মক্কা মোকাররমা (সৌদি আরব) থেকে: নামাজ শেষ। জায়নামাজ গুটিয়ে ব্যবসায়িক কার্যালয়ে ঢুকবেন, এমন সময় দেখা দেশ থেকে আসা অপরিচিত এক হাজী সাহেবের সঙ্গে। নিজ থেকেই জিজ্ঞেস করবেন কুশলাদি। কথা বলতে বলতে হোটেল লবিতে নিয়ে নিজেই চা বা কফি নিয়ে আসবেন। তারপর আলাপচারিতায় কোনো সমস্যার খোঁজ পেলে চেষ্টা করেন দ্রুত সমাধানের।
দরদী এই মানুষটির নাম নূর মোহাম্মাদ ভূঁইয়া (৫৮)। মক্কার সফল হোটেল ব্যবসায়ী। সবাই তাকে চেনেন অসহায় মানুষের সুহৃদ হিসেবে। পবিত্র কাবাকে ঘিরে থাকা মসজিদ আল হারামের খুব কাছেই বুরুজ আল সুলতান হোটেল।
এই হোটেলের পরিচালনা পর্ষদে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত রয়েছেন নূর মোহাম্মাদ ভূঁইয়া। এক কথায় সাদা মনের মানুষ। চট করে আপন করে নেন প্রবাসীদের।
বহু আগে পরিচয় হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে দেখলেন তিনি হজ বা ওমরা করতে মক্কা এসেছেন। ব্যস, নিজ থেকেই তার খোঁজখবর নেন তিনি।
এভাবে দিনে দিনে শত থেকে সহস্র পেরিয়ে অসংখ্য মানুষের আত্মার আত্মীয় হয়ে উঠেছেন নূর মোহাম্মাদ ভূঁইয়া।
তার ভাষায়, হাজিরা মহান আল্লাহর মেহমান। তাদের সঙ্গে থাকেন ফেরেশতা। হাজী সাহেবকে ডেকে নিয়ে যদি একটু ঠাণ্ডা পানি করিয়ে তাদের কুশল জিজ্ঞাসা করি তাতে ক্ষতি কি, বরং আল্লাহ খুশি হন। জীবনে তো এখন আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। কাজের ফাঁকে নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয়। কেউ বা পুরোনো স্মৃতিচারণ করে আমাকে দেখতে আসেন- এটা আমার খুবই ভালো লাগে।
বলছিলেন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার ভাওরকোট ভূঁইয়াবাড়ি গ্রামের সন্তান নূর মোহাম্মাদ ভূঁইয়া। হোটেল ব্যবসায় যুক্ত থেকেও নূর মোহাম্মাদ ভূঁইয়া নিজেকে পরিচয় দেন কর্মি হিসেবে।
প্রকৃতপক্ষে আমরা প্রবাসে আসা মানুষগুলোই তো কর্মীই। প্রত্যেকের কাজের ধরণটা ভিন্ন এই যা- বলেন মি. ভূঁইয়া।
প্রবাসে যেমন জনপ্রিয়, দেশেও অসংখ্য মানুষের ভালোবাসায় আপ্লুত নূর মোহাম্মাদ ভূঁইয়া।
বিশেষ করে দেশে গেলে প্রবাসীদের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলতে তার ডাক পড়ে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর টক শো’তে।
নূর মোহাম্মাদ ভূঁইয়া সোজাসাপ্টা ভাষায় বলেনও বেশ।
হোটেলের নিচে ক্যান্টিন পরিচালনার কাজ করেন আব্দুল মজিদ। নোয়াখালীর সন্তান। দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে এমনটিই দেখছেন নূর মোহাম্মাদ ভূঁইয়াকে।
তার ভাষায়, তিনি মানুষটিই এমন। এই তো চলতি হজ মৌসুমে হোটেলের সামনে দীর্ঘ হয়ে আসা মসজিদুল হারামের নামাজের কাতারে দেখা এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি পুলিশের সিনিয়র একজন এএসপি। স্ত্রী ও দুই ভাইকে নিয়ে এসেছেন হজে।
হজ এজেন্সির প্রতারণায় বেশ বিপাকে পড়েছিলেন তিনি। বিষয়টি জানামাত্র, নিজের হোটেলের পাশে তাদের থাকা এবং খাবারের ব্যবস্থা করে দেন। যেন তারাই নূর মোহাম্মাদ ভূঁইয়া সাহেবের স্বজন। এমনই দরদী আর হৃদয়বান মানুষ তিনি।
এমন অসংখ্য উদাহরণ টানা যাবে উল্লেখ করে আব্দুল মজিদ বলেন, নূর মোহাম্মাদ ভূঁইয়া সাহেবের মমতা আর ভালোবাসাই মানুষকে তার কাছে টেনে আনে। কেবল প্রবাসে নয়, দেশে পরিচিত কেউ সমস্যা পেরেশানে থাকলে তার পাশেও গিয়ে দাঁড়ান নূর মোহাম্মাদ ভূঁইয়া সাহেব।
এভাবেই দিনে দিনে তিনি হয়ে উঠেছেন অসহায় মানুষের সুহৃদ।