২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে প্রথম নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব ঘটে। ছোঁয়াচে রোগটি অনেকটা নিউমোনিয়ার মতো। করোনাভাইরাস বিজ্ঞানীদের কাছে নতুন নয়। ভাইরাসটি সম্পর্কে তারা অবগত। কিন্তু করোনার নতুন এই চেহারাটি গবেষকদের কাছে অজানা ছিল। সার্স ভাইরাসের গোত্রের নতুন এই ভাইরাসটি হলে তীব্রভাবে শ্বাসকষ্ট হয়।
বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ভাইরাসটিকে মহামারি বলে ঘোষণা দিয়েছে।
ডব্লুএইচও এর তথ্য মতে, বর্তমানে কোভিড-১৯ ভাইরাসের ফলে বেশিরভাগ লোকের মাঝে কেবলমাত্র হালকা ঠান্ডা ও সর্দি দেখা যাচ্ছে। এছাড়া কোনো প্রকার ট্রিটমেন্ট ছাড়াই ৮০ শতাংশ আক্রান্ত ভালো হয়ে যাচ্ছে। আক্রান্ত ছয়জনের মধ্যে কেবলমাত্র একজন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছে ও শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
নিউমোনিয়ার বৈশিষ্ট্যযুক্ত কোভিড-১৯ ভাইরাসটি আক্রান্ত করার পর আমাদের শরীরে কি কি করে? আমাদের ফুসফুসে কি করে? এমনসব প্রশ্ন নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম গার্ডিয়ান মুখোমুখি হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার রয়েল অস্ট্রেলাসিয়ান কলেজ অফ ফিজিশিয়ান্সের প্রধান ও শ্বাস-প্রশ্বাসের চিকিৎসক জন উইলসন'র কাছে। এসব প্রশ্নের উত্তরে তিনি যা যা বলেন তা বার্তার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।
কীভাবে ভাইরাসটি আক্রমণ করে?
উত্তরে জন বলেন, কোভিড-১৯ ভাইরাসটির প্রায় সমস্ত পরিণতি নিউমোনিয়ার মত। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত লোককে চারভাগে ভাগ করা যেতে পারে। এর মধ্যে সর্বশেষটি হল, যারা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত কিন্তু কোনো উপসর্গ নেই।
এরপর যারা আছেন তাদের শ্বাসনালীতে সংক্রমণ ঘটে। যার মানে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের জ্বর, কাশি ও হালকা মাথাব্যথা রয়েছে।
এরপরের অবস্থানে রয়েছেন যারা কোভিড-১৯ এ পরীক্ষায় পজিটিভ হয়েছেন ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আর চতুর্থ গ্রুপটি হল, নিউমোনিয়ার বৈশিষ্ট্যগুলো গুরুতর আকার ধারণ করে। যার ফলে শ্বাসনালীর আস্তরণের স্নায়ুগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জন বলেন, উহানে এটি প্রমাণিত হয়েছে যে যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে মাত্র ৬ শতাংশ গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। ডব্লুএইচও'র মতে, বয়স্ক লোক, যারা বিভিন্ন রোগে ভুগছেন, কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলে তারা গুরুতর অসুস্থ হতে পারেন।
কীভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা করে?
এই প্রশ্নের জবাবে জন বলেন, যারা কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হন, তাদের জ্বর ও কাশি থাকে। আর এটি সংক্রমণের ফলে ভাইরাসটি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে পৌঁছায়। আর ফুসফুসের বায়ু পরিচালনের নালীতে ভাইরাসটি সংক্রমিত হয়। এ জন্য বায়ু সঠিকভাবে ফুসফুসে পৌঁছাতে পারে না।
ভাইরাসটি ফুসফুসের আস্তরণে আঘাত করে। এতে নালী ও ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর হালকা ধুলোয় কাশি বেড়ে যায়।
আর যদি ভাইরাসটি শ্বাসনালীর আস্তরণটি পেরিয়ে যায় তাহলে এটি আরও ভয়ানক হয়ে ওঠে। এটি ফুসফুসের গ্যাস এক্সচেঞ্জ ইউনিটে পৌঁছে যায় ও অবস্থা খারাপের দিকে চলে যায়। ফুসফুসের গ্যাস এক্সচেঞ্জ ইউনিটে গেলে এটি তার নিচে থাকা বায়ুথলীতেও প্রদাহ ঘটায়।
আর এতে বায়ুথলীগুলো স্ফীত হয়ে যায় ও ফুসফুসের প্রদাহজনক পদার্থ প্রবাহিত হয়। যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয়।
জন আরও বলেন, ফুসফুস বিভিন্ন প্রদাহজনক উপাদানে পূর্ণ হয়ে যাওয়ার ফলে রক্তে অক্সিজেন পেতে অক্ষম হয়ে পড়ে। এছাড়া অক্সিজেন পাওয়ার জন্য শরীরের ক্ষমতা হ্রাস পায় ও শরীর থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড বের করতে পারে না। আর এতে মানুষ মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়।
কীভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসের চিকিৎসা করতে হবে?
কীভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসের চিকিৎসা করতে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে অস্ট্রেলিয়ার রয়েল অস্ট্রেলাসিয়ান কলেজ অফ ফিজিশিয়ান্সের অধ্যপক ক্রিস্টিয়ান জেনকিন্স বলেন, দুর্ভাগ্যক্রমে কোভিড-১৯ এর ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস যেভাবে বাধাগ্রস্ত হয়, তার কোনো ওষুধ আমাদের কাছে নেই। চিকিৎসকরা সব ধরনের ওষুধ পরীক্ষা করছেন, কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। আমরা আশা করছি কয়েকটি ওষুধের সংমিশ্রণে এটির প্রতিষেধক পাওয়া যেতে পারে।
আমরা রোগীদের ফুসফুসে বায়ুচালিত করতে থাকি যতক্ষণ পর্যন্ত না ফুসফুস স্বাভাবিকভাবে কাজ করে।
এ বিষয়ে জন বলেন, নিউমোনিয়ার মত অসুখে আক্রান্তদের গৌণ সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে তাই আমরা তাদের অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ এবং অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েও চিকিৎসা করি। অনেক সময় এ চিকিৎসা পদ্ধতি কোনো কাজে দেয় না। এমনকি রোগী মারা যান।
কোভিড-১৯ কি আলাদা?
এ প্রশ্নের জবাবে জেনকিন্স বলেন, কোভিড-১৯ আক্রান্তদের ধরণ হাসপাতালে ভর্তি সাধারণ রোগীদের থেকে আলাদা। নিউমোনিয়ার বেশিরভাগ প্রকার যা আমরা জানি এবং আমরা মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করি, তা ব্যাকটেরিয়া জনিত। কিন্তু বর্তমানের চিত্র সম্পূর্ণ আলাদা।