অনুরা কুমারা দিশানায়েকে শ্রীলঙ্কার নবমতম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথগ্রহণ করেছেন। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) প্রেসিডেন্টের সচিবালয়ে তিনি শপথ গ্রহণ করেন। তাকে শপথবাক্য পাঠ করান দেশটির প্রধান বিচারপতি জয়ন্ত জয়সুরিয়া।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অনুরা কুমারা দিশানায়েকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে ব্যাপক ভোটে হারিয়ে শ্রীলঙ্কার নবমতম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।
শনিবার ১ কোটি ৭০ লাখ ভোটারের মধ্যে ৭৫ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এর মধ্যে ৯০ লাখ ছিল নারী ভোটার, যা পুরুষ ভোটারদের থেকে অর্ধেকেরও বেশি।
অনুরা কুমারা দিশানায়েকে প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ৪২.৩ শতাংশ ভোট পেয়ে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি মোট ভোট পেয়েছেন, ৫৬ লাখ ৩৪ হাজার ৯শ ১৫ ভোট। তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সাজিথ প্রেমাদাসা থেকে ১২ লাখ ৭১ হাজার ৮শ ৮৮ বেশি ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট পদে বিজয়ী হন।
অপরদিকে, তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সাজিথ প্রেমাদাসা পেয়েছেন প্রদত্ত ভোটের ৩২.৮ শতাংশ ভোট। তার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ৪৩ লাখ ৬৩ হাজার ৩৫ ভোট।
অনুরা কুমারা দিশানায়েকের নিজের দলের নাম- জনতা বিমুক্তি পেরামুনা (জেভিপি) আর তিনি যে জোট থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন সে জোটের নাম ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি)।
২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি মাত্র ৩ শতাংশ ভোট পেয়ে হেরে গিয়েছিলেন। অথচ ২০২৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার বিজয় ছিল একেবারে অপ্রত্যাশিত। একেবার যাকে বলে -ভূমিধস!
২০২২ সালে শ্রীলঙ্কায় ইন্টারন্যাশনাল মনিটরিং ফান্ডের (আইএমএফ) অর্থনৈতিক সংস্কার সুপারিশ মেনে তৎকালীন সরকার দেশ চালাতে গিয়ে দ্রব্যমূল্য ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। এমনকি নিত্যপণ্যসহ ওষুধপত্রের দাম মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়। এরপরই দেশ জুড়ে শুরু হয় গণবিক্ষোভ। এই গণবিক্ষোভের জেরে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে এবং তার ভাই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়াকে। এরপর পার্লামেন্ট সদস্যদের ভোটাভুটিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন রনিল বিক্রমাসিংহে।
দিশানায়েকের প্রথম চ্যালেঞ্জ
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) শ্রীলঙ্কার নবমতম প্রসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর অনুরা কুমারা দিশানায়েকেকে এবার সরকার গঠনের দিকে আগাতে হবে। তার আগে তাকে মন্ত্রিসভা গঠন করতে হবে। সে কারণে তার সামনে মূলত এখন তিনটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কিন্তু তার হাতে রয়েছে মাত্র তিনটি আসন।
প্রথমত, মন্ত্রিসভা গঠন; দ্বিতীয়ত, সরকার গঠন, এবং তৃতীয়ত দেশের ভঙ্গুর ও বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে কীভাবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন। এর ওপরই নির্ভর করছে, দিশানায়েকের আগামীদিনের পথচলা কতটা মসৃণ হবে! সেইসঙ্গে এশিয়ার দুই পরাশক্তি চীন ও ভারতের সঙ্গে তিনি কোন নীতিতে বৈদেশিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলবেন, তার ওপরও নির্ভর করছে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যত।