যানজটের শহরে পরিণত হয়েছে ইয়াঙ্গুন

এশিয়া, আন্তর্জাতিক

খুররম জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-09-01 02:52:56

মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুন যানজটের শহরে পরিণত হয়েছে। এখানকার বসবাসরত ৭০ লাখ মানুষ কর্মক্ষেত্রে যেতে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ব্যয় করেন।

পাবলিক ট্রান্সপোর্ট না পেয়ে ট্যাক্সি বা রাইড শেয়ারিং-এ বেশি অর্থ খরচ করার কারণে নাগরিকদের জীবনযাপনের ব্যয় বেড়ে গেছে। তাছাড়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থাকায় গাড়িগুলোর জ্বালানি খরচের জন্য বেশি টাকা ঢালতে হচ্ছে। মিয়ানমারের মিডিয়ায় এ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানানো হয়েছে।

শহরটির প্রতিনিধিত্বকারী নগর ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ও সংসদ সদস্যরা বলছেন, এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারকে সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। কারণ আর্থ-সামাজিক খাতে ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। এছাড়া দূষণের কারণ এবং স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব রয়েছে, তা নিয়ে এখনও কোনো গবেষণাই হয়নি। ২০৩০ সালের মধ্যে ইয়াঙ্গুনের জনসংখ্যা এক কোটিতে পরিণত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পশ্চিম ইয়াঙ্গুনের হ্যালিং শহরের প্রতিনিধিত্বকারী এমপি ইউ আং কিউ কিউ ওও বলেন, পরিবহন ব্যয় বাড়ছে, কারণ লোকজন সময়মত কাজ করার জন্য বাসের বদলে পেট্রোল বা ট্যাক্সির জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করছে।

তবে শহরের দীর্ঘস্থায়ী ট্র্যাফিক সঙ্কটের বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট জরিপ চালানো হয়নি, নগর ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ কো অং খাঁত বলেন, সমস্যাটি মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে দু’টি বিষয়ে ফোকাস করা দরকার, তা হলো রাস্তায় সময় বাঁচানো ও খরচ কমানো।


দুঃখের বিষয় এটির দিকে কেউ নজরই দিচ্ছেন না। যানজট পরিস্থিতির উন্নতির জন্য ইয়াঙ্গুন সরকারের একটি নির্দিষ্ট নীতি থাকতে হবে। শহরবাসী কোথা থেকে যাচ্ছেন, তা তাদের জানা দরকার, তবে বর্তমানে এটি দিক নির্দেশনা ও সমন্বয় ছাড়াই চলছে।

তিনি বলেন, ইয়াঙ্গুনের জনসংখ্যার ৮০ শতাংশেরও বেশি বাস ব্যবহারকারী। সরকার রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা হ্রাস করার জন্য কার্যকর নীতি অবলম্বন করেনি। উন্নততর গণপরিবহনের জন্য প্রণোদনা বিকাশের মাধ্যমে রাস্তায় যানজট কমাতে পারে।

শ্বে লিন বান শিল্প অঞ্চলের সেক্রেটারি ইউ নায় লিন জিন বলেছেন, যানজট ইয়াঙ্গুনের একটি বড় সমস্যা। বেশিরভাগ বিদেশি বিনিয়োগকারী এ শহরেই থাকেন। যানজট মিয়ানমারে ব্যবসা করার জন্য একটি 'অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ'। কারণ হ্যালিং থারিয়ার শহরে অবস্থিত শিল্প অঞ্চলটি ইয়াঙ্গুনের পশ্চিমেই অবস্থিত।

ইউ নায় লিন জিন শহরে ব্যক্তিগত যানবাহন প্রবেশ নিষিদ্ধ করা এবং ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের জন্য আইনগুলো কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন।

তিনি ইয়াঙ্গুনের দুর্বল ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা এবং যত্রতত্র পার্কিং করার অভ্যাসকে দায়ী করেন।

যদিও নগর কর্তৃপক্ষ বলছে, ট্র্যাফিক আইন লঙ্ঘনের জন্য তারা পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশে সরকারি নিবন্ধিত ১০ লাখ ব্যক্তিগত যানবাহনের মধ্যে ইয়াঙ্গুনেই নিবন্ধিত রয়েছে ছয় লাখ যানবাহনের। এখানে পর্যাপ্ত রাস্তা ও পার্কিংয়ের সুবিধা না থাকায় এমন সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। খুব কম আইন-প্রয়োগকারী কর্মকর্তা এবং অপ্রতুল পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম এ সমস্যার সঙ্গে পেরে উঠছে না।

তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ইয়াঙ্গুনে বসবাসরত ৭০ লাখ বাসিন্দার জন্য রয়েছে মাত্র চার হাজার বাস।

এদিকে, মিয়ানমার ট্র্যাফিক পুলিশ ফোর্স বলছে যে তারা যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য স্কুলগুলোতে ট্র্যাফিক পুলিশকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছে। যানবাহন চলাচল মসৃণ করতে ইয়াঙ্গুনের প্রধান প্রধান ট্রাফিক সিগন্যালে সরাসরি পুলিশ ট্রাফিক কাজ করছে। তবে ইয়াঙ্গুনের মতো এত বড় শহরে মাত্র এক হাজার ট্রাফিক পুলিশ রয়েছে, যা নগরীতে ট্রাফিক সুচারুভাবে চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে অপ্রতুল।

সড়ক যানজট হ্রাস করতে সরকার বর্তমানে ইয়াঙ্গুন বাস ব্যবস্থার উন্নতি ও প্রসারিত করতে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) সঙ্গে সহযোগিতা করছে।

ইয়াঙ্গুনের মেয়র ইউ মাউং মাংসো যানজট কমাতে ব্যবসায়ীদের তাদের প্রতিষ্ঠান শহরতলির বাইরে নেওয়ার পরামর্শ দেন।

মিয়ানমারের ৪০ শতাংশ অর্থনীতি এককভাবে ইয়াঙ্গুন যোগান দেয়। যানজট সমস্যা হ্রাস করার দিকে মনোনিবেশ না করলে চরম মূল্য দিতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর