দিল্লির নিজামউদ্দিন আউলিয়া

ভারত, আন্তর্জাতিক

ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 23:33:26

পুরনো দিল্লির একটি আস্ত জনপদের নাম বস্তি নিজামউদ্দিন। সেখানে শায়িত আছেন দিল্লির নিজামউদ্দিন আউলিয়া (রহ.)। পাশেই তাবলিগ জামাতের উপমহাদেশের প্রধান কেন্দ্র। খানিক দূরে আরেক নিঃসঙ্গ কবরগাহে চিরনিদ্রায় মগ্ন আছেন দক্ষিণ এশিয়ার উর্দু-ফারসি কবিতা ও গজলের অবিস্মরণীয় প্রতিভা মির্জা আসাদুল্লাহ বেগ গালিব।

প্রধান সড়ক ছেড়ে প্রাচীন দিল্লির গলি, তস্য-গলি পেরিয়ে পৌঁছাই দরগাহের সামনে। পুরনো ঢাকার ছোট কাটরা, চক বাজার, নবাব কাটরার মতো প্রাসাদ, দহলিজ, চত্ত্বর, খিলান পেরিয়ে এক খোলা কম্পাউন্ডে মাজার ও দরগাহ শরিফ। দরগাহের চারপাশে সুলতানি, মুঘল আমলের নানা স্থাপত্যের উপস্থিতি।

দিল্লির নিজামউদ্দিন আউলিয়া উত্তর প্রদেশের বাদায়ুনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সুলতান-উল-মাশায়েখ, মাহবুব-এ-ইলাহি নামে সুখ্যাত। তার পুরো নাম শেখ খাজা সৈয়দ মুহাম্মদ নিজামউদ্দিন আউলিয়া। তিনি উপমহাদেশে চিশতিয়া তরিকার একজন বিশিষ্ট সুফি সাধক। তার আধ্যাত্মিক সম্পর্কের মূল ফরিদউদ্দিন গঞ্জেশকার, কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকি হয়ে খাজা মইনউদ্দিন চিশতি (রহ.)- এর সাথে মিলিত হয়েছে।

চিশতিয়া ধারার পূর্বসুরিদের মতো তিনিও আধ্যাত্মিক ধারাবাহিকতা বা সিলসিলাকে পরিপুষ্ট করেছেন, যা উপমহাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়। প্রেম, মানবপ্রেম, জনকল্যাণের প্রণোদনা রয়েছে এই সিলসিলায়। স্রষ্টার প্রেম আর মানবপ্রেমের মিলিত রূপ দিয়ে ইসলামের মরমি ও মানবিক রূপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সুফিদের তৎপরতায়।

পাচঁ বছর বয়সে তার পিতা আহমদ বাদায়ুনি, মৃত্যুর পর তিনি তার মায়ের (বিবি জুলেখা) সাথে দিল্লিতে চলে আসেন। ষোড়শ শতাব্দিতে মুঘল সম্রাট আকবরের উজির আবুল ফজল মোবারক রচিত আইন-ই-আকবর এ নিজামউদ্দিনের জীবনী উল্লিখিত হয়েছে।

বিশ বছর বয়সে, নিজামউদ্দিন বর্তমান পাকিস্তানের আজোধানে (বর্তমানে পাকপাত্তান)-এ যান এবং সুফি সাধক ফরিদ উদ্দিন গঞ্জেশকারের (বাবা ফরিদ নামে অধিক খ্যাত) শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। বাবা ফরিদ বর্তমান থাকা অবস্থায় তিনি প্রতি বছর রমজান মাস অতিবাহিত করতে আজোধানে যেতেন। আজোধানে তৃতীয় বার যখন গিয়েছিলেন, বাবা ফরিদ তাকে নিজের খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করেন। এর কিছু দিন পর, যখন নিজামউদ্দিন দিল্লিতে ফিরে আসেন, তিনি বাবা ফরিদের পরলোক গমনের খবর শুনেন।

স্থায়ীভাবে বসবাস করার আগে, নিজামউদ্দিন দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করতেন। পরে বর্তমান স্থানে খানকা, আধ্যাত্মিক, শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে তার নিজস্ব আবসস্থল ছিল। খুব অল্পদিনের মধ্যেই খানকাটি গরিব-ধনীসহ সকল প্রকারের মানুষের ভিড়ে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। তার অনেক শিষ্য আধ্যাত্মিকতার উচ্চ আসন অর্জন করেন। তাদের মধ্যে শেখ নাসিরউদ্দিন মুহাম্মদ চিরাগ-ই-দিল্লি এবং  দিল্লি সালতানাতের রাজ্যসভার কবি আমির খসরু অন্যতম।

দিল্লির নিজামউদ্দিন আউলিয়ার বর্তমান স্থাপনাটি ১৫৬২ সালে নির্মিত হয়। তারপর থেকে শত শত বছর পেরিয়ে গেলেও তা ইসলামের মর্মবাণী প্রচার ও মানবিকতার শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবীতে জ্বালাচ্ছে প্রেম ও পরহিতের আলোক শিখা।  স্রষ্টার সকল সৃষ্টির মধ্যে উজ্জ্বল করছে মৈত্রী ও মিলনের আবহ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর