টমেটো ডিপ্লোম্যাসিতে তুরস্ক-ইসরায়েলের বয়কটের অবসান

, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2024-09-10 14:38:11

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। সে যুদ্ধ ইতিমধ্যে ১১ মাস পার করেছে। হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

গাজা উপত্যকতায় ফিলিস্তিনদের নিহতের সংখ্যা ৪০ লাখ ছাড়িয়েছে গেছে। লাখ লাখ মানুষ বাস্তুভিটা হারিয়েছেন। হাজার হাজার শিশু দ্বিতীয় বছরের শুরুতেও (৯ সেপ্টেম্বর) স্কুলে আসেনি। তাদের অনেকই প্রাণ হারিয়েছে। অনেক শিশুই বাবা-মায়ের সঙ্গে বাস্তুচ্যুত হয়ে শরণার্থী শিবিরে দিন কাটাচ্ছে। মানবেতর জীবনযাপন করছেন গাজা উপত্যকার সাধারণ মানুষ।

ইসরায়েলের এ নির্মম হামলাকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এন্ড্রোগান ‘নাজি অপরাধ’-এর সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। তারপর তুরস্ক থেকে টমেটো আমদানি বয়কট করে ইসরায়েল। তার বদলে জর্ডন থেকে টমেটো আমদানি করে আসছিল দেশটি।

সম্প্রতি, ফিলিস্তিন এবং দুই দেশের ব্যবসায়ীদের অব্যাহত চেষ্টার পর আগস্ট মাসের শেষে তুরস্ক থেকে ফের টমেটো আমদানি শুরু করেছে ইসরায়েল।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদমাধ্যম আশরাক আল-আওসাত এ খবর জানায়।

খবর থেকে জানা যায়, গাজায় হামাস ও ইসরায়েল যুদ্ধের আগে ইসরায়েল তুরস্ক থেকে প্রতি সপ্তাহে ১ হাজার ২শ টন টমেটো আমদানি করতো। এটি ইসরায়েলিদের মোট চাহিদার ৩০ শতাংশ।

২০২২ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এরপরের বছর ২০২৩ সালে এর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

কিন্তু গাজা যুদ্ধ শুরুর পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলি হামলাকে ‘নাজি অপরাধ’-এর সমান বলে অভিযোগ করার পর ইসরায়েল তুরস্ক থেকে টমেটো আমদানি বয়কট করে। এর পরিবর্তে জর্ডান থেকে প্রতি সপ্তাহে ৫শ টন টমেটো আমদানি শুরু করে ইসরায়েল। এতে করে তুরস্কের সঙ্গে ইসরায়েলের বাণিজ্য নেমে এসে দাঁড়ায় ৫.৩ শতাংশ বিলিয়ন ডলারে।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কটজ তুরস্ক থেকে টমেটো আমদানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। ইসরায়েলের বাণিজ্যমন্ত্রী বেজালের স্মোট্রিচ তুরস্ক থেকে পণ্য আমদানিতে ১শ ভাগ ট্যারিফ আরোপ করেন। ফলে তুরস্ক থেকে টমেটোসহ অন্যান্য সামগ্রী আমদানি বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে, তুরস্ক থেকে টমেটো আমদানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে ইসরায়েলের টমেটোর দাম বেড়ে যায়। এছাড়া অন্যান্য সবজির দামও বেড়ে যায়।

শুধু টমেটো আমদানি নয়, তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা থেকে ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবে রোজ ৪০টি ফ্লাইট চলাচল করতো। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতির পর ফ্লাইট চলাচলও পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। সব মিলিয়ে ইসরায়েলের অর্থনীতির ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। শুধু ইসরায়েলের ব্যবসায়ীরাই নয়, বয়কটের কারণে তুরস্কের ব্যবসায়ীদেরও ব্যবসার ক্ষতি থাকে। এর প্রভাব দুই দেশের ওপরই পড়ে।

এরপর ফিলিস্তিনি এবং দুই দেশের ব্যবসায়ীরা দুই দেশের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালাতে থাকেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ আগস্ট বয়কট বর্জন করে ইসরায়েল ও তুরস্ক থেকে আমদানি-রফতানি শুরু হয়। এই টমেটো আমদানিই দুই দেশের মধ্যে বৈরী সম্পর্ক অবসানে মূল ভূমিকা রেখেছে। ইসরায়েলের সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা এবং ইতিহাসবিদ ডা. মোশে বেন-ডেভিড বলেন, আজ থেকে বয়কটের অবসান ঘটলো।

প্রসঙ্গত, ইসরায়েল ৩০ শতাংশ টমেটো আমদানির পাশাপাশি ৯ শতাংশ নির্মাণ সামগ্রী তুরস্ক থেকে আমদানি করে থাকে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর