জাতিসংঘের বিভিন্ন তদন্ত রিপোর্টের বিবরণ তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্রের আইনজীবী তাফাদজ পাসিপান্দো বলেন, রোহিঙ্গাদের অভুক্ত রাখতে চাষাবাদের জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে, খাদ্য সরবরাহ কমানো হয়েছে ও গবাদি পশু কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এগুলোতে গণহত্যার উদ্দেশ্যের স্পষ্ট প্রতিফলন ঘটেছে।
নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার দায়ের করা গণহত্যা মামলার বিচারের শুনানিতে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) এসব কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টায় শুরু হয় শুনানি।
আরাকানে এখনো যে ছয় লাখ রোহিঙ্গা আছেন, তাদের কাঁটাতারের বেষ্টনীর মধ্যে শিবিরে আটক রাখা, চলাচলের স্বাধীনতা খর্ব করা, বিধি-নিষেধ, দুর্ভোগ ও ঝুঁকির কথা আদালতের সামনে তুলে ধরেন পাসিপান্দো।
এর আগে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে) শুনানিতে গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু বলেন, মিয়ানমারে গণহত্যা বন্ধ করুন। আধুনিক যুগে এই গণহত্যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আইসিজেকে গণহত্যা বন্ধের নির্দেশ দিতে আহ্বান জানান তিনি।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া গত ১১ নভেম্বর আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মামলাটি দায়ের করে। মিয়ানমার গণহত্যা, ধর্ষণ এবং রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে নির্মূল করছে বলে অভিযোগ করা হয় ওই মামলায়।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) আদালতে গাম্বিয়া বক্তব্য উপস্থাপন করেছে। বুধবার মিয়ানমার তাদের অবস্থান তুলে ধরবে। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে গাম্বিয়া এবং বিকেলে মিয়ানমার প্রতিপক্ষের যুক্তি খণ্ডন ও চূড়ান্ত বক্তব্য পেশ করবে।
রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার শুনানিতে উপস্থিত থাকতে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি টিম ছাড়াও মানবাধিকার কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত রয়েছেন। শুনানিতে বাংলাদেশ কোনো পক্ষে না থাকলেও গাম্বিয়াকে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করছে। মামলার শুনানি উপলক্ষে হেগ শহরে গাম্বিয়া ও মিয়ানমার ছাড়াও অন্য কয়েকটি দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা হাজির হয়েছেন। মামলায় গাম্বিয়াকে সমর্থন দিতে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) কূটনীতিকেরাও উপস্থিত হয়েছেন। এছাড়াও বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা রোহিঙ্গা অধিকারকর্মী এবং মিয়ানমার সরকারের সমর্থকেরাও উপস্থিত রয়েছেন।
আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের বর্তমান প্রেসিডেন্ট হলেন সোমালিয়ার বিচারপতি আবদুলকোয়াই আহমেদ ইউসুফ এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট চীনের বিচারপতি ঝু হানকিন। বিচারকদের নির্বাচন করেন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদ।
অন্য সদস্যরা হলেন—স্লোভাকিয়ার বিচারপতি পিটার টমকা, ফ্রান্সের বিচারপতি রনি আব্রাহাম, মরক্কোর মোহাম্মদ বেনুনা, ব্রাজিলের আন্তোনিও আগুস্তো কানকাদো ত্রিনাদে, যুক্তরাষ্ট্রের জোয়ান ই ডনোহু, ইতালির গর্জিও গাজা, উগান্ডার জুলিয়া সেবুটিন্দে, ভারতের দলভির ভান্ডারি, জ্যামাইকার প্যাট্রিক লিপটন রবিনসন, অস্ট্রেলিয়ার রিচার্ড ক্রর্ফোড, রাশিয়ার কিরিল গিভরগিয়ান, লেবাননের নওয়াফ সালাম এবং জাপানের ইউজি ইওয়াসাওয়া।