বিশ্বজুড়ে আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। প্রতিদিনই বাড়ছে প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল চীনে এর প্রাদুর্ভাব কমে গেলেও দ্রুত গতিতে বাড়ছে অন্যান্য দেশগুলোতে। ১৭৫টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাসটি।
শুক্রবার (২০ মার্চ) আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত প্রাণহানির সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৪৪ হাজার ৭৪। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮৬ হাজার ৭৫২ জন। যেখানে গত দুইদিন আগেও মৃত্যুর হার ছিলো ৪ দশমিক ২ শতাংশ, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ০৭ এ। অন্যদিকে দুই আগেই সুস্থ হওয়ার হার ছিলো ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ, তবে এখন তা নেমে এসেছে ৩৫ দশমিক ৫৪ তে।
গত ডিসেম্বরের ৩১ তারিখে ভাইরাসটি সর্বপ্রথম শনাক্ত হয় চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে। বর্তমানে দেশটিতে ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা একদমই নিচে। গত ২৪ ঘণ্টায় চীনে ভাইরাসে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা শূন্য। দেশটিতে করোনায় প্রাণহানি হয়েছে মোট ৩ হাজার ২৪৮ জনের। আক্রান্ত হয়েছেন ৮২ হাজার ৭ জন মানুষ।
চীনে করোনার ভয়াবহতার রেকর্ড ভেঙেছে ইউরোপের দেশ ইতালি। দেশটির নাগরিক সুরক্ষা সংস্থার বরাত দিয়ে জানায় ইতালিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৩৫ জনে। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৩ হাজার ৪০৫। যা চীনের চেয়েও বেশি।
বর্তমানে দেশটি লক ডাউন অবস্থায় আছে। সকল শিক্ষা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, যান চলাচলসহ সব কিছু বন্ধ রাখা হয়েছে। খোলা রয়েছে খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও ফার্মেসি। এছাড়াও লক ডাউন অমান্য করে করে বের হলে জরিমানা করা হচ্ছে। এর আগেই করোনার প্রভাব ঠেকাতে সরকার জনসমাগম নিষিদ্ধ করেছে। এছাড়াও ফুটবল ম্যাচসহ সব ধরনের স্পোর্টস ইভেন্ট স্থগিত করা হয়েছে।
ইরানে প্রতি ১০ মিনিটে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত একজন রোগী মারা যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার দেশটিতে ইতোমধ্যে ১ হাজার ২৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কিয়ানুশ জাহানপুর টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, দেশটিতে প্রতি ঘণ্টায় ৫০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী আলিরেজা রাইসি বলেছেন, ইরানে করোনাভাইরাসে সংক্রামিত রোগীর সংখ্যা ১৮ হাজার ৪০৭ জনে পৌঁছেছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। আর আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ হাজার ৮৮০ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১০৮। এছাড়া দেশটির ৫০টি অঙ্গরাজ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাসটি। লক ডাউন অবস্থায় রয়েছে দেশটি।
স্পেনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ১৮ হাজার ৭৭ জন। মারা গেছেন ৭৬৭ জন। দেশটিতে মানব সুরক্ষায় জরুরি অবস্থার জারি করা হয়েছে। এছাড়া দেশটির নাগরিকদের বিদেশ ভ্রমণে না যেতে পরামর্শ দিয়েছে সরকার।
ভালো পরিস্থিতিতে নে ইউরোপের আরে দেশ ফ্রান্স। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ফ্রান্সে এখন পর্যন্ত ৩৭২ জন মারা গেছে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ৯৯৫।
ভারতে নতুন করে ১৮ জন কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে শনাক্ত করা গেছে। যার ফলে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৬৯ এ দাঁড়িয়েছে। আর মৃতের সংখ্যা ৪ এ পৌঁছেছে। বাংলাদেশ মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ জন। এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১ জনের।
এদিকে, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে বিশ্বনেতাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) এক ভিডিও কনফারেন্সে এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বনেতাদের একসঙ্গে সমন্বয় করে পরিস্থিতি মোকাবিলার আহ্বান করছি।
মহামারি এই ভাইরাসে সবচেয়ে বড় লোকসানের মুখে পড়ছে এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলো। সারাবিশ্বে ভ্রমণে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আসায় এয়ারলাইন্সগুলো বাধ্য হচ্ছে তাদের সেবা বাতিল করতে।
এ বিষয়ে ইজিজেট এবং লুফথানসা’র প্রধানরা জানিয়েছেন, যদি এভাবে মহামারি চলতে থাকে তাহলে এয়ারলাইন্সগুলো সরকারি সাহায্য ছাড়া টিকে থাকতে পারবে না।