সভ্যতার উত্থানের শুরুতে মানুষ সংঘবদ্ধ হয়ে বসবাস করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। ক্রমবর্ধমান সভ্যতার বিকাশ সেই মানুষকেই নতুন করে শেখাচ্ছে সঙ্গরোধে থাকতে। শুধুমাত্র বাঁচার তাগিদে সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
করোনাভাইরাসের বিস্তার লাভ করা চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা ৭২ হাজার ৩১৪ জন ব্যক্তির ওপর একটি গবেষণা শেষে এমনটাই দাবি করেছেন।
যখন গোটা বিশ্ব করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য উন্মাদ প্রায় তখন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের বিজ্ঞানীদের করা এ গবেষণা প্রশংসার দাবিদার। অর্থাৎ সংস্পর্শ এড়িয়ে চললেই করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচা যাবে। আর সেটিকেও সম্ভব করে দেখিয়েছে উহান। উহানে মৃত্যু ও আক্রান্ত এখন শূন্যের কোটায়।
প্রশ্ন আসে সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা যায় কীভাবে। এর জন্য দুটি উপায় দেখিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রথমত সামাজিক দূরত্ব তৈরি করা, দ্বিতীয়ত স্ব-বিচ্ছিন্নতা।
সামাজিক দূরত্ব হলো— মানুষের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় যোগাযোগ এড়িয়ে চলা, জনবহুল স্থানে না যাওয়া (পার্টি, গ্যাদারিং), ভ্রমণ এড়িয়ে চলা। বাইরে গেলেও নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলা। মোট কথা মানুষের সমাগম বেশি হয় এমন স্থান ত্যাগ করা। আর স্ব-বিচ্ছিন্নতা বা আইসোলেশন হলো— নিজেকে সামাজিক কাজকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা। নিজ ঘরে থাকা। বাড়ি থেকে অফিস করা। সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। একান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়া। এমনকি আইসোলেশন থাকাকালীন খাবার কেনার জন্যও বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে।
যখন কোনো এলাকায় ছোঁয়াচে রোগ মহামারি আকার ধারণ করবে, তখন নিজে থেকেই স্ব-বিচ্ছিন্নতার কথা বলা হচ্ছে। কমপক্ষে ৭-১৪ দিন এ নিয়ম মেনে চলতে পারলেই মহামারি থেকে বাঁচানো যাবে মানুষকে। এভাবে সচেতন হতে পারলেই প্রতিষেধক ছাড়াই করোনাভাইরাস নিরাময় সম্ভব।
একইসঙ্গে চীনের গবেষণা বলছে, পুরুষ ও নারী— দুজনের মধ্যেই ভাইরাস সংক্রমণের হার একই রকম। তবে মৃত্যুর ঝুঁকিতে একটু বেশি আছেন পুরুষ। সংক্রমিত ১০০ শতাংশের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষের মধ্যে খুব হালকা লক্ষণ ছিল। বাকি ১৪ শতাংশ গুরুতর ও মাত্র ৫ শতাংশ রোগীর অবস্থা সংকটজনক। আর শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৫০ শতাংশেরও নিচে।
গবেষণা অনুযায়ী মাত্র ৪ শতাংশ মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। ৯ শতাংশ মানুষ গুরুতর অসুস্থ হন। আর বাকি ৮৭ শতাংশ মানুষ সুস্থ হয়ে উঠছেন। যাদের বয়স ৭০-৮০ তাদের উচ্চ মৃত্যুহার আছে বলে জানায় এ গবেষণা। ৫০-৬৯ বছর বয়সী মানুষের সংক্রমণের ঝুঁকি মাত্র সাড়ে তিন শতাংশ।
মহামারি আকার ধারণ করা চীন এখন সারাবিশ্বে আলোর পথ দেখাচ্ছে। বলছে, এ মহামারি থেকে কীভাবে নিজে বাঁচা যায় ও অন্যকে সচেতন করা যায়। তাই প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে প্রতিষেধক আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত নিজেদেরকেই বেছে নিতে হবে সঠিক পথ।