আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্র সূর্য গ্রহগুলোকে সুনির্দিষ্ট কক্ষপথে রাখে এবং পৃথিবীতে জীবনের জন্য সঠিক পরিমাণে আলো ও উষ্ণতা দেয়। এমনকি আমাদের প্রতিদিনের সময়সূচিও পরিচালনা করে।
আমরা যখন প্রতিদিন সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়া ও জেগে ওঠায় অভ্যস্ত তখন সূর্য নিজে অবিশ্বাস্যভাবে গতিশীল।
তবে আমাদের মতো সূর্যও পর্যায়ক্রমে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির ফলে আমাদের নক্ষত্রের সেই পরিবর্তনগুলি আরও অনুমানযোগ্য হয়ে উঠেছে।
বর্তমানে সূর্য আরেকটি ‘সোলার মিনিমাম’-এর দিকে যাচ্ছে। সহজ ভাষায় সোলার মিনিমাম হচ্ছে সূর্যের তাপ উৎপাদন কার্যক্রমে একটু ভাটা পড়া।
স্বাভাবিক নিয়মে প্রতি ১১ বছর পর পর সোলার মিনিমাম হয়ে থাকে। এই অবস্থা ন্যূনতম ছয় মাস স্থায়ী হয়। হিসাব মতে ২০২০ সালের জুন মাস বা তার কমবেশি ছয় মাসের মধ্যে একটি সোলার মিনিমামের সৃষ্টি হতে যাচ্ছে।
বৈজ্ঞানিকরা বিষয়টি অনুমান করেন সূর্যের গায়ে কালো দাগের সংখ্যা গণনা করে। সূর্যের গায়ে কালো দাগের সৃষ্টি হয় যখন সূর্যের উপরিভাগে চৌম্বক কার্যক্রম বাড়ে। আর এই চৌম্বক কার্যক্রমের সৃষ্টি হয় যখন সূর্যের মধ্যে সোলার ফ্লেয়ার সৃষ্টি হয়। সোলার ফ্লেয়ার হচ্ছে এমন একটি ক্রিয়া যার ফলে সূর্যকে উজ্জ্বলতর দেখায়।
এই ক্রিয়াটি যখন ঘটে তখন বৈজ্ঞানিকরা বিশেষ টেলিস্কোপ দিয়ে সূর্যের উপরিতলে অনেকগুলো কালো স্পট দেখতে পান। এই স্পটগুলো একটি নির্দিষ্ট সীমার মথে থাকা মানে সূর্যের তাপ উৎপাদন স্বাভাবিক নিয়মে চলছে। ওই সীমা থেকে কমে যাওয়া মানে সূর্যের তাপ উৎপাদন কার্যক্রমে কিছুটা ভাটা পড়েছে।
কিছু সৌর বিজ্ঞানী মনে করেন যে, পরবর্তী কয়েক দশকে আমরা একটি ‘গ্র্যান্ড সোলার মিনিমাম’-এ যেতে পারি। এমনটা হয়েছিল ১৬৫০ থেকে ১৭১৫ সালে, যা ছোট্ট বরফ যুগ নামে পরিচিত।
তবে এবারের সোলার মিনিমাম কোন বরফযুগের সূচনা করবে না বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই ঘটছে বলে মনে করছেন তারা।
মানুষের কার্বন নিঃসরণের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রার অবস্থা এতটাই উষ্ণ যে সোলার মিনিমামের ফলে সৃষ্ট তাপমাত্রার তারতম্য অনুভব করতে হলে ওই সোলার মিনিমামকে স্থায়ী হতে হবে প্রায় একশ বছর। যা বৈজ্ঞানিক বাস্তবতায় প্রায় অসম্ভব। যে সোলার মিনিমাম আসছে তা সূর্যের চক্রের নিয়মিত দিক।
এমনকি সোলার মিনিমামের সময় সূর্য আপাত শান্ত থাকলেও, এটি অন্যান্য উপায়ে সক্রিয় থাকতে পারে; যেমন করোনাল গর্তগুলি যা সৌরজগতের মধ্য দিয়ে উড়ে আসা শক্তিশালী কণার প্রবাহ প্রেরণ করে।
নাসার সোলার ডায়নামিক্স অবজারভেটরি প্রকল্পের বিজ্ঞানী ডিন পেসনেল বলেছেন, আমরা সৌর চক্রজুড়ে করোনাল গর্তগুলি দেখি, তবে সোলার মিনিমামের সময়কালে এগুলি দীর্ঘ সময়— ছয় মাস বা তারও বেশি সময় ধরে চলতে পারে।
সোলার মিনিমাম চলাকালে জলবায়ুতে মারাত্মক পরিবর্তন এসে তুষারপাত, ভূমিকম্প হতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন।
সোলার মিনিমাম একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া, এর ফলে তাপমাত্রায় যে পরিমাণ পরিবর্তন হবে সেটি পৃথিবীতে অনুভূতই হবে না বলে ধারণা করছেন বৈজ্ঞানিকরা।
সূত্র: সিএনএন