মক্কা মোকাররমা (সৌদি আরব) থেকে: বাংলাদেশি। এই পরিচয়টাই তাকে আন্দোলিত করে। স্বদেশের নতুন পরিচিত মানুষগুলোকে পাশে পেলে অনেকটা জোর করে হলেও আতিথেতায় জুড়ি নেই তার। নিজেই তদারকি করেন আপ্যায়নের।
তার ভাষায়, ওমরা বা হজ করতে আসা হাজীরা মহান আল্লাহর মেহমান। সেই মেহমানদের খেদমত করাটাও ভাগ্যের বিষয়।
চলতি হজ মৌসুম ঘিরে ভীষণ ব্যস্ততা তার। দেশ থেকে আসা হাজী সাহেবদের তিন বেলা দেশি স্বাদের খাবার তুলে দিতে ব্যস্ততার শেষ নেই তার কর্মীদের।
কাচকি মাছ, রুই, বোয়াল বা তেলাপিয়া মাছ। হাজীদের চাহিদামতো উট থেকে গরু, খাসি, দুম্বা বা মুরগীর মাংসের খাবার সরবরাহ করে হাজীদের খাবারে সন্তুষ্টি অর্জনে ভিন্ন এক প্রতিযোগিতা চলে তার মাঝে।
তিনি মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন চৌধুরী। চট্রগ্রাম জেলার সাতকানিয়া থানার চুড়ামনি গ্রামের আলহাজ কবির আহমেদ চৌধুরীর সন্তান। পবিত্র কাবাঘর সংলগ্ন মসজিদ আল হারামের কাছে গ্র্যান্ড মক্কা হোটেলের পেছনে সেবা আমির জবলে সউদান এলাকায় জসীম উদ্দিন গড়ে তুলেছেন, ‘ঢাকা হোটেল এন্ড বিরিয়ানী হাউজ’ নামের বিশাল এক রেস্টুরেন্ট।
পড়াশোনা শেষে বছর বিশেক আগে পাড়ি জমান মক্কায়। তখন তার ভরসা বলতে ছিলো- বড়ভাই। এখন জসীমসহ পাঁচ ভাই জমিয়ে ব্যবসা করছেন এখানে।
বলছিলেন হাজী সাহেবদের খেদমত করে সন্তুষ্টি অর্জন করাটাই আপনার লক্ষ্য। সেটা কিভাবে?
আপনি মক্কায় বাংলাদেশি খাবারের স্বাদ নিতে হলে প্রতি বেলায় খাবারের জন্যে মানভেদে গুণতে হয় ১৫ থেকে ২০ রিয়াল। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা সাড়ে প্রায় সাড়ে ৩শ' থেকে সাড়ে ৪শ' টাকা। কিন্তু আমি হাজী সাহেবদের হোটেলে তিন বেলার খাবার পৌঁছে দেই মাত্র ১৮ রিয়ালে।
অর্থাৎ হিসেবে এক বেলার খাবারের অর্থে আমি তিন বেলার খাবার সরবরাহ করি।
কারণ ব্যবসা যতটা না গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে হাজীদের ‘খেদমত’ করার বিষয়টিই আমার কাছে বেশি অগ্রাধিকার। এই নীতি আর আদর্শই আমার ব্যবসায় বরকত দিয়েছে।
ব্যবসা সম্প্রসারিত হয়েছে। একটি থেকে একাধিক হোটেল দিয়েছি আমি। পবিত্র মসজিদুল আল হারামের কাছে আমি চালু করেছি- ‘রাজধানী হোটেল।’ এখন আমার লক্ষ্য আল্লাহর মেহমানদের সন্তুষ্টি অর্জন করা। তারা যদি সন্তুষ্ট হন তবে আল্লাহতায়ালা আমাকে আরও বরকত দেবেন- যোগ করেন জসীম উদ্দিন চৌধুরী।
কেবল রেষ্টুরেন্টে ব্যবসাই নয়, হোটেসহ আরও অনেক ব্যবসায় নিজের মেধা আর পরিশ্রম দিয়ে আলো ছড়িয়েছেন তিনি। যেখানে কাজ করছে প্রবাসীদের অনেকে।
জসীম উদ্দিন চৌধুরীর জানান,দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে প্রবাসীদের অবদান রয়েছে। তারা আমাদের রেমিটেন্স যোদ্ধা। এই প্রবাসীদের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আরও সম্মান দিতে হবে।
তবেই প্রবাসীরা পাবে আসল মর্যাদা। এতটুকু সম্মান দিলে প্রিয় স্বজন ছেড়ে প্রবাসের মাটিতে পড়ে থাকা প্রবাসীদের মধ্যে দেশে বিনিয়োগের প্রতিযোগিতা হবে, তখন দেশ হবে আরও উন্নত। প্রবাসেও গর্বের সঙ্গে মাথা উঁচু করে চলতে পারবে এই মানুষগুলো।