করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে যে সমস্যা দেখা দিচ্ছে সেটি হলো তীব্র শ্বাসকষ্ট। যখন দুই ফুসফুসেই নিউমোনিয়া হয় তখন তাদের মধ্যে তীব্র ধরনের কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয়। মেডিকেল পরিভাষায় যাকে অ্যাকিউট রেসপিরেটোরি ডিসট্রেস সিনড্রোম (এআরডিএস) বলে। ফুসফুসের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে এ রোগীদের অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দিলে রোগ জটিল আকার ধারণ করে। এক্ষেত্রে রোগীদের মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায়।
প্রোন পজিশনিং বা প্রবণ অবস্থান (উপুড় করে শোয়ানো) হল এক ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে তাদের ফুসফুসে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে। এ পদ্ধতিতে আশানুরূপভাবে ভালো ফললাফলও পাওয়া যাচ্ছে করোনা আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে। বিশেষ করে যারা জটিল শ্বাস কষ্টে ভুগছেন।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, শ্বাসকষ্টের সমস্যা তীব্র হলে আইসিইউতে নেওয়ায় আগে রোগীদের এ সেবা দেওয়া হচ্ছে। এতে রোগীরা বেশ দ্রুত সুস্থ হচ্ছেন।
ডা: মাঙ্গলা নরসিমহান বলেন, আমরা এই পদ্ধতিতে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছি। এটা খুবই সহজ একটি পদ্ধতি। এর মাধ্যমে রোগীরা সুস্থতার দিকে এগোচ্ছে। গত মঙ্গলবার একটি জরুরি ফোন কল পাই আমি। করোনা আক্রান্ত ৪০ বছর বয়সী এক রোগী মারাত্মক শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।
তিনি বলেন, আমি এটা শুনেই সহকর্মীদের নির্দেশনা দিই। রোগীকে উলটো করে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন। এটি সাহায্য করে কি না দেখুন। এর মাধ্যমে ফুসফুসে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
যখন রোগীকে এভাবে রাখা হয় তখন রক্তে অক্সিজেনের পরিমাপের হার, তার অক্সিজেনের স্যাচুরেশন হার ৮৫ শতাংশ থেকে ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত চলে যায়, এটি একটি বিশাল বড় ব্যবধান।
একদিনে ১৬ ঘণ্টা রোগীকে এভাবে রাখতে হয়। এ সময় রোগীর পিঠের অংশকে এক প্রকার রেস্ট দেওয়া বলা যেতে পারে। কারণ পিঠের অংশ বেশ অনেকক্ষণ উপরে থাকে। রোগীকে টানা এত সময় রাখা না গেলে ২টি সেশনে এ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ৪ ঘণ্টা করে সময় ভাগ করেও এ চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে।
করোনাভাইরাসযুক্ত রোগীরা প্রায় এআরডিএস অর্থাৎ তীব্র শ্বাসকষ্টে মারা যায়। মূলত যাদের ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া ও দীর্ঘমেয়াদি রোগ আছে তাদের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টের সমস্যা লক্ষণীয়।
ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল আইসিইউর পরিচালক ডা: ক্যাথরিন হিবার্ট বলেন, এই পদ্ধতিতে প্রায় সাথে সাথেই রোগীদের উন্নতি হচ্ছে। এক্ষেত্রে রোগীদের আইসিইউতে হস্তান্তর করার আগে তাদেরকে এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এভাবে ফুসফুসে সহজে অক্সিজেন পৌঁছতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি অক্সিজেনকে আরও সহজে ফুসফুসে যেতে দেয়। পিছনে থাকাকালীন, শরীরের ওজন কার্যকরভাবে ফুসফুসকে স্কুইজ করতে সাহায্য করে।
সাত বছর আগে ফরাসী চিকিৎসকরা নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন। সেখানে দেখানো হয়েছিল, এআরডিএস আক্রান্ত রোগীরা যাদেরকে ভেন্টিলেটারে রাখা হয়েছিল তাদেরকে যদি পেটের দিকটা নিচে, অর্থাৎ উলটো করে রাখা যায় সেক্ষেত্রে মৃত্যুর সম্ভাবনা কমে যায়।
আরও পড়ুন- ক্লোরোকুইন ওষুধে কি করোনা নিরাময় সম্ভব?
গরমে কমবে করোনার সংক্রমণ, দাবি মার্কিন গবেষকদের
করোনার চিকিৎসায় চার ওষুধ নিয়ে কাজ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কার কতদূর?
৫ মাস চলছে, করোনাভাইরাস সম্পর্কে যা জানাল বিজ্ঞানীরা
ফাইজার-বায়োএনটেক’র চুক্তি, এপ্রিলেই ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল