বিশ্ব বাণিজ্যে রাজত্ব হারিয়ে টিকে থাকার লড়াইয়ে চীন

এশিয়া, আন্তর্জাতিক

ফাতিমা তুজ জোহরা, নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-25 06:40:29

বিশ্ব বাণিজ্যে তিন দশক ধরে শাসন করছে চীন। বিগত ৩০ বছরে বিশ্ব বাজারে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল সবচেয়ে বেশি। সম্প্রতি ভয়ায়হ করোনাভাইরাস ভাঙতে যাচ্ছে চীনের এত দিনের রেকর্ড। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় নির্মাণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত চীনের বিশ্ব বাণিজ্যে পর্দা নামতে যাচ্ছে।

পুঁজিবাজার

করোনার প্রাদুর্ভাবে সবচেয়ে বড় ধস নেমেছে চীনের পুঁজিবাজারে। চলতি বছর জানুয়ারি মাসেই ৩৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি শেয়ার মূল্য কমেছে। সামগ্রিকভাবে বাজারের দরপতন হয়েছে ৮ শতাংশ। 

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে এ যাবত কালের সবচেয়ে বৃহৎ ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে চীনের অর্থনীতি। চীনের মোট জিডিপির প্রায় ৬৯ শতাংশ আসে গুয়াংডং, শেনজেন, সাংহাই ও জিয়াংসু প্রদেশ থেকে। গত ২৩ জানুয়ারি লুনার নিউ ইয়ার উদযাপন স্থগিত করা হয়। লুনার নিউ ইয়ার চীনের পর্যটন খাতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৌসুম। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে ২৪ জানুয়ারি থেকে চীনে ছুটি শুরু হয়েছিল। উহানে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকলে চীন সরকার ১৪টি প্রদেশে ছুটি এক সপ্তাহ বৃদ্ধি করে।  

অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থা

লুনার নিউ ইয়ার উদযাপনকে কেন্দ্র করে হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও কনসার্ট উদযাপন স্থগিত করা হয়। চীনে ৬ কোটি মানুষের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এতে চীন প্রায় ৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি ক্ষতির মুখে পড়ে।

বর্তমানে চীনের জিডিপি ১৩.৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি। এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে চীনের উৎপাদন ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করেছে। এর ফলে বন্ধ হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজার ব্যবস্থা।

সবচেয়ে ভীতিকর বিষয় হলো চীনের অর্থনীতিতে এ ধস কেবল সাময়িক সময়ের জন্য নয়। বিশ্ববাজারে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কবলে পড়তে যাচ্ছে চীন।

চীনের বেইজ বুকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেহজাদ এইচ কাজী শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, করোনাভাইরাসে চীনের অর্থনৈতিক মন্দা এমন সংকটে পৌঁছাতে যাচ্ছে যা ধারণার বাইরে। চীনা অটো ম্যানুফ্যাকচারিং  ও  কেমিক্যাল প্লান্টগুলো একেবারে বন্ধের মুখে পড়তে যাচ্ছে। আইটি কোম্পানির কর্মীরা এখনও কর্মস্থলে ফিরে আসেনি। শিপিং ও লজিস্টিক সংস্থাগুলো বন্ধ হতে চলেছে। আর এর ফলে আসছে কয়েক মাসে বিশ্বব্যাপী অটো যন্ত্রাংশ, ইলেকট্রনিক্স এবং ওষুধ সরবরাহ এক বিশাল সংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছে। 

এখনও পর্যন্ত ৬৯ দেশে ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। চীনের পরই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব লক্ষ করা গেছে ইতালিতে। এখনও পর্যন্ত ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৩৫ জনে। তারপরও চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের থেকে এগিয়ে ছিল ইতালির বাজার। 

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চ্যালেঞ্জ

চলতি বছর জানুয়ারিতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী আগামী ২ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য ও সেবা নিতে হবে। চীন যদি চুক্তি না মানে তাহলে যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে কর আরোপ করতে পারবে। বর্তমান পরিস্থিতি যা বলছে ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার মুখে চীন। এতে আসছে দুই বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই পরিমাণ পণ্য ক্রয় করা সম্ভব নয়। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো চীন থেকে পণ্য কিনে তারাও এসব পণ্য পাচ্ছে না। এসব কোম্পানিগুলো শুধু পণ্য আমদানি নয় রফতানিও করে থাকে। এখন দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য ব্যবস্থা উভয় সংকটে পড়তে বসেছে। চীনের অর্থনীতির মন্দার  প্রভাব পড়তে শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট সব দেশগুলোতে।

করোনাভাইরাস এখন চীনের দুয়ারে শেষকৃত্যর সঙ্গীতের ন্যায়। চীনের সামনে এখন দ্বিমুখী সংকট। বিশ্ব অর্থনীতির স্রোতে চীনের নিজের জন্য টিকে থাকা দায়, সেখানে আসছে নির্বাচনে ট্রাম্পের জয় চীনের জন্য অশনি সংকেত। তখন প্রশ্ন আসে  চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তি ব্যর্থ হলে কী হতে পারে সামনের দিনগুলোতে।  

চীনকে বাদ দিয়ে এখনই অন্য কোনো দেশকে বেছে নেওয়াটা শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র নয়, যেকোনো দেশের জন্য মোটেও সহজ নয়। কারণ চীনের মতো লজিস্টিক সেট আপ আপাতত অন্য কোনো দেশে নেই।

এমন অবস্থায় সামনে আসে গত বছর স্বাক্ষরিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, তবে কি এখন বিশ্ব বাণিজ্য দ্বার খুলতে যাচ্ছে মেক্সিকোর জন্য?    

বর্তমানে বিশ্ব রাজনীতিতে চীনের প্রভাব বিস্তর। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো চীনা পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। এমন সংকটকালীন অবস্থায় করোনাভাইরাস রোধ করা না গেলে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে বিশ্ব বাণিজ্য।

এ সম্পর্কিত আরও খবর