আমাদের এ মহাবিশ্বের সমান্তরাল আরেকটি মহাবিশ্ব রয়েছে। যেখানে সময় চলছে উল্টো স্রোতে, অর্থাৎ সেখানকার সময় অতীতের দিকে ধাবমান। সিনেমা বা টেলিভিশন সিরিজে সায়েন্স ফিকশনে এমন দৃশ্যতো হরহামেশাই দেখি। কিন্তু এখন আর এটি সিরিজ বা সিনেমায় আটকে নেই। এমন দাবিই করেছেন ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (নাসা) একদল বিজ্ঞানী। তাদের দাবি, আমাদের এ মহাবিশ্বের মতো আরেকটি মহাবিশ্ব রয়েছে বলে প্রমাণও পেয়েছেন তারা, যেখনে সময় চলে পেছনের দিকে।
একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৫৯ সালে শুরু হওয়া আমেরিকান টিভি সিরিয়াল ‘দ্য টোয়ালাইট জোন’ এর একটি দৃশ্যে যেমন আরেকটি মহাবিশ্ব থাকার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়, তেমন ধারণা থেকে নাসার একদল বিজ্ঞানী অ্যান্টার্কটিকায় একটি গবেষণা করছেন, যাতে তারা এমন এক সমান্তরাল মহাবিশ্ব থাকার ব্যাপারে প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন, যেখানে পদার্থবিদ্যার নিয়মগুলো আমাদের মহাবিশ্বের বিপরীতে চলছে।
টেলিভিশনে বিভিন্ন কমিক্স ও সায়েন্স ফিকশন দেখে ১৯৬০ এর দশকের শুরুর দিকে দর্শকদের মধ্যে একই রকম আরেকটি মহাবিশ্বের ধারণা জন্মায়। কিন্তু এখন একটি মহাজাগতিক রশ্মি শনাক্তকরণ পরীক্ষায় এমন ক্ষুদ্র কণা পাওয়া গেছে, যা হয়তো একই রকম আরেকটি জগতের। যে কণার জন্ম বিগ ব্যাংয়ের (বিজ্ঞানীদের মতে, এক মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে এ মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে, যাকে বিগ ব্যাং বলা হয়) মাধ্যমেই। এমন খবরই জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ডেইলি স্টার।
বিশেষজ্ঞরা নাসার অ্যান্টার্কটিক ইমপালসিভ ট্রান্সিয়েন্ট অ্যান্টেনা বা এএনআইটিএ বিশাল একটি বেলুনে করে অ্যান্টার্কটিকার উপরে গবেষণা চালান। সেখানে রেডিও (বেতারবার্তা) কোলাহলমুক্ত শুকনো হিমশীতল বায়ু থাকায় গবেষণার ফলাফল বিকৃত হয়নি।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, অবিরাম বাতাসে পৃথিবীর বাইরের কোনো স্থান থেকে ক্রমাগত উচ্চ শক্তির কণা পৃথিবীতে আসে।
দুর্বল শক্তির প্রায় শূন্য ভরের ক্ষুদ্র পারমাণবিক কণা নিউট্রিনো সম্পূর্ণরূপে পৃথিবীর উপর দিয়ে যেতে পারে, তবে উচ্চ-শক্তিযুক্ত বস্তুকণা আমাদের গ্রহের শক্ত পদার্থে আটকে যায়, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।এর অর্থ হলো উচ্চ শক্তির কণাগুলোই কেবল মহাকাশ থেকে নিচে এলে শনাক্ত করা যায়। কিন্তু গবেষক দলটি বলছে, অন্য কোথাও থেকে পৃথিবীতে আসা তথাকথিত টাউ নিউট্রিনো কণা শনাক্ত করেছেন তারা। যা তুলনামূলকভাবে ভারী ও কম শক্তির কণা।
ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর মানে দাঁড়ায়, টাউ নিউট্রিনো কণাগুলো আসলে সময়ের সাথে পেছনের দিকে ভ্রমণ করছে, যা একটি সমান্তরাল মহাবিশ্বের প্রমাণ দেয়।
হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষামূলক কণার পদার্থবিদ অধ্যক্ষ এএনআইটিএ তদন্তকারী পিটার গোরহাম বলছেন, টাউ নিউট্রিনো শুধুমাত্র যে আচরণটি করতে পারে, তা হলো এটি পৃথিবীর উপর দিয়ে যাওয়ার আগে কোনো ভিন্ন ধরনের কণায় পরিবর্তিত হয় এবং আবার ফিরে যায়।
অদ্ভুত ঘটনাটি বর্ণনা করে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণাপত্রের শীর্ষস্থানীয় লেখক গোরহাম আরো উল্লেখ করেছেন যে তিনি এবং তার সহগবেষকরা এমন কয়েকটি ‘অসম্ভব ঘটনা’ দেখেছেন, যা নিয়ে তাদের সংশয় রয়েছে।
তিনি নতুন বিজ্ঞানীদের বলেছেন, সবাই এ হাইপোথিসিস নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। (হাইপোথিসিস হচ্ছে এমন একটি বিষয়, যা সম্পূর্ণ প্রমাণিত না হলেও এর এমন কিছু তথ্য আছে, যার ভিত্তিতে বিষয়টিকে সত্য বলে ধরা হয়।)
এ ঘটনার সহজ ব্যাখ্যাটি হলো ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে বিগ ব্যাংয়ের মুহূর্তে দু’টি মহাবিশ্ব তৈরি হয়েছিল, একটি আমাদের এবং অন্যটি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী সময়ের সাথে সাথে পেছনের দিকে চলছে।
এ গবেষণায় অংশ নেওয়া ইব্রাহিম সাফা বলেন, আমরা সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ বা সবচেয়ে বিরক্তিকর সম্ভাবনাগুলো নিয়ে ফিরে (অ্যান্টার্কটিকা থেকে) এসেছি।