করোনার বিরুদ্ধে লড়তে সক্ষম এমন পাঁচটি ভ্যাকসিন চীনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে আছে। এই পাঁচটির মধ্যে একটি ভেক্টর এবং চারটি নিষ্ক্রিয়।
শুক্রবার (১৫ মে) চীনের এক জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, এই ভ্যাকসিনগুলো ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রথম দুটি পর্যায়ে রয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের মধ্যে কোনো ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়তে দেখা যায় নি। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এই ভ্যাকসিনগুলো জুলাইয়ে তাদের দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালগুলো সম্পন্ন করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের উপপরিচালক জেনগ ইয়িকসিন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলো পর্যায়ক্রমে কোনো বাধা ছাড়াই নির্বিঘ্নে এগিয়ে চলছে।
তিনি আরও বলেন, কিছু ভ্যাকসিন প্রার্থী একযোগে প্রথম ও দ্বিতীয় ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশ নিয়েছেন। এরপর জাতীয় মেডিকেল পণ্য প্রশাসনের জরুরি অনুমোদনের ব্যবস্থায় বিবেচিত রয়েছে।
এখন পর্যন্ত মোট ২ হাজার ৫৭৫ জন স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে পাঁচটি ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপের পরীক্ষার জন্য ৫৩৯ জন স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। আমরা ভ্যাকসিনগুলোর উপর প্রথম ধাপের পরীক্ষার প্রাথমিক তথ্য পেয়েছি। ভ্যাকসিনগুলো প্রতিরক্ষামূলক অ্যান্টিবডি তৈরি করার ক্ষমতাসম্পন্ন।
দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে ২ হাজার ৩৬ জন স্বেচ্ছাসেবককে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ভ্যাকসিনগুলো কুতটুকু সুরক্ষিত ও এর শক্তি সম্পর্কে আরও মূল্যায়ন করার লক্ষ্য নিয়ে এ ট্যায়াল। কিছু স্বেচ্ছাসেবক এখন একাধিক ডোজ নিচ্ছেন। এ নিয়ে প্রাসঙ্গিক গবেষণাও চলছে।
এখন পর্যন্ত করা পরীক্ষাগুলোতে স্বেচ্ছাসেবীদের ওপর বড় ধরনের কোনো প্রভাব পাওয়া যায় নি। সবকিছু যদি পরিকল্পনা অনুযায়ী চলে তবে এই প্রকল্পগুলো জুলাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শেষ করতে পারবে।
এর বাইরেও চীনে অন্য ধরনের ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা মূল্যায়ন করা হচ্ছে। কেউ এর কার্যকারিতা বাড়াতে গবেষণা করছে। কারণ ভ্যাকসিন তৈরি করা একটি কৌশল ও বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান। ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার জন্য জুনে আরও কিছু ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেওয়া হতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
পিপলস লিবারেশন আর্মি একাডেমি অব মিলিটারি মেডিকেল সায়েন্সেস এবং চীনা সংস্থা ক্যানসিনো বায়ো কর্তৃক উদ্ভাবিত রিকম্বিন্যান্ট অ্যাডেনোভাইরাস ভেক্টর-ভিত্তিক ভ্যাকসিন এপ্রিলের ১২ তারিখে দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শুরু করেছে। ভেক্টর ভ্যাকসিন নিরাপদ এবং একসঙ্গে অনেক রোগই নির্মূল করতে সক্ষম। করোনাভাইরাসের প্রোটিনকে প্রতিরোধ করতে ও শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িতে তুলতে সক্ষম এ ভ্যাকসিন। এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
অন্য চারটি নিষ্ক্রিয় ভ্যাকসিনের মধ্যে দুটি চীনের ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপ কো লিমিটেড দ্বারা তৈরি করা হয়েছে, একটি সিনোভাক রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কো লিমিটেড এবং অন্য আরেকটি ভ্যাকসিনের প্রতিষ্ঠান তাদের নাম প্রকাশ করে নি।
নিষ্ক্রিয় ভ্যাকসিন মূলত নির্দিষ্ট প্রকার জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম। এটি ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সক্ষম।
নিষ্ক্রিয় ভ্যাকসিনের গুণগত মান নির্ভরযোগ্য। কার্যকারিতা ও সুরক্ষার কথা বিবেচনায় এ ভ্যাকসিন গ্যারান্টিযুক্ত বলে জানান চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের সামাজিক উন্নয়নের ব্যুরোর পরিচালক উও ইউয়ানবিন।