বিশ্বের আলোচিত তিন নেতৃত্ব

, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-25 23:22:07

দেশ পরিচালনায় নিজের আদর্শ, যোগ্যতা ও নেতৃত্বের গুণে বিশ্বের ইতিহাসে আলোচিত তিন নেতা হলেন- নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ। এদের মধ্যে জেসিন্ডা আরডার্ন বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ায়, জাস্টিন ট্রুডো দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করায় এবং আবি আহমেদ শান্তিতে নোবেল পাওয়ায় বর্তমানে খুবই আলোচিত বিশ্ব ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন।

জেসিন্ডা আরডার্ন

পুরো নাম জাসিন্ডা কেট লরেল আরডার্ন। নিউজিল্যান্ডের হ্যামিলটন শহরে ১৯৮০ সালের ২৫ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। জেসিন্ডার বাবা রস আরডার্ন একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন এবং মা ছিলেন স্কুল সহকারী। জেসিন্ডা তার বাবার কর্মস্থল মরিন্সভিল ও মুরুপারায় বেড়ে ওঠেন। তিনি মরিন্সভিল কলেজে পড়াশোনা করেন। সেখানে তিনি স্কুলের বোর্ড অব ট্রাস্টির শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি ২০০১ সালে ওয়াইকাটো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতি ও গণসম্পর্ক বিষয়ে ব্যাচেলর অব কমিউনিকেশন স্টাডিজ (বিসিএস) ডিগ্রি অর্জন করেন।

স্নাতক শেষে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্কের দফতরে গবেষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে যুক্তরাজ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের নীতি-নির্ধারণী উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। ২০০৮ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব সোশ্যালিস্ট ইয়ুথের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি।

২০১৭ সালের ২৬ অক্টোবর থেকে নিউজিল্যান্ডের ৪০তম এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এছাড়াও তিনি ২০১৭ সালের ১ আগস্ট থেকে নিউজিল্যান্ড লেবার পার্টির সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন। ২০১৭ সালে মাউন্ট অ্যালবার্ট ইলেক্টোরেটের সংসদ সদস্য হন তিনি। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে প্রথম হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের জন্য নির্বাচিত হন।

সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডে বন্দুকধারীর গুলিতে ৫০ জন নিরীহ মানুষ নিহতের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যে ভূমিকা জেসিন্ডা আরডার্ন রেখেছেন তা সকলের নজরে আসে। এমন বিতর্কিত বিষয়ে জেসিন্ডার অবস্থান সকল রাষ্ট্রপ্রধানের জন্য অনুকরণীয়। হামলার শিকার শরণার্থী মুসলিমদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন তিনি। তাদের জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিয়েছেন। এমনকি এই হামলাকে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন তিনি।

জাস্টিন ট্রুডো

জাস্টিন ট্রুডো কানাডার লিবারেল পার্টির নেতা হিসেবে ২০১৫ সালে দেশটির ২৩তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। জো ক্লার্কের পর তিনি কানাডার দ্বিতীয় কম বয়সী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার বাবা পিয়েরে ট্রুডোও কানাডার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। স্নাতক শেষে ট্রুডো ভ্যানকুভারের ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় শিক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

কানাডার রাজধানী অটোয়াতে জন্ম নেয়া ট্রুডো কলেজ জিন-দ্যে-ব্রেবুফ এ পড়ালেখা করেন। ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৪ সালে এবং ১৯৯৮ সালে ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়া থেকে স্নাতক করেন। বাবার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতে দেয়া একটি বক্তব্যের মাধ্যমে সবার নজরে আসেন ট্রুডো।

বাবার মৃত্যুর আট বছর পর ট্রুডো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ২০০৮ সালের ফেডারেল নির্বাচনে হাউজ অফ কমন্সে লিবারেল পার্টির যুব ও সংস্কৃতি বিভাগে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের এপ্রিলে ট্রুডো লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব পান। ২০১৫ সালে তার নেতৃত্বে ১৮৪টি আসন পেয়ে কানাডার ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন নিয়ে লিবারেল পার্টি সরকার গঠন করে। ২২ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে দ্বিতীয় মেয়াদে আবারো সরকার গঠন করেছেন তিনি।

গৃহযুদ্ধ কবলিত সিরিয়ার বাস্তুহারা মানুষের প্রতি সহায়তায় হাত বাড়ানো, মন্ত্রিসভার ১৫টি পদে নারী নিয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সচেতনতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে ইতোমধ্যে উদারপন্থী সরকার হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন ট্রুডো।

আবি আহমেদ

ইথিওপিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ সম্প্রতি শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন। এরপর থেকে তিনি বিশ্বব্যাপী আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন। মূলত ইথিওপিয়ায় শান্তি রক্ষা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়ন, সীমান্ত এলাকায় বিরোধ নিষ্পত্তি এবং প্রতিবেশী দেশ ইরিত্রিয়ার সঙ্গে সমঝোতা করায় তাকে এ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

২০১৮ সালের ২ এপ্রিল ১৫তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে থাকা ইথিওপিয়াতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন তিনি। শুরুতেই তিনি জরুরি অবস্থার অবসান, বন্দীদের মুক্তি, বিদেশিদের বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করে দিয়ে আলোচনায় আসেন। দুই দশক ধরে চলমান বৈরী সম্পর্কের অবসান ঘটিয়ে ইরিত্রিয়ার সঙ্গে সংলাপে বসেন তিনি। তারই ফলশ্রুতি শান্তিচুক্তি এবং বিশ বছর ধরে চলমান যুদ্ধের অবসান হয়।

ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার আগে আবি আহমেদ আর্মি ইন্টেলিজেন্সের একজন সাবেক কর্মকর্তা ছিলেন। ২০০৮ সালে তিনি ইথিওপিয়ান পিপল'স রেভ্যুলেশনারি ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ও অরোমু ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১০ সালে তিনি মিলিটারির ডেপুটি পরিচালকের পদ ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। একই বছর ওরোমো ডেমক্রেটিক পার্টি (ওডিপি) থেকে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন আবি আহমেদ।

পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিরসনে 'রিলিজিয়াস ফোরাম ফর পিস' নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৫ সালে ওডিপির জন্য নির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন আবি আহমেদ। ওই বছরই দ্বিতীয় মেয়াদে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি।

২০১৫ সালের শুরু থেকে বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় আবি আহমেদ ইথিওপিয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্বে আসেন। টানা তিন বছরের আন্দোলন এবং বিক্ষোভের মুখে ২০১৮ সালে ইথিওপিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হাইলেমারিয়াম পদত্যাগে বাধ্য হন। ইথিওপিয়ার অলিখিত নিয়ম অনুযায়ী ক্ষমতাসীন জোটের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। দেশটির চার দল ওডিপি, এডিপি, এসইপিডিএম এবং টিপিএলএফ মিলেই ওই জোট।

হাইলেমারিয়ামের পদত্যাগের পর প্রথমবারের মতো ইপিআরপিএফ জোটের নেতা নির্বাচনের জন্য ভোট হয়। ওই সময় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ওডিপি প্রধান লেমা মেগেরসা এবং আবি আহমেদকে এগিয়ে রেখেছিলেন। ২০১৮ সালের ১ মার্চ ইপিআরপিএফ'র নির্বাহী কমিটির সদস্যদের ভোটে আবি আহমেদ জোট প্রধান নির্বাচিত হন এবং পরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর