প্রতিবন্ধীদের ধর্মীয় ও কারিগরি শিক্ষা দিলে দেশ এগিয়ে যাবে: ধর্ম উপদেষ্টা
ইসলাম
প্রতিবন্ধীদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। তারা সমাজের বোঝা নয়। প্রতিবন্ধীদের ধর্মীয় ও কারিগরি শিক্ষা দিতে পারলে দেশ এগিয়ে যাবে মন্তব্য করেছেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে রাঙামাটির কাউখালি উপজেলার জামিয়া শায়খ জমিরউদ্দীন আল ইসলামিয়া কর্তৃক আয়োজিত শিক্ষা বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, প্রতিবন্ধীদের জন্য ধর্মীয় ও কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। এ জাতীয় শিক্ষা তাদেরকে স্বনির্ভর হতে বিশেষভাবে সহায়তা করবে। তারা সমাজে সম্মানজনকভাবে জীবনযাপন করতে পারবে। এছাড়া এরূপ শিক্ষার মাধ্যমে তাদের মনোবল, দক্ষতা ও নৈতিকতার বিকাশ ঘটবে।
উপদেষ্টা এ মাদ্রাসার ব্রেইল পদ্ধতিতে অন্ধ ছাত্রদের পবিত্র কোরআন, বাংলা, গণিত, ইংরেজি ও সমাজ শিক্ষা দানের কার্যক্রম দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
বিজ্ঞাপন
আল মানাহিল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ হেলাল উদ্দিন বিন জমিরউদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে মাদ্রাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে।
সেমিনার শেষে উপদেষ্টা শায়খ জমিরউদ্দীন জামে মসজিদের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
এর আগে সকালে উপদেষ্টা হাটহাজারি থানা মডেল মসজিদের স্থান পরিদর্শন করেন।
দেশের অন্যতম শীর্ষ দীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম খাদেমুল ইসলাম গওহরডাঙ্গা মাদরাসার ৮৯তম ওয়াজ মাহফিল ও খাদেমুল ইসলাম ইজতেমা বুধবার (২৭ নভেম্বর) ফজরের পর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে।
তিন দিনব্যাপী এই মাহফিল শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) ফজরের নামাজের পর বিশেষ দোয়ার মাধ্যমে শেষ হবে।
মাহফিলে বয়ানের পাশাপাশি ইসলামি বিধি-বিধানের তালিম, কোরআনে কারিমের মশক, অজু-গোসল ও নামাজের প্রশিক্ষণ, জিকির-আজকার এবং নফল ইবাদত-বন্দেগিতে মুসল্লিরা মশগুল থাকবেন। মাহফিলে আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে দেশ-বিদেশের বিখ্যাত উলামায়ে কেরাম, পীর-মাশায়েখরা ওয়াজ-নসিহত পেশ করবেন।
মাহফিলে ঢাকা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, নড়াইল, বরিশাল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, খুলনা, যশোর, মাগুরা ও সাতক্ষীরাসহ দেশের দূর-দুরান্তের বিভিন্ন জেলা থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা অংশ নেবেন। মাহফিল উপলক্ষে এলাকায় উৎসবের আমেজে বিরাজ করছে। গওহরডাঙ্গা ও পাশ্ববর্তী এলকা পরিণত হয়েছে অন্যতম ধর্মীয় তীর্থভূমিতে। সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মানুষ বাৎসরিক এই মাহফিলে অংশ নিয়ে থাকেন।
মাহফিলের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে বিগত বছরে দাওরায়ে হাদিস, হিফজ ও কারিয়ানা বিভাগ সমাপ্তকারী উত্তীর্ণ ছাত্রদের সম্মানসূচক পাগড়ি ও সনদ প্রদান করা হবে। মাহফিল উপলক্ষে খাদেমুল ইসলাম ছাত্র শাখার উদ্যোগে বেশ কয়েকটি বিষয়ভিত্তিক আরবি ও বাংলা ভাষার দেয়ালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
১৯৩৭ সালে ছদর সাহেবখ্যাত বিখ্যাত আলেম, মোজাহেদে আজম আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী (রহ.) মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মাদরাসাটি দীনি শিক্ষা বিস্তারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার পাশাপাশি সমাজের বহুমুখী খেদমত আঞ্জাম দিয়ে আসছে।
