আয়তনে বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম দেশ কাজাখস্তান

দেশে দেশে ইসলাম, ইসলাম

ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 22:25:55

সম্প্রতি কাজাখস্তানের রাজধানী নুর সুলতানে প্রথম পরিবেশবান্ধব সৌর মসজিদ উদ্বোধন করা হয়েছে। সৌরশক্তির মাধ্যমে এই মসজিদের বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। মসজিদটি নির্মাণের আগে স্থানীয় কর্মকর্তারা বিদ্যুৎ বিলের ব্যয় হ্রাস করার জন্য মসজিদে সৌর প্যানেল ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন।

পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এই মসজিদের খবরটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর দেশটিতে প্রতিবছর প্রচুর মসজিদ নির্মাণ করা হলেও পুরোপুরি সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মসজিদ কর্তৃপক্ষ।

কাজাখস্তানে ২০১৯ সালে ৮০টি মসজিদ উদ্বোধন করা হয়েছে। সোভিয়েত শাসনের সময় ঐতিহ্যবাহী মুসলিম দেশটির ধর্মীয় কার্যক্রমের ওপর বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং হাজার হাজার মসজিদ-মাদরাসা বন্ধ করে দেওয়া ঞয়।

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পরও দেশের শাসনব্যবস্থায় ধর্মবিরোধী ছাপ থেকে গেছে। তবে আশার কথা হলো, দেশটিতে ধর্মীয় অনুরাগ বাড়ছে দিন দিন। বর্তমানে দেশটির ৭০ শতাংশ জনগণ মুসলিম এবং তাদের বেশিরভাগ তুর্কি বংশোদ্ভূত।

প্রচণ্ড বরফ উপেক্ষা করে নামাজ আদায় করছেন কাজাখস্তানের মুসলমানরা, ছবি: সংগৃহীত

কাজাখস্তানের মুসলিম জনসাধারণের উদ্যোগ ও অর্থায়নে মসজিদগুলো নির্মিত হয়। তবে সরকারের অনুমতি নিতে হয়। সরকারি হিসাবমতে, কাজাখস্তানে বর্তমানে দুই হাজার ৬৯১টি মসজিদ রয়েছে। আরও শতাধিক মসজিদ নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে।

ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের ওপর সরকারি বিধিনিষেধ থাকায় কাজাখস্তানে মুসলিম সমাজের বেশিরভাগ কার্যক্রম মসজিদকেন্দ্রিক। মসজিদ থেকেই ধর্মীয় সচেতনতা বৃদ্ধি, ইসলামি সংস্কৃতির প্রচার-প্রসারের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। তা ছাড়া বড় বড় মসজিদের সঙ্গে কোরআন মুখস্থ করার জন্য হেফজখানা ও উচ্চতর ইসলামি গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার রেওয়াজ রয়েছে।

বিশুদ্ধ কোরআনচর্চার জন্য কাজাখস্তানের প্রসিদ্ধি রয়েছে। কয়েক বছর আগে শায়খুল ইসলাম আল্লামা তাকি উসমানি ধর্মীয় এক সফরে কাজাখস্তান গিয়েছিলেন। সেখানে ধর্মীয় কয়েকটি কনফারেন্সে তিনি অংশগ্রহণ করেন। সেই সফরের বৃত্তান্ত তিনি ‘সফর দর সফর’ নামক তার (তৃতীয়) ভ্রমণকাহিনিতে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।

ওই ভ্রমণকাহিনিতে তিনি লিখেন, সেখানকার (কাজাখস্তানের) কিছু উদ্যমী যুবকের মুখে আমি বিশুদ্ধ আরবি শুনে অবাক হয়েছি। জিজ্ঞেস করলে জানতে পারলাম তারা হাফেজে কোরআনও। অথচ বয়সের দিকে তাকালে বোঝা যায় যে, সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসনকালেই তাদের বেড়ে ওঠা। কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, যেখানে দীর্ঘকাল কোরআনের কপি ঘরে রাখা অপরাধ ছিল, সেখানে আপনারা কীভাবে কোরআন হেফজ করলেন আর কেমন করেই বিশুদ্ধ আরবি শিখতে পারলেন? প্রশ্ন শুনে তাদের চোখগুলো থেকে অশ্রু ঝরতে লাগল।

