ফ্রান্সে আবারও সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। দু’জনকে গলা কেটে হত্যাসহ এ পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ম্যাক্রোঁর বর্ণবাদী সরকার ও কথিত জঙ্গি ইসলামিস্ট- এই দুই অসহিষ্ণু ও এক্সট্রিমিস্ট গ্রুপের মুখোমুখি অবস্থানের জন্য সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতার দেশ ফ্রান্স অসহিষ্ণুতায় আক্রান্ত হয়েছে। সংস্কৃতির পীঠস্থানে এ কারণে আরও জীবননাশের শঙ্কা ও হাঙ্গামার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মানবতাবাদী ও শান্তিকামী মানুষ প্রত্যাশা করছে, চরমপন্থি দুই পক্ষই শান্ত থাকবে। অহিংসার জন্য উগ্রদের অবশ্যই শান্ত ও প্রশমিত রাখতে হবে। বিপদ সঙ্কুল পৃথিবীতে এমনিতেই চলছে বৈশ্বিক মহামারি করোনার তাণ্ডব। এমতাবস্থায় ইসলামের মতো শান্তির ধর্মের নাম ভাঙিয়ে ধর্মের ছদ্মাবরণে পক্ষে ও ধর্ম বিদ্বেষপ্রসূত মনোভাব থেকে বিপক্ষে দাঁড়িয়ে, উসকানি, অবমাননা, অশান্তি ও রক্তপাত ঘটানোর যেকোনো অপচেষ্টা চরমভাবে নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য।
ফ্রান্সে ইসলাম ও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কটূক্তি করা হলো- এমন এক পবিত্র সময়ে, যখন নবীর জন্ম ও মৃত্যুর ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত রবিউল আউয়াল মাস চলছে। বিশ্বের সকল মুসলমান যখন সালাম ও দরূদ শরিফের মাধ্যমে নবীর প্রতি শ্রদ্ধার আনুষ্ঠানিকতায় ব্যস্ত, তখন ইসলামবিরোধী উসকানি সত্যিই বেদনাদায়ক। ফ্রান্সের মতো একটি শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতিমনা দেশে অবিবেচক ও ইসলামবিরোধীরা এমন কাণ্ড করে তারা নিজেদেরকেই ঘৃণিত করেছে।
ইসলামবিরোধীদের শায়েস্তা ও নিন্দা জানাতে সারাবিশ্ব মুখর। কিন্তু সেটাও ইসলামের প্রদর্শিত পথের বাইরে গিয়ে হিংসা ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে করা যৌক্তিক হবে না। কারণ মহানবীর জন্ম ও ওফাত মাসের পটভূমিতে ফ্রান্সের বিতর্কিত কাজের প্রতিবাদও করতে হবে নবীর প্রদর্শিত পথ ও পন্থা অনুযায়ী।
আমরা এক্ষেত্রে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্পষ্ট নির্দেশগুলোর দিকে মনোযোগ দিতে পারি। তিনি বলেছেন,
১. যার দ্বারা মানবজাতির কল্যাণ বৃদ্ধি পায়, মানুষের মধ্যে সে-ই সর্বোত্তম।
২. যে ব্যক্তি মানবজাতির প্রতি দয়াশীল নয়, আল্লাহ্ও তার প্রতি দয়াশীল নন।
৩. প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার জিহ্বা ও হাত থেকে মানবজাতি নিরাপদ থাকে।
৪. এমন সময় সমাগত, যখন নাম ছাড়া ইসলামের ও বাহ্যরূপ ছাড়া কোরআনের কিছু অবশিষ্ট থাকবে না, মুসলমানদের মসজিদগুলো প্রার্থনা ও জ্ঞানবঞ্চিত হবে, জ্ঞানী ব্যক্তিরাই বিশ্বের নিকৃষ্টতম ব্যক্তিতে পরিণত হবে এবং তাদের মধ্য থেকেই কলহ ও শত্রুতা উৎসারিত হয়ে তাদের ওপরই পতিত হবে।
৫. অতিরিক্ত প্রার্থনার চেয়ে অতিরিক্ত জ্ঞানচর্চা ভালো এবং সংযমই ধর্মের ভিত্তি। সারারাত প্রার্থনা করার চেয়ে রাতে এক ঘণ্টা বিদ্যা শিক্ষা দেওয়া ভালো।
৫. এক হাজার মূর্খ উপাসকের চেয়ে একজন জ্ঞানী ব্যক্তি শয়তানের জন্য শক্তিশালী। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জ্ঞানার্জন করা আল্লাহর নির্দেশ।
এসব বাণী 'দ্য সেইংস অব মুহাম্মদ (সা.)' গ্রন্থে রয়েছে, যা আরবি থেকে ইংরেজি অনুবাদ ও সম্পাদনা করেছেন স্যার আবদুল্লাহ সোহরাওয়ার্দী।
মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীসমূহ, যা হাদিস গ্রন্থসমূহে উৎকীর্ণ রয়েছে, তা মানবতা ও কল্যাণের বার্তাবাহী। এ কারণেই মহানবীকে বলা হয় বিশ্বমানবতার কাণ্ডারী ও শান্তিরদূত। চরম বিরূপ অবস্থাতেও তিনি শান্তির সুমহান আদর্শকে সমুজ্জ্বল করেছেন এবং বার বার আক্রান্ত হওয়ায় আত্মরক্ষার্থে একান্ত বাধ্য হয়েই সশস্ত্র প্রতিরোধ করেছেন।
ফলে ইসলামের প্রতিবাদ ও বিরোধিতা শান্তির সীমার মধ্যেই হওয়া বাঞ্ছনীয়। মন্দকে ভালো দিয়ে প্রতিহত করাই নবীর চিরায়ত শিক্ষা। পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসে উসকানি বা হঠকারিতার ফাঁদে পা না দিয়ে নবীজির শান্তিকামী শাশ্বত শিক্ষাকে সমুন্নত করাই মুসলমানদের দায়িত্ব।