বর্তমানে মাদরাসাটি পরিচালনা করছেন আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরীর ছেলে আল্লামা মুফতি রুহুল আমিন। তিনি কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড গওহরডাঙ্গার সভাপতি, খাদেমুল ইসলাম বাংলাদেশের আমির এবং কওমি মাদরাসাসমূহের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়ার প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য।
মাদরাসার নায়েবে মুহতামিম ও ছদর সাহেব হুজুরের পৌত্র মুফতি উসামা আমীন মাহফিলের সার্বিক কামিয়াবির জন্য বিশেষ দোয়ার আবেদন জানিয়েছেন।
সৌদি আরবে হজযাত্রীদের সেবা প্রদানকারী কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশের বেসরকারি হজ এজেন্সিকে চুক্তি করতে নির্দেশনা দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ-১ শাখা হতে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
জারিকৃত পত্রে বলা হয়েছে, সৌদি হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় ২০২৫ সনের হজে মিনা-আরাফাহ ও মুজদালিফায় হজযাত্রীদের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ৩৫টি সার্ভিস কোম্পানিকে অনুমোদন দিয়েছে।
মক্কা-মদিনায় হোটেলে হাজিদের অভ্যর্থনা ও বিদায় জানানো, তাদের পাসপোর্ট সংরক্ষণসহ কোম্পানিগুলোর অধীনে নিয়োজিত মোয়াল্লেমরা মিনা ও আরাফার তাঁবুতে হজযাত্রীদের বিছানা, খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করবে। এ সেবা গ্রহণের জন্য এজেন্সির পছন্দ অনুসারে যেকোনো কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করতে পারবে। অনুমোদিত এ সব কোম্পানির নামের তালিকা Nusuk Masar নামক সৌদি ই-হজ প্লাটফর্মে পাওয়া যাবে।
এ চুক্তি করার সময় কোম্পানির অতীত সেবা প্রদানের সুনাম ও সেবার মান, এদেশের হজযাত্রীদের উপযোগী খাবার সরবরাহের সক্ষমতা এবং মিনা, আরাফা ও মুজদালিফায় হজযাত্রীদের অবস্থানের নিশ্চয়তা সাপেক্ষে চুক্তি করতে পরামর্শ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
এ ছাড়া মন্ত্রণালয় হতে চুক্তিতে বর্ণিত শর্তসমূহ ভালোভাবে দেখে চুক্তি সম্পাদনের কথাও বলেছে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের ৫ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। আগামী বছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে ১০ হাজার সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং বাকিরা যাবেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে।
আলেম, রাজনীতিবিদ ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব মাওলানা আতহার আলী রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে বাদ দিয়ে এদেশের ইতিহাস হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট গঠন এবং সেই নির্বাচনে জাতীয় চার নেতার একজন ছিলেন আতহার আলী (রহ.)। বিগত দিনে তাকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ধর্ম উপদেষ্টা।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের শফিউর রহমান অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত মুজাহিদে মিল্লাত মাওলানা আতহার আলী (রহ.)-এর স্মরণে আলোচনা সভা ও গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মাকতাবাতুল আযহার থেকে প্রকাশিত এই জীবনীগ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় লেখক, ইসলামি স্কলার ও উলামায়ে কেরাম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কিশোরগঞ্জের আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা শাব্বির আহমাদ রশিদ।
