তিন দিন থেকে এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন অবস্থানে হামলার নকশা করেছিলো ইরান। ইরাকে কাশেম সোলেইমানির হত্যার জবাবে দেশটির দুটি এলাকায় মার্কিন সেনাঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর আরও হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুত ছিলো ইরান। ক্ষেপনাস্ত্র হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো সামরিক জবাব এলেই সুপরিকল্পিতভাবে পরবর্তীতে হামলা চালিয়ে যেতো দেশটি।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডসের বিমান বাহিনীর প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাজিজাদেহ। তিনি বলেন, ইরান শত শত, এমনকি হাজার হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার জন্য প্রস্তুত ছিলো। সেখানে মাত্র ২০টিরও কম ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়েছে।
ইরানি এ জেনারেল আরও জানান, তাদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার উদ্দেশ্য কোন মার্কিন সেনাকে হত্যার ছিলো না। তবে, যুক্তরাষ্ট্র এর (সামরিক) জবাব দিলে, হামলার নকশা এমনভাবে করা হয়েছিলো যাতে প্রথম ধাঁপে ৫০০, এমনকি হাজারেরও বেশি জন নিহত হতো।
হামলা চালানোর পরপরই ইরান দাবি করে, ৮০ জন মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, তাদের একজন সেনাও প্রাণ হারাননি ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায়।
জেনারেল হাজিজাদেহের বরাত দিয়ে ইরানের সংবাদ সংস্থা ফার্স জানায়, ‘আমরা ভেবেছিলাম, তিন দিন থেকে এক সপ্তাহ ধরে চলবে সংঘর্ষ। এ জন্য আমরা কয়েক হাজার ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত রেখেছিলাম।’
সংবাদ সম্মেলনের সময় জেনারেল হাজিজাদেহের পেছনে আঞ্চলিক বিভিন্ন মিলিশিয়া গোষ্ঠীর পতাকা সাজিয়ে রাখা হয়। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এর মাধ্যমে ইরান বোঝাতে চেয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী এসব সশস্ত্র সংগঠন তাদের সঙ্গে রয়েছে।
ইরাকের সরকারের জোটের একটি দলের পেছনে প্রভাব রাখা পপুলার মোবালাইজেশন ফোর্সেস, লেবাননের হেজবুল্লাহ, ফিলিস্তিনের হামাস ও ইয়েমেনে সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া হাউথি মুভমেন্টের পতাকা শোভা পায় ডায়াসের পেছনে। ৩ জানুয়ারি মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা কাশেম সোলেইমানির সঙ্গে নিহত হন পপুলার মোবালাইজেশন ফোর্সেসের প্রধানও। এদিকে ইয়েমেনের হাউথিদের সহায়তা দেয়ার বিষয়টি সবসময় অস্বীকারে করে এসেছে ইরান।
তবে, সম্প্রচার মাধ্যম সিবিএসকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে আর হামলা না চালাতে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিলিশিয়া সংগঠনকে নির্দেশ দিয়েছে।
একই দিন মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল ফক্স নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশে তারা ইরানের ওপর নজর রাখছেন এবং সর্তক রয়েছেন।
এর আগে বুধবার ডোনাল্ড ট্রাম্প জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে, ইরানকে উত্তেজনা না বাড়ানোর আহ্বান জানান। একই সঙ্গে মার্কিন সেনাঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করার জবাবে ‘কঠোর নিষেধাজ্ঞা’ আরোপের ঘোষণা দেন।