সমাজের অনেকেই ভাবেন, ইসলামপালন বেশ কঠিন জিনিস। ইসলামপালন করতে হেলে দুনিয়াদারী ত্যাগ করতে হবে। বিষয়টি আসলে এমন নয়। ইসলাম কিংবা ইসলামের কোনো বিধান মানুষের জীবনকে সংকীর্ণ করার জন্য নয়। ইসলামে বিধানগুলো আরোপিত হয়েছে আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশের নিমিত্তে।
মানুষের জীবন স্বাচ্ছন্দ্যময় করার উদ্দেশ্যে ইসলামের বিধিসমূহ দেওয়া হয়েছে। ইসলামে যে জিনিসকে হারাম করা হয়েছে, এর পরিবর্তে উৎকৃষ্ট ও উত্তম কিছু হালাল করে দেওয়া হয়েছে। কিংবা তার বিপরীতে অতীব উত্তম বিকল্প কোনো কিছু পেশ করা হয়েছে। আরও ওই বিকল্পটা এমন, যাদ্বারা একদিকে যেমন সব বিপর্যয় সৃষ্টিকারী জিনিসের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়, তেমনি হারাম জিনিসের ওপর নির্ভরশীলতা শেষ হয়ে যায়।
যেমন, ইসলাম সুদ খাওয়া হারাম করে দিয়েছে। তার পরিবর্তে মুনাফাপূর্ণ ব্যবসা বৈধ করে দিয়েছে। এমনকি সৎ ব্যবসায়ীকে নবী-সিদ্দীক ও শহীদদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
এভাবে ইসলাম জুয়া খেলাকে হারাম করেছে, তার পরিবর্তে ঘোড়া, উট ও তীরের প্রতিযোগিতালব্ধ ধনসম্পদ অর্জনকে বৈধ করেছে। তবে শর্ত হলো- যতক্ষণ পর্যন্ত তা শরিয়তের পরিপন্থী না হয়।
ইসলাম পুরুষদের রেশম ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। তার পরিবর্তে সুতা, পশম, কাতানের বিভিন্ন সৌন্দর্যময় পোশাক বৈধ করেছে। ইসলাম জিনা-ব্যভিচার ও পুংমৈথুন হারাম করেছে। তার পরিবর্তে বিবাহিত স্ত্রীর সঙ্গে বৈধ উপায়ে যৌন সঙ্গম বৈধ করেছে। ইসলাম মাদকদ্রব্য হারাম করেছে। তার পরিবর্তে দেহ ও মনের উপকারী সুস্বাদু পানীয় হালাল করে দিয়েছে। ইসলাম খারাপ ও নিকৃষ্ট ধরণের খাদ্য হারাম করেছে। তার পরিবর্তে উত্তম ও ভালো খাদ্য হালাল করে দিয়েছে। এভাবে উদাহরণ দিতে গেলে প্রচুর উদাহরণ দেওয়া যাবে।
মোটকথা, ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আল্লাহতায়ালা একদিকে মানুষের জন্য কোনো কোনো জিনিস হারাম করেছেন, অন্যদিকে বহু জিনিস হালাল করে জীবনে বিপুল প্রশস্ততা এনে দিয়েছেন। একদিকের দুয়ার বন্ধ করে তিনি অন্যদিকের দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। আসলে ইসলামের বিধি-বিধান আল্লাহতায়ালার আনুগত্য প্রদর্শনের জন্য, মানুষের জীবন সংকীর্ণ করার জন্য নয়।
এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করতে চান; কিন্তু যারা কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তারা চায় তোমরা ভীষণভাবে সত্যপথ বিচ্যুত হও। আল্লাহ তোমাদের ভার লাঘব করতে চান। কেননা মানুষ তো দুর্বলতম সৃষ্টি।’ –সূরা নিসা: ২৭-২৮