ভ্যাকসিন কিংবা টিকা আবিষ্কৃত হয়নি বলে তো আর চুপ করে বসে থাকা যায় না। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের আক্রমণের মুখে মানুষকে ছেড়ে দেওয়াও যায় না। বাড়ানো যায় না মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। ফলে বিশ্বের নানা দেশে করোনা ঠেকানোর লক্ষ্যে যুদ্ধের মতো প্রস্তুতি নিয়ে সার্বক্ষণিক কাজ চলছে। গ্রহণ করা হয়েছে করোনা ঠেকানোর নানা কৌশল।
যে কৌশলে চলছে করোনা ঠেকানোর লড়াই, তার একটি চেহারা মোটামুটি স্পষ্ট হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রবলভাবে আক্রান্ত দেশগুলোর (চীন, ইরান, ইতালি, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র) পরিস্থিতি থেকে যেমনভাবে অভিজ্ঞতা নেওয়া হয়েছে, তেমনিভাবে কম আক্রান্ত ও নিরাপদ দেশগুলোর কাছ থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতাকেও সমন্বয় করা হয়েছে। এভাবেই বিশ্বের নানা দেশে নির্ধারণ করা হয়েছে করোনা ঠেকানোর কৌশল।
ব্যক্তিগত পর্যায়ে যেসব কৌশলের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে বার বার এবং কমপক্ষে ২৫/৩০ সেকেন্ড সময় ধরে সাবান দিয়ে পরিষ্কারভাবে হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, সঙ্গরোধ পালন করা এবং উপযুক্ত প্রতিরোধী সামগ্রী তথা মাস্ক, স্যানিটাইজার, গ্লাভস, প্রটেক্টিভ পোশাক ব্যবহার করা।
সামাজিকভাবে ব্যাপক করোনা আক্রান্ত 'হাই রিস্ক স্পট' এলাকাকে শনাক্ত করে ঘিরে ফেলে থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে সংক্রমণকে। তার পরে দ্রুত এবং প্রচুর টেস্ট করিয়ে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হচ্ছে করোনায় সংক্রামিতদের। পাশাপাশি যাদের সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাদেরও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হচ্ছে। এইভাবে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ছিঁড়ে দেওয়া হচ্ছে সংক্রমণের চক্রটিকে। এই কৌশল নিয়ে মাঠ স্তরে কাজ করছে অনেক দেশ।
কোন কোন এলাকায় সংক্রমণ বেশি কিংবা বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তা সবার আগে চিহ্নিত করছে কর্তৃপক্ষ । তারপর অতিদ্রুত সেসব এলাকাকে ‘হাই রিস্ক স্পট’ নামে অভিহিত করা হচ্ছে। সেসব এলাকাগুলোয় নজরদারি বাড়িয়ে দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে সংক্রমণের শৃঙ্খল বা চক্র।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা 'হাই রিস্ক স্পট' বা যেসব জায়গা করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ, সেসব জায়গায় সংক্রমণ শৃঙ্খল ছিঁড়ে ফেলতে তিনটি মূল নীতিকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। এগুলো হলো: সংক্রামিত ব্যক্তিদের দ্রুত চিহ্নিত ও আলাদা করে ফেলা, সংক্রামিতদের সংস্পর্শে অন্য কাউকে আসতে না দিয়ে সংক্রমণের চক্র বা শৃঙ্খল ভেঙে ফেলা এবং এভাবে সামগ্রিকভাবে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকিয়ে দেওয়া।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর কৌশলকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন বহুমুখী। এতে শুধু স্বাস্থ্য বিভাগ নয়, অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি দফতরকেও কাজে লাগানো হচ্ছে। ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক না থাকায় আপাতত এসব কৌশলের মাধ্যমেই ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে করোনার বিস্তার এবং থামানোর চেষ্টা করা হচ্ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের ক্রমবর্ধমান ধারা।