ড্রাগন নিয়ে মানুষের কত শত ফ্যান্টাসি। সেই ফ্যান্টাসি আরো জোরদার হয়েছে বহুল জনপ্রিয় ‘গেম অব থ্রোনস’ সিরিজের পর। আলোচিত সেই ড্রামা সিরিজে উড়ন্ত ড্রাগন দেখে তরুণ প্রজন্মের কল্পবিলাসী মনের আফসোস যেন আরো বেড়ে গিয়েছে। ‘লেডি অব ড্রাগনস্টোন’খ্যাত ডেনেরিয়াস টাইগেরিয়ানের মতো উড়ন্ত ড্রাগনের মালিক যদি হওয়া যেত!
কিন্তু ড্রাগন এই পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়েছে শত বছর আগে। ড্রাগনের বসবাস, আকার, অস্তিত্ব নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যেও রয়েছে নানান মতভেদ। কিন্তু ড্রাগন নিয়ে তাদের অনুসন্ধান থেমে নেই।
ড্রাগন নিয়ে নিত্যনতুন তথ্য দিয়ে তারা চমকে দিচ্ছেন প্রায়শ। সম্প্রতি গবেষকরা দাবি করেছে, পৃথিবীতে এক সময় উড়ন্ত ড্রাগন ছিল। যাদেরকে টেরোসর (Pterosaur) বলা হয়।
‘ক্রিয়োড্রাকন বোরস’ নামে এই প্রজাতির সরীসৃপ হল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উড়ন্ত টেরোসরদের মধ্যে অন্যতম, যা এতদিন অনাবিষ্কৃতই ছিল। ‘ক্রিয়োড্রাকন বোরস’ প্রজাতিকে ‘ফ্রোজেন ড্রাগন অব দ্যা নর্থ উইন্ড’ বলেও ডাকছে বিজ্ঞানীরা। উত্তর আমেরিকার আকাশে ৭৭ মিলিয়ন বছর আগে তারা উড়াউড়ি করত। ‘গেম অব থ্রোনস’ সিরিজের ড্রাগনের মতো এদেরও নিঃশ্বাসের সাথে নীল আগুনের গোলা মুখ থেকে বের হত কি না, কিংবা আদৌ সেগুলো ড্রাগন ছিল কি না তার স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া না গেলেও বিজ্ঞানীদের দাবি দৈত্যাকারের উড়ন্ত এই সরীসৃপগুলোর দুই পাখার দূরত্ব ছিল ৩২.৮ ফুট।
উড়ন্ত এই সরীসৃপের জীবাশ্ম ৩০ বছর আগে কানাডার আলর্বাটায় ডাইনোসর প্রভিন্সিয়াল পার্কে পাওয়া যায়। পার্কটি ইউনেস্কো ঘোষিত ‘বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান’ যেখানে নানা প্রজাতির ডাইনোসরের জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়। জীবাশ্ম বিষয়ক গবেষক তথা প্যানিয়ালটোলোজিস্টরা যখন এই জীবাশ্মগুলো আবিষ্কার করে তখন তাদের ধারণা ছিল- হয় এগুলো ক্যাটজোকায়ালাস (Quetzalcoatlus) প্রজাতির টেরোসর, যেগুলো প্রাথমিকভাবে টেক্সাসে পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু না! নতুন গবেষণায় দেখা যায়, ক্রিয়োড্রাকন প্রজাতি এতদিন অনাবিষ্কৃতই ছিল, যা প্রথমবারের মত কানাডায় পাওয়া গেল। জীবাশ্মর মধ্যে পা,গলা,পাঁজর ও পাখার কিছু অংশ পাওয়া যায়।
ক্রিয়োড্রাকন (Cryodrakon) হল টেরোসরের আজহ্ডারকিডস (Azhdarchids) পরিবারের অংশ যাদের গলা অনেক লম্বা হত। লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড হোন বলেন, ‘এটা একটা চমৎকার অবিষ্কার। আমরা জানতাম এ ধরনের প্রাণী ছিল, এখন এটাকে আজহ্ডারকিডস পরিবারের থেকে পার্থক্য করা সম্ভব হল। নতুন একটা নামও দেয়া গেল।’
এর মধ্য দিয়ে উত্তর আমেরিকায় টেরোসরেদের বৈচিত্র্য ও বিবর্তন নিয়ে একটি পরিষ্কার চিত্র পাওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করেন হোন। ভবিষ্যতে বিজ্ঞানীদের পরিকল্পনা হল- জীবাশ্মগুলো থেকে প্রাপ্ত হাড়গুলোতে কী পরিমাণ মাংস থাকত সে তথ্য বের করা। এতে করে ক্রিয়োড্রাকন কীভাবে চলাফেরা করত ও মাটি থেকে আকাশে উড়ত তার একটি ধারণা পাওয়া সম্ভব হবে।