মাওলানা আতহার আলী (রহ.)-এর রাজনৈতিক ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, তার ডায়নামিক নেতৃত্বের কারণে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টে তার দল নেজামে ইসলাম পার্টি থেকে ৩৬ জন প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এটা তার নেতৃত্বের সুফল। মাওলানা আতহার আলী (রহ.)-এর মতো ব্যক্তিরা চলে যাওয়ায় আজ নেতৃত্বের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তাদের মতো লোক আর এখন তৈরি হয় না।
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, আমাদের জাতীয় ইতিহাসে মাওলানা আতহার আলী (রহ.)-এর ওপর রচিত বই পথ দেখাবে। এই বই ছাড়া স্বাধীনতার ইতিহাস পূর্ণাঙ্গ হবে না। এই দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, আলেখ্য এই বইয়ে আছে। বইটি আমাদের ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, আতহার আলী (রহ.) ছিলেন একজন অ্যাকটিভ পলিটিশিয়ান। তার বহুমাত্রিকতা আমাদের অবাক করে। আইয়ুব খান, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের সঙ্গে তিনি রাজনীতি করেছেন। এরপরও মাদরাসার মুহতামিম ছিলেন, মসজিদের ইমাম ছিলেন। ছিলেন খানকার পীর। এখনও বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের যে ইতিহাস পড়ানো হয় সেখানে আতহার আলী (রহ.)-এর ভূমিকার কথা রয়েছে।
খালিদ হোসেন বলেন, আতহার আলী সাহেবকে বাদ দিয়ে এদেশের ইতিহাস তৈরি হতে পারে না। তবে অতীতে তার অবদানকে ইতিহাসে খাটো করে দেখানো হয়েছে। আমরা আগামীতে যে ইতিহাস তৈরি করব সেখানে তার ভূমিকা সত্যিকার অর্থে তুলে ধরব।
এ সময় তিনি বইটির রচয়িতা শায়খুল হাদিস মাওলানা শফিকুর রহমান জালালাবাদীকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানান। মাওলানা আতহার আলী (রহ.)-এর ওপর গবেষণা অব্যাহত থাকে সে ব্যাপারে তরুণ গবেষকদের প্রতি আহ্বান জানান ধর্ম উপদেষ্টা।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বদলে গেছে পৃথিবীর চালচিত্র। বাদ যায়নি মক্কা অঞ্চলও। যে কারণে এই সময়েও সৌদি আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টির দেখা মিলছে।
রোববার (২৪ নভেম্বর) সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা নগরীতে বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে।
দেশটির সংবাদ মাধ্যম আল আখবারিয়া জানিয়েছে, বৃষ্টির সময় উমরা পালনকারীরা ইহরাম পরিহিত অবস্থায় পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে আসরের নামাজ আদায় করেছেন। বৃষ্টির সময় তাদের নামাজ আদায় ও তাওয়াফের ছবি এবং ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা গেছে, পবিত্র উমরা পালনকারীরা বৃষ্টির সময় মসজিদে হারামে আসরের নামাজ আদায় করছেন, পবিত্র কাবা তাওয়াফসহ অন্যান্য নফল ইবাদতে মশগুল রয়েছেন। অনেককে এ সময় কান্নাসহকারে হাত তোলে মোনাজাতও করতে দেখা যায়।
মৌসুম পরিবর্তনের এই সময়ে বৃষ্টির বিষয়ে আবহাওয়াবিদরা আগে থেকেই সতর্ক করেছিলেন। মক্কায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখে, মসজিদে হারামের পরিচালনা পরিষদ উমরা পালনকারীদের নিরাপত্তায় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। বিশেষ করে শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের বৃষ্টির সময় মাতাফের (কাবা চত্বর) পরিবর্তে মসজিদে হারামের অংশে তাওয়াফের পরামর্শ দেয়।
সেই সঙ্গে দ্রুত বৃষ্টির পানি নিষ্কাষণে অতিরিক্তি লোক নিয়োজিত রাখা হয়। বৃষ্টির কোনো বিরূপ প্রভাবে যেন উমরাকারীদের কষ্ট না হয়, তাই কর্তৃপক্ষ দ্রুত পানি নিষ্কাষণ থেকে শুরু করে কাবা প্রাঙ্গণ পরিচ্ছন্ন করার কাজ শুরু করে দেন। এ সময় তাওয়াফকারীদের যেন কোনো ধরনের সমস্যা নয়, তাদের ইবাদতে বিঘ্ন না ঘটে- তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেন তারা। সেই সঙ্গে বৃষ্টিজনিত যেকোনো সমস্যার মোকাবেলায় জরুরি চিকিৎসক দলও প্রস্তুত রাখা হয়।