তারা শোনালেন, তাদের পূর্বপুরুষ আলেমরা কীভাবে জান-মাল বিসর্জন দিয়ে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সন্তানদের এবং নতুন প্রজন্মকে ঘরে ঘরে গিয়ে গোপনে মাটির নিচে কোরআন শেখাতেন। শুধু তেলাওয়াতই নয়, আরবি ভাষা, ধর্মীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান সবকিছুর তারা শিক্ষা প্রদান করতেন। বস্তুত তাদের ওই ত্যাগ-তিতিক্ষার বদৌলতে কাজাখস্তান স্বাধীনতা লাভের পর দ্বীনি শিক্ষার লোকের অভাব দেখা দেয়নি। আর তাদের হাতেগড়া তরুণরাই আজকের কাজাখস্তানে ধর্মীয় ক্ষেত্রে মুসলমানদের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে।

কাজাখস্তানে নারীদের কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতার আয়োজন ঐতিহ্যের অংশ। কাজাখস্তানের সবচেয়ে বড় শহর আলমাতির কেন্দ্রীয় মসজিদের সহযোগিতায় আলমাতি ও পাভলদার শহরে প্রতিবছর এ জাতীয় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

কিছুদিন আগে কাজাখস্তানে যাত্রা শুরু করেছে ‘মিউজিয়াম অব ইসলামিক কালচার।’ এতে ওই অঞ্চলের প্রাচীন অনেক নিদর্শন স্থান পেয়েছে। বিশেষত কাজাখ মুসলিমদের ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে।

কাজাখস্তানের এই মসজিদে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হবে, ছবি: সংগৃহীত

কাজাখস্তানের বড় বড় শহরগুলোতে মুসলমানদের ধর্মীয় বিষয়াদী দেখভাল করতে ইমাম রয়েছেন। তিনি প্রধান ইমাম নামে পরিচিত। তাকে ‘ইমামে শহর’ বলা হয়। দেশটির বেশিরভাগ মানুষ ধর্মভীরু ও নামাজী। আর রোজাদারের পরিমাণ আরও বেশি। কাজাখস্তানের মুসলমানদের দৈনিক সাড়ে ১৮ ঘণ্টা রোজা রাখতে হয়। তারা গম থেকে তৈরি বিভিন্ন প্রকারের খাবার বেশি খায়।

২৭ লাখ ২৪ হাজার ৯০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে প্রায় ২ কোটি মানুষের বসবাস। আয়তনের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ৯ম বৃহত্তম দেশ। অষ্টম শতাব্দীতে আরবদের আগমনের ফলে এই অঞ্চলে ইসলামের প্রসার ঘটে। সোভিয়েত আমলে ধর্ম খুব বেশি গুরুত্ব না পেলেও এখন দেশটির প্রধান ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ মুসলিম। বাকী ৩০ ভাগ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।

নুর সুলতান কাজাখস্তানের রাজধানী। কিছুদিন আগেও এই শহরটির নাম ছিল আস্তানা। দেশের প্রথম প্রেসিডেন্টের সম্মানে রাজধানী আস্তানার নাম পরিবর্তন করে নুর সুলতান রাখা হয়।

আয়তনে বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম দেশ কাজাখস্তান। আর জনসংখ্যায় পৃথিবীর বৃহত্তম মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া।

কাজাখস্তানের মুসলমানরা ধর্মকর্ম পালন করেন বেশ ঘটা করে। ধর্ম শুধু পরিচয়ের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয় বরং ধর্মের প্রভাব দারুণভাবে উপস্থিত। দেশটির গ্র্যান্ড মুফতির নাম আবদুস সাত্তার দারবিসিল।

দেশের উল্লেখযোগ্য মসজিগুলোর অন্যতম হলো- হজরত সুলতান মসজিদ। মসজিদটি রাজধানী নুর সুলতানে (আস্তানা) অবস্থিত। এটি কাজাখস্তানের সবচেয়ে বড় এবং মধ্য এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম মসজিদ। এই মসজিদে একসঙ্গে ৫০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর