দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় শনিবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১ কোটি ৭০ লাখ ভোটারের মধ্যে অর্ধেকেরই বেশি নারী ভোটার বলে জানা গেছে।
অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ২০২২ সালের শুরুর দিকে শ্রীলঙ্কায় তীব্র বিক্ষোভ শুরু হলে ওই বছরের মে মাসে হাজার হাজার মানুষ সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের বাসভবনে ঢুকে পড়েন।
এরপর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন গোতাবায়া। অন্তর্বতী সরকারের প্রধান হিসেবে ক্ষমতায় বসেন রনিল বিক্রমাসিংহে। এর দুই বছর পর শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এ জন্য দ্বীপরাষ্ট্রে মোট ১৩ হাজার ৪শ ২১ পোলিং স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার বর্তমান ভোটার সংখ্যা ২ কোটি ৩১ লাখ ৩১ হাজার ৭শ ৭৪ জন। এর মধ্যে ১ কোটি ৭০ লাখ ভোটার শনিবার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। এর বেশি ৯০ লাখই ভোটারই নারী বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
শনিবার শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে এক কেন্দ্রে ভোট দিতে এসেছেন তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে অধ্যয়নরত ২০ বছর বয়সী নিমেশা নামে এক নারী শিক্ষার্থী। তিনি এবারই প্রথম ভোট দিতে ভোটকেন্দ্রে এসেছেন।
নিমেশা কেন্দ্রে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি কিছুটা আশাহত হয়েছি’!
এর কারণ জানতে চাইলে নিমেশা সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখানে প্রেসিডেন্টরা যেভাবে সমস্যা সমাধানের পথ বাৎলে দিচ্ছেন, তাতে নারী-পুরুষ বিচার করছেন না। যদি এখানে কোনো নারী প্রেসিডেন্ট থাকতেন, তাহলে তারা সমস্যা সমাধানে নারীদের প্রতি আরও বেশি মনোযোগী হতেন। কিন্তু সেটি না হওয়ায় নারীদের ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে’।
নিমেশা বলেন, ‘আমি মনে করি, নির্বাচনে যদি কোনো নারী প্রার্থী থাকতেন, তাহলে আরও ভালো হতো।’
১৯৩১ সালে জাতি হিসেবে ভোটাধিকার অর্জনের পর শ্রীলঙ্কার রাজনীতি মূলত পুরুষ প্রভাবিত হিসেবে আবর্তিত হয়েছে।
এ বিষয়ে ২০২৩ সালে পিউ রিসার্চ সেন্টার পরিচালিত এক গবেষণায় জানা যায়, জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত ১শ ৯৩টি দেশের মধ্যে শুধুমাত্র ১৩ দেশের সরকার প্রধান হিসেবে কোনো দায়িত্ব পালন করছেন। অতীতেও শ্রীলঙ্কার সরকারেও নারী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
এর মধ্যে শ্রীমাভো বন্দরনায়েকে ১৯৬০ সালে প্রথম নারী হিসেবে শ্রীলঙ্কায় ৫ বছর দেশ শাসন করেন। এরপর তার স্বামী আততায়ীর হাতে নিহত হলে তিনি পৃথিবীর মধ্যে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচনে জয়লাভ করেন। শুধু তাই-ই নয়, তিনি দুই, দুইবারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শ্রীলঙ্কায়।
এরপর তার মেয়ে চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা প্রথম এবং একমাত্র নারী হিসেবে ১৯৯৪ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ শাসন করেন।
এই নারীরা সবাই এসেছিলেন রাজনৈতিক পরিবারের উত্তরাধিকার সূত্রে।
শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে যে সব নিজেদের নাম লিখিয়েছিলেন, তাদের বেশির ভাগই এসেছেন তাদের পুরুষ আত্মীয়ের আততায়ীর হত্যার শিকারের উত্তরাধিকারের সূত্রে। বিশেষত ১৯৮৩ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কায় গৃহযুদ্ধ চলাকালের সময়টায়।
এরপর ২০১৬ সালে এক আইন পাস করা হয় যে, প্রতিটি স্থানীয় কাউন্সিলে অন্তত ২৫ শতাংশ নারী প্রার্থী থাকতে হবে। এতে করে সে দেশটির রাজনীতিতে নারীদের উপস্থিতি বেশি দেখা যায়।
এ বিষয়ে নারী অধিকারকর্মী সেপালি কোট্টেগোডা বলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নারী প্রার্থীর ঘাটতির কারণে শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে পুরুষতন্ত্রের কাঠামো অনেকটাই গেঁথে গেছে।
২০১৯ সালে ২০ বছরের মধ্যে একাডেমিক এবং বিজ্ঞানী অজন্থা পিরেরা ২০১৯ সালে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২২ সালের নির্বাচনে গোতাবায়ে রাজাপাক্ষে কাছে তিনি হেরে যান।
এরপর ক্ষমতা হাতে নিয়ে মে মাসে দেশব্যাপী ব্যাপক অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হলে বিক্ষোভের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
সেপালি বলেন, মূলধারার রাজনীতি এত বেশি পুরুষকেন্দ্রিক যে, ক্ষমতার প্রধান হিসেবে তারা দায়িত্ব পালন করছেন। তারা নারীদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না।
সুত্র-আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্যানুসারে।