শ্রীলঙ্কার নির্বাচন: ভোট গণনা গড়ালো দ্বিতীয় ধাপে
কোনো প্রার্থী এককভাবে প্রদত্ত ভোটের অর্ধেকের বেশি ভোট না পাওয়ায় শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গণনা দ্বিতীয় ধাপে গড়ালো।
দেশটির নির্বাচনি আইন অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী যদি প্রদত্ত ভোটের অর্ধেকের বেশি পায়, তাহলে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করে হবে। সে আইন অনুযায়ী শতকরা ৫১ শতাংশ ভোট পেতে হয়।
রোববার দুপুরে শ্রীলঙ্কার প্রধান নির্বাচন কমিশনার আর.এল.এ.এম. রত্মায়েকে ঘোষণা করেন, কোনো প্রার্থী এককভাবে ৫১ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় দ্বিতীয় ধাপে ভোট গণনা করা হবে।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বরাত দিয়ে শ্রীলঙ্কার সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি মিরর এ খবর জানায়।
খবরে বলা হয়, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো প্রার্থী ৫১ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় রোববার দুপুরে দেশটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার আর.এল.এ.এম. রত্মায়েকে এক ঘোষণায় জানিয়েছেন, শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গণনা দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হবে।
রত্মায়েকে বলেন, ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীদের কেউ এককভাবে ৫১ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় এগিয়ে থাকা দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের ভোট গণনা করা হবে।
সে অনুযায়ী, এনপিপি প্রার্থী অনুরা কুমারা দেশনায়েক এবং তার কাছাকাছি প্রতিদ্বন্দ্বী সাজিথ প্রেমাদাসার প্রাপ্ত ভোট দ্বিতীয়বার গণনা করা হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার আর.এল.এ.এম. রত্মায়েকে বলেন, দেশের সব কেন্দ্রকে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে, দ্বিতীয় ধাপে ভোট গণনা করে তার ফলাফল নির্বাচন কমিশনে পাঠানোর জন্য।
ফলাফল ঘোষণা অনুসারে দ্য ডেইলি মিরর জানায়, অনুরা কুমারা দেশনায়েক পেয়েছেন শতকরা ৪১.১ শতাংশ ভোট। ভোট পেয়েছেন, ৪৭ লাখ ৬২ হাজার ৬০ ভোট।
তার কাছাকাছি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সাজিথ প্রেমাদাসা পেয়েছেন, ৩৩.৩ শতাংশ ভোট। তিনি পেয়েছেন, ৩৯ লাখ ৪৪ হাজার ৪৬ ভোট। তৃতীয় স্থান অধিকারী রনিল রনিল বিক্রমাসিংহ পেয়েছেন, শতকরা ১৭.৫ শতাংশ ভোট। ভোট পেয়েছেন, ২১ লাখ ২৩ হাজার ৮৮ ভোট। আর চতুর্থ স্থান অধিকারী নমল রাজাপাক্ষে পেয়েছেন শতকরা ২.৬ শতাংশ ভোট। ভোট পেয়েছেন, ৩০ লাখ ৯ হাজার ১শ ৭৬টি।
উল্লেখ্য- শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা হয়।
দেশের ১শ ৬০ নির্বাচনি বিভাগে ২২টি নির্বাচনি জেলায় ১৩ হাজার ৪শ ২১টি পোলিং স্টেশনে নেওয়া হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার বর্তমান সংখ্যা ২ কোটি ৩১ লাখ ৩১ হাজার ৭শ ৭৪ জন। এর মধ্যে ১ কোটি ৭০ লাখ ভোটার শনিবার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মোট ভোটারের অর্ধেকের বেশি ভোটার নারী। নারী ভোটারের সংখ্যা মোট ৯০ লাখ।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে ভোটগ্রহণের ৪৮ ঘণ্টা আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়।
এই নির্বাচনে মোট প্রার্থী ৩৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণার পর এক প্রার্থী মারা যাওয়ায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন ৩৮ জন প্রার্থী।
১৯৪৮ সালে শ্রীলঙ্কা স্বাধীনতার পর ২০২২ সালে প্রথমবার আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হতে হয় শ্রীলঙ্কাকে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে, দেশটি কার্যত দেউলিয়া হয়ে যায়। সেই আর্থিক সংকটে পড়ে ২০২২ সালে পতন হয় রাজাপক্ষে পরিবারের।
জনবিক্ষোভের জেরে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছাড়েন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে এবং তার ভাই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া। পার্লামেন্ট সদস্যদের ভোটাভুটিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন রনিল বিক্রমাসিংহে।
ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার পার্টির নেতা অনুরার পাশাপাশি ২০২২ সালে রাজাপক্ষে বিরোধী গণবিক্ষোভের অন্যতম নুয়ান বোপেজ পিপলস স্ট্রাগল অ্যালায়েন্স দলের পক্ষে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়েছেন।
এছাড়া নির্বাচনে লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন, প্রাক্তন সেনাপ্রধান তথা প্রাক্তন মন্ত্রী শরথ ফনসেকা এবং বৌদ্ধদের রাজনৈতিক সংগঠন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এনডিএফ)-এর প্রধান তথা প্রাক্তন মন্ত্রী বিজয়দশা রাজাপক্ষে।
শ্রীলঙ্কার সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হতে হলে একজন প্রার্থীকে ৫১ শতাংশ ভোট পেতে হবে। তবে কোনো প্রার্থী ৫১ শতাংশ ভোট না পেলে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় দফা (রান-অফ) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।