আটলান্টিক সমুদ্রের পানি রক্ত লাল!

ইউরোপ, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 13:00:57

সমুদ্রবেষ্টিত দুর্গম দ্বীপ ‘ফারো’। নরওয়ে আর আইসল্যান্ডের মধ্যবর্তী আটলান্টিক সাগরের দক্ষিণে অবস্থিত স্বায়ত্তশাসিত ফারো দ্বীপপুঞ্জ ডেনমার্কের আওতাভুক্ত। সম্প্রতি সেখানকার সমুদ্রের পানি টুকটুকে লাল আকার ধারণ করেছিল। আর এ জন্য দায়ী মানুষের হিংস্রতা।

সম্প্রতি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক অ্যালেস্টার ওয়ার্ড (২২) ছুটি কাটাতে ওই দ্বীপে বেড়াতে গিয়েছিলেন। ৩০ জুলাই তিনি সান্তামাউগে উপসাগরে দেখতে পান ভয়াবহ ‘অমানবিক’ দৃশ্য। দ্বীপটির স্থানীয় বাসিন্দারা সেদিন দলগতভাবে তিমি শিকার করছিল। তরুণ, তরুণী, বৃদ্ধ, বাচ্চা সবাই ছিল সেই শিকারে। সৈকতে শয়ে শয়ে তিমি দড়ি দিয়ে টেনে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। তিমির রক্তে লাল হয় সমুদ্রের পানি। আর এ সব দৃশ্য ক্যমেরাবন্দী করেন ওয়ার্ড। পরবর্তীতে তার তোলা সেসব আলোকচিত্র ‘ট্রায়াঙ্গাল নিউজ’ নামে ম্যাগাজিনে প্রকাশ হলে রক্ষণশীল ও পরিবেশবাদীদের মধ্যে হইচই পড়ে যায়।

ওয়ার্ডের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ফারো দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দারা বাৎসরিক এই তিমি শিকার উৎসব পালন করে আসছে। আসন্ন তীব্র শীত মৌসুমে খাবার মজুদ করার উদ্দেশ্যে দলগতভাবে ওই তিমিগুলোকে শিকার করে ফারো দ্বীপের বাসিন্দারা। এমনকি দ্বীপের বাচ্চারা পর্যন্ত অংশ নেয় দলগত ওই তিমি শিকারে। দ্বীপের বাইরের যে কোনো বাসিন্দা বা পর্যটকের কাছে ভয়ঙ্কর মনে হলেও ফারোবাসীদের কাছে সেটি উৎসবের মতো। এবং এই দলগত তিমি শিকার সেখানে আইনগতভাবে বৈধ।

জানা যায়, ওই কয়েক ডজন পাইলট প্রজাতির তিমির মাংস আর চর্বিই হবে আসন্ন শীতে ৫০ হাজার ফারোবাসীর খাবারের মূল উৎস।

উপসাগরে এত তিমি দেখে প্রথমে আশ্চর্য হয়ে যান আলোকচিত্রী ওয়ার্ড। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ‘ট্রাইঅ্যাঙ্গেল’কে ওয়ার্ড বলেন, ‘শিকারীরা শুরুতে দাঁড় দিয়ে গুতিয়ে গুতিয়ে তিমিগুলোকে দ্বীপঘেঁষা বেলাভূমিতে নিয়ে আসে, যখনই তারা কাছাকাছি চলে আসে দ্বীপবাসী দৌড়ে নেমে যায়, আর তিমিগুলোকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকে।’

‘এমনকি বাচ্চারাও যুক্ত হয় ওই কাজে; দড়ি ধরে টানে, তিমির মরদেহগুলোর ওপরে উঠে লাফালাফি করে,’ বলেন ওয়ার্ড।

ফারোর চারপাশে পাইলট প্রজাতির তিমি পর্যাপ্ত সংখ্যক আছে বলে জানান দ্বীপের বাসিন্দারা। সেগুলোর সংখ্যা প্রায় এক লাখ হবে, আর তারা বছরে প্রায় ৮০০ তিমি শিকার করে।

শিকার দেখার অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে ওয়ার্ড বলেন, ‘আমরা নির্বাক আর বিষণ্ণ হয়ে বসে ছিলাম শুধু, এ ছাড়া আর কিছু করার ছিল না।’

ফারোবাসী তিমি শিকারের ব্যাপারটাকে সবার জন্য অংশ্রগ্রহণমূলক বলে মনে করে। খাবারের প্রয়োজনে ওই তিমি শিকার জাতীয় আইনে আনুমোদিত বলে জানা যায়। আইনে শুধু লক্ষ্য রাখতে বলা হয়েছে, শিকারের সময় তিমিদের যাতে সবচেয়ে কম কষ্ট দেওয়া হয়।

যদিও তিমিগুলোকে হত্যা করার পদ্ধতিটি দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে ওয়ার্ড বলেন, ‘শিকারের সময় তিমিগুলোর আহাজারি ছিল বিভীষিকাময়, দড়িতে আঙটা লাগিয়ে তাদের শরীর বিদ্ধ করে তীরের দিকে নিয়ে আসা হয়, আর তারপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে মারা হয়।’

‘স্বাভাবিক মানুষের মতো তিমিগুলো মরার সুযোগ পায় না,’ বলে আক্ষেপ করেন অ্যালেস্টার ওয়ার্ড।

গোটা ঘটনায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ পশুপ্রেমী সংগঠনগুলি। রীতির নামে কেন নিরপরাধ প্রাণিদের মারা হবে? বিভিন্ন মহলে এই প্রশ্ন উঠছে। এমন নিষ্ঠুর রীতি অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন বরাবরই সেখানে তিমি শিকারকে বৈধ বলে যুক্তি দিয়ে এসেছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর