২০২৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ বলে দাবি করেছেন দেশটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার। ভোট প্রদানের হার ৭০ শতাংশের বেশি।
স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্টিশিয়াল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোটগ্রহণ শেষে দেশটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার আর.এম.এ.এল. রত্মানায়েকে এ মন্তব্য করেন।
দেশের ১শ ৬০টি নির্বাচনি বিভাগে ২২টি নির্বাচনি জেলায় ১৩ হাজার ৪শ ২১টি পোলিংস্টেশনে ৭০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে বলে জানা গেছে।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) শ্রীলঙ্কার সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি মিররের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আর.এম.এ.এল. রত্মানায়েকে বলেন, ‘সদ্য সমাপ্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে’।
রত্মানায়েকে বলেন, ভোটগ্রহণকালে কোনো ধরনের সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি।
শ্রীলঙ্কার বর্তমান জনসংখ্যা ২ কোটি ৩১ লাখ ৩১ হাজার ৭শ ৭৪ জন। এর মধ্যে ১ কোটি ৭০ লাখ ভোটার শনিবার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মোট ভোটারের অর্ধেকের বেশি ভোটার নারী। নারী ভোটারের সংখ্যা মোট ৯০ লাখ। ভোটগ্রহণের জন্য সারাদেশে মোট ১৩ হাজার ৪শ ২১ পোলিং স্টেশন স্থাপন করা হয়।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যেসব প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এগিয়ে রয়েছেন তাদের মধ্যে কয়েকজন হলেন- সাজিথ প্রেমাদাসা, রনিল বিক্রমাসিংহে, অনুড়া কুমারা, নমল রাজাপক্ষে ও নুয়ান বোপেজ অন্যতম।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে ভোটগ্রহণের ৪৮ ঘণ্টা আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়।
এই নির্বাচনে মোট ৩৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণার পর এক প্রার্থী মারা যাওয়ায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন ৩৮ জন প্রার্থী।
১৯৪৮ সালে শ্রীলঙ্কা স্বাধীনতার পর ২০২২ সালে প্রথমবার আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হতে হয় শ্রীলঙ্কাকে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে, দেশটি কার্যত দেউলিয়া হয়ে যায়। সেই আর্থিক সংকটে পড়ে ২০২২ সালে পতন হয় রাজাপক্ষে পরিবারের।
জনবিক্ষোভের জেরে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছাড়েন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে এবং তার ভাই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া। পার্লামেন্ট সদস্যদের ভোটাভুটিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন রনিল বিক্রমাসিংহে।
ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার পার্টির নেতা অনুরার পাশাপাশি ২০২২ সালে রাজাপক্ষেবিরোধী গণবিক্ষোভের অন্যতম নুয়ান বোপেজ পিপলস স্ট্রাগল অ্যালায়েন্স দলের পক্ষে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ছেন। এছাড়া নির্বাচনে লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছেন, প্রাক্তন সেনাপ্রধান তথা প্রাক্তন মন্ত্রী শরথ ফনসেকা এবং বৌদ্ধদের রাজনৈতিক সংগঠন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এনডিএফ)-এর প্রধান তথা প্রাক্তন মন্ত্রী বিজয়দশা রাজাপক্ষে।
শ্রীলঙ্কার সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হতে হলে একজন প্রার্থীকে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ ভোট পেতে হবে। তবে কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট না পেলে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় দফা (রান-অফ) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
অর্থনৈতিক সংকট সামাল দেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করা রনিল বিক্রমাসিংহের জয়ের সম্ভাবনা বেশি বলেই মনে করছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।