গত বছরের ডিসেম্বর মাসে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে প্রথম নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) রোগী শনাক্ত হয়। এরপর গত চার মাসে ২০০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এই মহামারি। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে পুরো বিশ্ব। বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থাও মন্দা থেকে আরও মন্দা হয়ে উঠছে।
সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা এবং নাগরিকদের উদাসীনতায় এ মহামারি ঠেকাতে পারছে না বড় বড় রাষ্ট্রগুলো। বিশেষ করে চীনের পর ইউরোপের দেশগুলোতে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে দেশটি। এছাড়া এশিয়ার দেশগুলোতে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা এখনো কিছুটা কম আছে।
আশার কথা হচ্ছে করোনা সংক্রমণে মৃত্যুর তুলনায় আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার সংখ্যা দিন দিন বাড়তে শুরু করেছে।
আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ড ও মিটারের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে সাড়ে ২১ লাখ। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৪১০ জন মানুষের। তবে আশার কথা হচ্ছে, এরইমধ্যে চিকিৎসা নিয়ে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৭৪৩ জন।
জরিপ সংস্থার তথ্যমতে, চীনে নতুন করে কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। ইতালি, স্পেন, জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যে মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। দেশগুলোতে দিন দিন বাড়ছে সুস্থতার সংখ্যা। এছাড়া আমেরিকাতে মৃত্যুর সংখ্যার পাশাপাশি সুস্থতার সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
করোনা সংক্রমণ থেকে মোট আরোগ্য লাভ করাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- চীনে ৭৭ হাজার ৮৯২ জন, স্পেনে ৭৪ হাজার ৭৯৭ জন, জার্মানিতে ৭৭ হাজার জন, যুক্তরাষ্ট্রে ৫৭ হাজার ২৭১ জন, ইরানে ৫২ হাজার ২২৯ জন, ইতালিতে ৪০ হাজার ১৬৪ জন, ফ্রান্সে ৩২ হাজার ৮১২ জন, ব্রাজিলে ১৪ হাজার ২৬ জন, সুইজারল্যান্ডে ১৫ হাজার ৯০০ জন।
এদিকে আক্রান্তের ও মৃত্যুর দিক থেকে ইতালি, স্পেন, চীনকে পেছনে ফেলে বর্তমানে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৫৬ জন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবে করোনায় আমেরিকায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩৪ হাজার ৫৮০ জন।
আক্রান্তের দিক থেকে দ্বিতীয়তে স্থান করছেন স্পেন। দেশটিতে করোনা সংক্রমণে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৮৪ হাজার ৯৪৮ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৯ হাজার ৩১৫ জনের।
মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয়তে আছে ইতালির নাম। ইউরোপের এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত প্রাণহানি হয়েছে ২২ হাজার ১৭০ জনের। ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯৪১ জন।
আক্রান্ত ও মৃত্যুর দিক থেকে চতুর্থ ফ্রান্স। দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত ১ লাখ ৬৫ হাজার ২৭ জন এবং মৃত্যু ১৭ হাজার ৯২০ জনের।
জার্মানিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫৬৯ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৯৪৩ জনের। যুক্তরাজ্যে মৃত্যু ১৩ হাজার ৭২৯ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৩ হাজার ৯৩ জন।
এদিকে কিছুদিন আগেও আক্রান্তের দিক থেকে সবার শীর্ষে থাকা দেশ চীনে করোনাভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে। গত কয়েকদিন ধরে দেশটিতে নতুন করে কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। চীনের মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৮২ হাজার ১৬০, মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৩৪১ জনের।
অন্যদিকে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৩ হাজার ৪৩০ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪৪৮ জনের। সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৭৬৮ জন।
জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১ হাজার ৫৭২ জনের শরীরে করোনায় শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৯ জন।
উল্লেখ্য, এই নতুন ভাইরাস মূলত ফুসফুসে বড় ধরণের সংক্রমণ ঘটায়। জ্বর, কাশি, শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাই মূলত প্রধান লক্ষ্মণ। নতুন ভাইরাসটির জেনেটিক কোড বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এটি অনেকটাই সার্স ভাইরাসের মতো। এই ভাইরাস নিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে চলছে নানা তর্ক-বিতর্ক।