শায়খ নুরাইন মুহাম্মদ সিদ্দিক। সুদানের একজন বিখ্যাত কারি। আদদুরি কেরাত বিশেষভাবে তেলওয়াতের জন্য বিশ্বজুড়ে তার খ্যাতি ছিল। তার দরাদি কণ্ঠে একটু ভিন্ন ধাঁচ ও সুরে কোরআন তেলাওয়াত শুনে মুগ্ধ হয়েছেন বিশ্বের অগণিত শ্রোতা, তার তেলাওয়াত শ্রোতার হৃদয়কে গভীরভাবে স্পর্শ করতো। কোরআন তেলাওয়াতের সময় তিনি প্রচুর কাঁদতেন।
নিখুঁত উচ্চারণে হৃদয়গ্রাহী তেলাওয়াতের কারণে সুদানের বাসিন্দা হলেও কোরআন প্রেমিকরা তাকে মনে করতেন ঘরের কাছের মানুষ হিসেবে। সুদানের রাজধানী খার্তুমের মসজিদে তার পেছনে নামাজ পড়তে ভিড় করত প্রচুর মুসল্লি। বিশেষ রমজান মাসে ব্যাপক মানুষের সমাগম হতো। অনেকে শুধু তার তেলাওয়াত শোনার জন্য পুরো রমজান মাস খার্তুমে কাটিয়ে দিতেন।
বিশ্ববিখ্যাত এই কারি শুক্রবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সড়ক দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল করেছেন। আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, দেশটির ওমদুরমান থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে উত্তর রাজ্যের ওয়াদি হালফা থেকে ফেরার পথে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তার সঙ্গে থাকা আরও তিনজন হাফেজে কোরআন ইন্তেকাল করেছেন। তারা হলেন- হাফেজ আলী ইয়াকুব, কারি আবদুল্লাহ আওয়াদ করিম ও মোহান্নাদ আল কিনানি।
আফ্রিকান দেশটির ধর্মমন্ত্রী নাসিরুদ্দিন মুফরেহ এক ফেসবুক পোস্টে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, শায়খ নুরাইন ও তার সঙ্গে থাকা তিন কোরআনে হাফেজের মৃত্যুতে আমি শোকাহত।
শায়খ নুরাইন সিদ্দিক নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় উত্তর কার্ডোফেন রাজ্যের বড় অঞ্চলে কাটায়েবের শায়খদের কাছ থেকে কোরআন হিফজ শুরু করেন। তিনি একাধিক কেরাতে কোরআন তেলাওয়াতে পারদর্শী ছিলেন।
সুদানের পক্ষে তিনি বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। বিশেষ করে মালয়েশিয়া ও দুবাইয়ে। যেখানে তিনি ৮৩টি দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কোরআন তেলাওয়াতে তৃতীয় আন্তর্জাতিক পুরষ্কার লাভ করেন।
শায়খ নুরাইনের মৃত্যুতে সামাজিকমাধ্যমে শোকের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। মোহাম্মদ শাব্বা নামের একজন লিখেছেন, আমার প্রিয় কোরআন তেলাওয়াতকারী শায়খ নুরাইন মুহাম্মদ আর নেই। আমি বিধ্বস্ত ও ব্যথিত।
মুসলিম ডেইলির এক টুইটার পোস্টে বলা হয়েছে, দুঃখজনকভাবে কারি নুরাইন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিন ও জান্নাত নসিব করুন।
কোরআনের কারিমে মধুর তেলাওয়াত শুনিয়ে শায়খ নুরাইন কোটি কোটি মানুষের আত্মার গভীরে ঠাঁই করে নিয়েছেন। তার কণ্ঠের মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন হয়েছেন সবাই। আল্লাহতায়ালাও তাকে রহমতের চাদর দিয়ে আচ্ছাদন করে রাখুন।