মহররম মাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো, মহররমের ১০ তারিখ বা আশুরার দিনে রোজা রাখা। এ রোজা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ও ফজিলতময়। আশুরার রোজার উৎপত্তি ও তাৎপর্য প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় হিজরত করেন, তখন ইহুদিদেরকে দেখলেন, তারা আশুরার রোজা রাখেন। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘এটা কী?’ উত্তরে তারা বললেন, এটা নেক দিন। এই দিনে আল্লাহতায়ালা বনি ইসরাইলকে তাদের শত্রু (ফেরাউন) থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এতে এদিন হজরত মুসা আলাইহিস সালাম রোজা রেখেছেন। তখন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, হজরত মূসা (আ.)-এর সঙ্গে (কোনো আমলে সম্পৃক্ত হওয়ায়) আমি তোমাদের চেয়ে বেশি হকদার। অতঃপর হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এদিন রোজা রাখলেন এবং এদিনের রোজা রাখতে (সাহাবিদের) নির্দেশ দিলেন।’ –সহিহ বোখারি: ১৮৬৫
অবশ্য আশুরার রোজা মক্কায় থাকাবস্থায়ও হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাখতেন। আর রামাজানের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে আশুরার রোজা ফরজ ছিলো। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর আশুরার রোজা নফল হয়ে যায়। এ সম্পর্কে নিম্নোক্ত বর্ণনা লক্ষণীয়।
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আশুরার দিন জাহেলি যুগে কোরাইশরা রোজা রাখতো। আর হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আশুরার রোজা রাখতেন। অতঃপর যখন তিনি মদিনায় আগমন করেন, তিনি এদিন রোজা রাখেন এবং এদিন রোজা রাখার জন্য নির্দেশ দেন। তারপর যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হয়, তখন আশুরার রোজা ছেড়ে দেন। সুতরাং যার ইচ্ছে হয় সে এ রোজা রাখবে, আর যার ইচ্ছে হয় এ রোজা ছেড়ে দেবে।’ জামে তিরমিজি: ২৩৫
আশুরার রোজার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। এ বিষয়ে সম্পর্কে হাদিসের বর্ণনা হলো, হজরত আবু কাতাদা (রা.) হতে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আশুরার রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর ওপর আশা করি, তিনি বিগত বছরের গুনাহ (সগিরা) ক্ষমা করবেন।’ জামে তিরমিজি: ৭৫২
উল্লেখ্য, শুধু আশুরায় একদিন রোজা না রেখে তার সঙ্গে ৯ তারিখ অথবা ১০ তারিখ মিলিয়ে ২দিন রোজা রাখা বাঞ্ছনীয়। যাতে ইহুদিদের রোজা রাখার সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল না হয়।
এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে রয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আশুরার দিন রোজা রাখলেন এবং রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন, সাহাবারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ দিনটিকে ইহুদি ও খ্রিস্টানরা বিশেষ সম্মান করে। তখন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যখন আগামী বছর আসবে, ইনশাআল্লাহ আমি (আশুরার সঙ্গে) ৯ম তারিখে রোজা রাখবো। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, অতঃপর আগামী বছর তখনও আসেনি যে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওফাত হয়।’ –সহিহ মুসলিম: ১৯২৩
এ ছাড়া পুরো মহররম মাসই রোজা রাখার বিশেষ ফজিলতপূর্ণ আমল। এ সম্পর্কে হাদিস শরিফে রয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা হলো- মহররম মাসের রোজা এবং ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ হচ্ছে তাহাজ্জুদের নামাজ।’ –সহিহ মুসলিম: ২৬৪৫