কোভিড-১৯ মহামারির কারণে জরুরি অবস্থা জারি করা বেশ কয়েকটি দেশে পুলিশ লাখো মানুষকে আটক করেছে এবং বেশ কয়েকজনকে হত্যা করেছে।
সোমবার (২৭ এপ্রিল) জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া গুলি ও আটকের নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট বলেন, বিরোধী মত দমন, জনগণকে নিয়ন্ত্রণ এবং নিজেদের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার হাতিয়ার হিসেবে সরকার জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারে না।
তার কার্যালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ফিল্ড অপারেশনের পরিচালক জর্জেট গ্যাগনন রয়টার্সকে জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় ৮০টি দেশ জরুরি অবস্থা জারি করেছে যার মধ্যে ১৫টি দেশে এরকম গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এগুলো হলো- নাইজেরিয়া, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, এল সালভাদর, ডমিনিকান রিপাবলিক, পেরু, হন্ডুরাস, জর্ডান, মরোক্কো, কম্বোডিয়া, উজবেকিস্তান, ইরান এবং হাঙ্গেরি।
তবে গ্যাগনন জেনেভায় এক ভার্চুয়াল বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘সম্ভবত এরকম আরও অনেক দেশ আছে যাদের কথাও আমরা তুলে ধরতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, প্রধান উদ্বেগের বিষয় হলো- এই ব্যতিক্রমি জরুরি অবস্থা যা কিছু কিছু দেশে বিষাক্ত লকডাউন সংস্কৃতি গড়ে তুলছে। হাইকমিশনারও বলেছেন যে, পুলিশ এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লকডাউন এবং সান্ধ্য আইন বাস্তবায়ন করতে অতিরিক্ত এবং কোনো কোনো সময় প্রাণঘাতি পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।
মহামারির কারণে ঘরে থাকার নিয়ম ভঙ্গ করায় মানুষকে আটক করা দেশের তালিকার শীর্ষে রয়েছে ফিলিপাইন। গত ৩০ দিনে সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করায় এখানে ১ লাখ ২০ হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কেনিয়ায় সান্ধ্য আইন বাস্তবায়ন করতে পুলিশের ২০টি হত্যা মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। তবে পুলিশের সহিংসতার জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তা ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকায় সামাজিক দূরত্ব পালনে বাধ্য করতে রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস, জলকামান ব্যবহার এবং চাবুক দিয়ে মারার অভিযোগ পেয়েছে জাতিসংঘ। গ্যাগনন জানান, তারা হত্যা, ধর্ষণ, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার ও দুর্নীতিসহ ৩৯টি অভিযোগের তদন্ত করছেন।
নাইজেরিয়ায় কোভিড-১৯ এর কারণে আরোপিত বিধিনিষেধ পালন সংক্রান্ত কারণে নিরাপত্তা বাহিনীর ১৮ জনকে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিন্তু নাইজেরিয়ার প্রশাসন কয়েকটি হত্যা কারাগারে সৃষ্ট সহিংসতার কারণে হয়েছে বলে দাবি করেছে।
আফ্রিকায় পুলিশের চাঁদাবাজির বিষয়েও গ্যাগনন উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, যেসব দরিদ্র মানুষ ঘুষ দিতে পারছে না তাদের বাধ্যতামূলক সঙ্গরোধ কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অথচ তাদের করোনা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।