ’ (ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল) সমাধানে হানিয়া ছিলেন প্রকৃতপক্ষে একজন বাস্তববাদী মানুষ।

আবদাল হাদি জানান, ২০০২ সাল থেকে হামাসের নেতারা বিশেষ করে রাজনৈতিক শাখার নেতারা ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আহমেদ ইয়াসিন এবং অন্যতম নেতা ইসমাইল আবু শানাব এদের মধ্যে অন্যতম। এর প্রভাব হামাসের ওপর পড়ে ঠিকই কিন্তু এ কারণে হামাস এরপর তার সামরিক শাখাকে অত্যন্ত শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তোলে। এর একটি রাজনৈতিক কাঠামো রয়েছে, এটি আধা-গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হয়। এর নাম- সুরা (কাউন্সিল)।

আবদাল হাদি বলেন, হামাসের অভ্যন্তরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তাদের কাউন্সিল (সুরা) আছে। এই কাউন্সিল নিজের ভেতরে বৈঠক করে এবং তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরো প্রধান নির্বাচিত করে।

আবদাল হাদি জানান, ইতোমধ্যে হামাস হয়ত নির্ধারণ করে ফেলতে পারে, পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক নেতার ভূমিকা কে পালন করবেন। আলিজলা বলেন, হানিয়া হত্যা ফিলিস্তিনিদের আরো বেশি শক্তিশালী করবে। হামাস বিশ্বাস করে, সামরিক এবং সশস্ত্র প্রতিরোধই একমাত্র উপায়।

ইসরায়েল হামাসের অনেক নেতাকে হত্যা করেছে কিন্তু হামাসকে হঠানো যায়নি উল্লেখ করে ফিলিস্তিন ও হামাস বিশ্লেষক আবদাল হাদি আলিজলা বলেন, ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৯০ সালের প্রথমদিক পর্যন্ত ইসরায়েল ফাত্তাহ এবং প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) অনেক নেতাকে হত্যা করেছে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের ওপর এর প্রভাব পড়েনি। ফিলিস্তিনিদের আন্দোলন তাদের মুক্তির জন্য। এটি এক বা অন্য নেতা কিংবা রাজনৈতিক দলের ওপর নির্ভর করে না।

গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি আলোচনায় হানিয়া হত্যার প্রভাব
রাজনৈতিক ভাষ্যকার এবং কাউন্সিল ফর আরব-ব্রিটিশ আন্ডারস্ট্যান্ডিং (সিএএবিএইউ) পরিচালক ক্রিস ডোয়েল হাদি আলিজলার সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, ইসমাইল হানিয়ার হত্যা হামাসকে মানসিকভাবে দুর্বল করবে না। কারণ, এই গ্রুপে একজনের স্থলাভিষিক্ত করার মতো অন্য অনেকেই রয়েছেন।

হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়া। ৩১ জুলাই তিনি নিহত হন। তিনি ছিলেন হামাস-ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আলোচনার অন্যতম মধ্যস্থতাকারী, ছবি- সংগৃহীত


মারাত্মক সংকটে মধ্যপ্রাচ্য

হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়ার হত্যাকে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ বলে মনে করেন ক্রিস ডোয়েল। ক্রিস বলেন, হানিয়ার ওপর হামলা করার অর্থ ইসরায়েলের নেতৃত্ব ‘আঞ্চলিক যুদ্ধ’-এর ঝুঁকি মাথায় রেখেই করেছে। তারমানে তারা সবধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত।

ক্রিস ডোয়েল বলেন, গাজা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। শুধু তাই-ই নয়, হানিয়ার হত্যার পর যুদ্ধবিরতিতে খুব কমই আগ্রহ দেখাবে হামাস। তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনা খুবই কম বলেই মনে করা হচ্ছে।

ক্রিস ডোয়েল জানান, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে, ইসরায়েল আর কোনো হত্যা করবে না। তবে আপাতত হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির আলোচনা আর হচ্ছে না, তা বলাই যায়!

তিনি বলেন, আমরা জানি না কখন এবং কীভাবে মধ্যস্থতার আলোচনা ফের আলোচনার টেবিলে ফিরে আসবে। এটা শুধু হামাস আর গাজার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এটি এখন আরো বেশি আঞ্চলিক যুদ্ধের বিস্তৃতি ঘটাবে। মূলত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এখন পুরো বিশ্বকে চালাচ্ছেন এবং বিশ্বের নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলেছেন। শুধু তাই-ই নয়, আন্তর্জাতিক পদ্ধতি কীভাবে চলবে, সেটিও নির্ধারণ করে দিচ্ছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, বুধবার (৩১ জুলাই) ইরানের তেহরানে নিজ বাসভবনে অবস্থানের সময় হামলায় নিহত হন ইসমাইল হানিয়া। ইরানের নতুন প্রেসিডিন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তেহরান গিয়েছিলেন হামাসের এই নেতা। সেখানে গিয়ে বুধবার হত্যার শিকার হন ইসমাইল হানিয়া। তিনি ২০১৯ সাল থেকে স্বেচ্ছানির্বাসনে কুয়েতে বসবাস করছিলেন।

হানিয়া হত্যার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে লেবানের রাজধানী বৈরুতে হেজবুল্লাহ নেতা ফুয়াদ শুকুরকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে হত্যা করে ইসরায়েল। ফুয়াদ শুকুর হেজবুল্লাহর সেক্রেটারি জেনারেল হাসান নাসরুল্লাহর ‘ডানহাত’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর