মিয়ানমারের সংসদে সেনাবাহিনীর আসন না কমানোর হুমকি সেনাপ্রধানের

এশিয়া, আন্তর্জাতিক

খুররম জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-28 01:40:20

মিয়ানমারে ২০২০ সালের শেষে দেশটির সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশটি সংসদে ২৫ শতাংশ আসন সামরিক বাহিনীর জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। আগামী নির্বাচনগুলোতে পর্যায়ক্রমে এ আসন সংখ্যা কমিয়ে আনতে চায় ক্ষমতাসীন সুচির দল।

কিন্তু দেশটির সেনাবাহিনী তথা সেনাপ্রধান এখনই তা মানতে নারাজ।

সম্প্রতি মিয়ানমারের সেনাবাহিনী প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লেইং দেশটির বাইরের এক সংবাদ মাধ্যমকে  বলেছেন, ২০০৮ সালের সংবিধানের অধীনে যে কেউ দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণকে ব্যাহত করার চেষ্টা করলে তাকে প্রতিহত করা হবে।

সামরিক বাহিনী নিয়মতান্ত্রিক ধারায় মিয়ানমারে  স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করছে যাতে গণতন্ত্রায়ন অব্যাহত রাখতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা প্রায়শই পরিবর্তন করতে পারি না। অতীতে এই ধরনের পরিবর্তন করতে গিয়ে অভিজ্ঞতা হয়েছে জাতীয় উন্নয়নের গতি কমে গিয়েছিল।আমরা নিয়মতান্ত্রিক স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছি।

তিনি সতর্ক করে বলেন, যে কেউ এটিকে বিঘ্নিত করার চেষ্টা করে আমরা প্রয়োজনীয় প্রতিক্রিয়া জানাব।

সংবিধানের অধীনে সামরিক বাহিনীকে সংসদে ২৫ শতাংশ আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই সনদে সংশোধন করার জন্য কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ সাংসদ সদস্যের অনুমোদনের দরকার রয়েছে। সেনাবাহিনী প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র বিষয়ক সমস্ত সুরক্ষা সম্পর্কিত মন্ত্রকও নিয়ন্ত্রণ করে। এ দুটি ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে সেনাবাহিনী মিয়ানমারের বেসামরিক তথা বর্তমান সরকারের ধার ধারে না।

মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি

সেনাবাহিনীর জন্য পার্লামেন্টের ২৫ শতাংশ আসনের সাংবিধানিক গ্যারান্টি সরিয়ে নেওয়ার সময় এসেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, "রাজনৈতিক ও সুরক্ষা  স্থিতিশীলতা ছাড়া এ দেশে আরও গুরুতর পরিবর্তন নেওয়া এই সময়ে অনুচিত।"

সংবিধান পরিবর্তন করার নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি রাখার চেষ্টা করে সূচির দল ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) জানুয়ারিতে সংসদে একটি জরুরি প্রস্তাব জমা দিয়েছে।

এটি প্রস্তাবিত ১১৪ টি সংবিধান সংশোধনীর মধ্যে একটি হ'ল সংসদ ও বেসামরিক সরকারে সামরিক ভূমিকা হ্রাস পাবে।

এনএলডি-র প্রস্তাবগুলো সামরিক সাংসদ সদস্যদের সংখ্যা পরবর্তী সংসদে মোট ২০২০ সালে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। তারপর ২০২৫ সালের সংসদে ১০ শতাংশ এবং ২০৩০ সালে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এটি কার্যকরভাবে সংবিধান সংশোধনসহ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর ভেটো দেওয়ার সামরিক ক্ষমতা সরিয়ে ফেলবে।

জেনারেল মিন অং হ্লেইং সতর্ক করে বলেন, এই জাতীয় সংশোধনীগুলো কেবল রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাবে। সামরিক এবং বেসামরিক সরকারের মধ্যে সম্পর্ক ভাল রয়েছে।সেনাবাহিনীর নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার এমন কিছু বিষয় রয়েছে। অন্যদিকে  সরকার বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।  আমরা সরকার কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্তকে সমর্থন করি যাতে তারা সফল হতে পারে, তবে কিছু কিছু করা যায় না।

মিয়ানমারের ২০২০ সালে সাধারণ নির্বাচনের পরে দেশটি রাষ্ট্রপতি হতে চান সেনাবাহিনী প্রধান।

রাষ্ট্রপতি হওয়ার মনস্কামনা থেকে তাকে ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জনসংযোগ করতে দেখা যাচ্ছে। যদিও মিয়ানমারের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নির্মূলে তার ভূমিকা বিশ্বজুড়ে সমালোচিত হয়েছে। দেশটির কমান্ডার-ইন-চিফ তিনিই।  এখন তার বয়স ৬৩ বছর।  ২০১৬ সালের জুলাই মাসে তার অবসর নেওয়ার কথা ছিল। মিয়ানমারে সরকারি কর্মচারীদের অবসরের সময়সীমা ৬০ বছর।

অং সান সু চির ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) সরকার মনে করেছিল যে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর নেবেন। কিন্তু সেনাপ্রধান তার মেয়াদ বাড়িয়েছে নিয়েছেন। সু চির নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন এনএলডি ৫৯ শতাংশ আসন এবং ২৫ শতাংশ সেনা প্রতিনিধিদের হাতে রয়েছে। অন্যান্য দলগুলো ৯ শতাংশের বেশি রয়েছে।

তবে জেনারেল মিন অং হেলইং রাষ্ট্রপতি হওয়ার জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার দরকার নেই।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে গেলে সরাসরি ভোটে নয় নিম্নকক্ষের নির্বাচিত সদস্য, উচ্চকক্ষের নির্বাচিত সদস্য এবং সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধিদের সমর্থন প্রয়োজন পড়ে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর