করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) বর্তমান বিশ্বের এক আতঙ্কের নাম। এ মহামারি স্থবির করে দিয়েছে সারা বিশ্বকে। বন্ধ হয়ে গেছে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও ব্যবসা। বিশ্বের কম বেশি সবগুলো দেশই তাদের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে।
বিশেষ করে চীনের পর ইউরোপের দেশগুলোতে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে দেশটি। আশার কথা হচ্ছে করোনা সংক্রমণে মৃত্যুর তুলনায় আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার সংখ্যা দিন দিন বাড়তে শুরু করেছে।
আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ড ও মিটারের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে সাড়ে ৭০ লাখ। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৪ লাখ ৬ হাজার ১০২ জন মানুষের। তবে আশার কথা হচ্ছে, এরইমধ্যে চিকিৎসা নিয়ে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩৪ লাখ ৬০ হাজার ১৭১ জন।
জরিপ সংস্থার তথ্যমতে, চীনে নতুন করে কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। ইতালি, স্পেন, জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যে মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। দেশগুলোতে দিন দিন বাড়ছে সুস্থতার সংখ্যা। এছাড়া আমেরিকাতে মৃত্যুর সংখ্যার পাশাপাশি সুস্থতার সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
করোনা সংক্রমণ থেকে মোট আরোগ্য লাভ করাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- চীনে ৭৮ হাজার ৩৪১ জন, জার্মানিতে ১ লাখ ৬৯ হাজার ১০০ জন, যুক্তরাষ্ট্রে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭০৮ জন, ব্রাজিলে ৩ লাখ ২ হাজার ৮৪ জন, ইরানে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৪৯ জন, ইতালিতে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮৩৭ জন, তুর্কিতে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৯৫৯ জন, রাশিয়ায় ২ লাখ ২৬ হাজার ৭৭১ জন, চিলিতে ৯৫ হাজার ৬৩১ জন, মেক্সিকোতে ৮৪ হাজার ৪১৯ জন, ফ্রান্সে ৭০ হাজার ৮৪২ জন, ভারতে ১ লাখ ২৩ হাজার ৮৮৪ জন, পেরুতে ৮৬ হাজার ২১৯ জন।
এদিকে, আক্রান্তের ও মৃত্যুর দিক থেকে ইতালি, স্পেন, চীনকে পেছনে ফেলে বর্তমানে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২০ লাখ ৭ হাজার ৪৪৯ জন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবে করোনায় আমেরিকায় প্রাণ হারিয়েছেন ১ লাখ ১২ হাজার ৪৬৯ জন।
আক্রান্তের দিক থেকে দ্বিতীয়তে ব্রাজিল। দেশটিতে করোনা সংক্রমণে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৬ লাখ ৯১ হাজার ৯৬২ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৭ হাজার ৩১২ জনের। দেশটিতে দ্রুত বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।
তৃতীয়তে আছে রাশিয়া। দেশটিতে করোনা সংক্রমণে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ ৬৭ হাজার ৬৭৩ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৮৫৯ জনের।
মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয়তে আছে যুক্তরাজ্যের নাম। ইউরোপের এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত প্রাণহানি হয়েছে ৪০ হাজার ৫৪২ জনের এবং আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৮৬ হাজার ১৯৪ জন।
আক্রান্তের সংখ্যায় চতুর্থতে ইউরোপের দেশ স্পেন। দেশটিতে করোনা সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৮৮ হাজার ৬৩০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৭ হাজার ১৩৬ জনের।
পেরুতে দিন দিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। দেশটিতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৯৬ হাজার ৫১৫ জন এবং মারা গেছেন ৫ হাজার ৪৬৫ জন।
ইউরোপের আরেকটি দেশ ইতালিতে করোনায় মারা গেছেন ৩৩ হাজার ৮৯৯ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৩৪ হাজার ৯৯৮ জন, ইরানে অক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৭১ হাজার এবং মারা গেছেন ৮ হাজার ২৮১ জন, ফ্রান্সে করোনা সংক্রমণে আক্রান্ত ১ লাখ ৫৩ হাজার ৯৭৭ জন এবং মৃত্যু ২৯ হাজার ১৫৫ জনের, জার্মানিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৮৫ হাজার ৮৬৯ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ৭৭৬ জনের।
এদিকে কিছুদিন আগেও আক্রান্তের দিক থেকে সবার শীর্ষে থাকা দেশ চীনে করোনাভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে। গত কয়েকদিন ধরে দেশটিতে নতুন করে কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। চীনের মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৮৩ হাজার ৪০, মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৬৩৪ জনের।
অন্যদিকে, আক্রান্তের দিক থেকে ৬ নম্বরে অবস্থান করছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত। দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৫৭ হাজার ৪৮৬ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৭ হাজার ২০৭ জনের।
জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৬৫ হাজার ৭৫৯ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৮৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৩ হাজার ৯০৩ জন।
উল্লেখ্য, এই নতুন ভাইরাস মূলত ফুসফুসে বড় ধরণের সংক্রমণ ঘটায়। জ্বর, কাশি, শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাই মূলত প্রধান লক্ষ্মণ। নতুন ভাইরাসটির জেনেটিক কোড বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এটি অনেকটাই সার্স ভাইরাসের মতো। এই ভাইরাস নিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে চলছে নানা তর্ক-বিতর্ক।