সবচেয়ে আলোচিত, বিতর্কমূলক যুক্তরাষ্ট্রের এবারকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। সবার প্রশ্ন এবার কি মার্কিন ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারী প্রেসিডেন্ট পাবে নাকি দ্বিতীয় মেয়াদে জয় পেয়ে ক্ষমতায় বসবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে সবার আগ্রহ হোয়াইট হাউজে যাওয়ার দৌড়ে কে এগিয়ে। রয়টার্স/ইপসোস পরিচালিত সর্বশেষ এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, শেষ মুহূর্তে প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পিছনে ফেলে এগিয়ে আছেন কমলা হ্যারিস, তাও মাত্র এক শতাংশের ব্যবধানে!
আগামী ৫ নভেম্বরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। এতদিন পর্যন্ত অধিকাংশ জনমত জরিপে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ট্রাম্প তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলার চেয়ে পিছিয়ে ছিলেন। কিন্তু ভোটের দেড় সপ্তাহ আগে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত জনমত সমীক্ষায় এগিয়ে যান ট্রাম্প। তবে রয়টার্স/ইপসোস পরিচালিত নতুন জরিপে ফের এগিয়ে গেলেন কমলা।
রয়টার্স/ইপসোস জনমত জরিপের রিপোর্ট অনুযায়ী, আমেরিকার ৪৩ শতাংশ ভোটার প্রেসিডেন্ট পদে পছন্দ সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে। অন্য দিকে, বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলার প্রতি সমর্থন রয়েছে ৪৪ শতাংশ ভোটারের। বাকি ১৩ শতাংশ ভোট লিবারেটরিয়ান পার্টি, গ্রিন পার্টি-সহ বিভিন্ন দল এবং নির্দল প্রার্থীদের পক্ষে গিয়েছে।
গত ২১ থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ১৫০ জন ভোটারকে নিয়ে জনমত জরিপটি চালিয়েছিল রয়টার্স/ইপসোস। সেই জরিপে দেখা যায়, অর্থনীতি, বেকারত্ব এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ভোটারদের পছন্দ সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকেই। অভিবাসন-সমস্যা রুখতেও ট্রাম্পকে বেছে নিয়েছেন ভোটাররা।
অন্য দিকে, দেশে চরমপন্থী রাজনীতির প্রসার রুখতে কমলার ওপর ভরসা রাখতে চান ভোটারদের একটি অংশ।
এর আগে, রয়টার্স/ইপসোসের গত ১৬ থেকে ২১ অক্টোবরের সমীক্ষাতেও এগিয়ে ছিলেন কমলা। সেখানে অবশ্য দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর ফারাক ছিল মাত্র ২ শতাংশ ভোটের।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে ইমারসন কলেজ এবং এবিসি নিউজ, সিবিএস নিউজ প্রকাশিত রিপোর্টেও এগিয়ে ছিলেন কমলা। তবে ভোটের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, ততই কমছে ব্যবধান! শেষবেলায় প্রায় সব সমীক্ষারই রিপোর্ট বলছে, দু’জনের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে।
এদিকে, ২৭ অক্টোবর থেকে আমেরিকায় শুরু হয়ে গিয়েছে আগাম ভোটপর্ব। সেখানে ইতোমধ্যেই দেশটির প্রায় তিন কোটি ২৫ লাখ ভোটার গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছেন। ৫ নভেম্বরের নির্বাচনের আগেই আমেরিকার ৪০টি প্রদেশে শুরু হয়ে গিয়েছে ব্যালট সংগ্রহ করে আগাম ভোটদানের পালা। রোববার প্রথম দিনেই ভোট দিয়েছেন আমেরিকার প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ নাগরিক।
প্রসঙ্গত, আমেরিকার ৫০টি প্রদেশের প্রতিটিতেই নিজস্ব ভোটিং পদ্ধতি রয়েছে। পোস্টের মাধ্যমে ব্যালট সংগ্রহ এবং পোলিং স্টেশনে সশরীরে গিয়ে আগাম নির্বাচনের দিন ভোটদানের ব্যবস্থা রয়েছে বিভিন্ন প্রদেশে। কোনও কোনও প্রদেশে আবার এক সঙ্গে তিনটি পদ্ধতিই প্রচলিত।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বচানের ফলাফল সরাসরি জাতীয় ভোটের মাধ্যমে নির্ধারিত হয় না বরং ইলেক্টোরাল কলেজ তা নির্ধারণ করে। ৫০টি অঙ্গরাজ্যের হিসেবে এই প্রতিযোগিতা হয়, ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ৪৮টি তাদের রাজ্যে বিজয়ীকে সব ইলেক্টোরাল ভোট প্রদান করে। নেব্রাস্কা ও মেইন রাজ্য দু’টি তাদের রাজ্যের ও কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টের ভোট প্রদান করে।
প্রত্যেক রাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোট তাদের মোট জনসংখ্যার ওপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয়। প্রেসিডেন্ট পদে জয় লাভ করতে হলে মোট ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল ভোটের মধ্যে ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোটের প্রয়োজন পড়ে।