কোরআন আসমানি গ্রন্থ। শুধু লিখনীর মাধ্যমে নয়, কোরআন সংরক্ষণের ধারা হিফজ তথা মুখস্থের মাধ্যমে চালু আছে এবং এটা দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে শতাধিক ভাষায় কোরআন মজিদের অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। মদিনায় প্রতিষ্ঠিত ‘বাদশাহ ফাহাদ আল কোরআন একাডেমী’ থেকে প্রতি বছর ২ কোটি ৮০ লাখ কোরআনের কপি ছেপে বিশ্বব্যাপী বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।
ছাপা যন্ত্র প্রেস আবিষ্কারের পরে সর্বপ্রথম ১১১৩ হিজরি সালে জার্মানির হামবুর্গ প্রেসে কোরআন মজিদ ছাপানো হয়, যার একটি কপি দারুল কুতুব মিসরিয়াতে এখনও বিদ্যমান।
এর পর তাতারস্তানে কোরআন শরিফ মুদ্রণ করা হয় ১৮০৩ সালে। তাতারস্তান প্রথম মুসলিম রাষ্ট্র যারা প্রথম কোরআন মুদ্রণ করেন। দেশটির ঐতিহাসিক কাজান শহরে কোরআনটি মুদ্রণ করা হয়।
সম্প্রতি তাতারস্তানের গ্র্যান্ড মুফতি কুমাইল সামিউল্লাহ কাজান ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করতে গিয়ে এ শহরে প্রথম মুদ্রিত কোরআন সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা গর্বিত যে, কাজান শহরে ইসলামি বিশ্বের প্রথম সঠিক মুদ্রিত কোরআন শরিফ প্রকাশিত হয়েছে।’
বিশ্বের প্রথম মুদ্রিত কোরআন প্রসঙ্গে তাতারস্তানের মুফতি বলেন, ‘কোনো ইসলামি রাষ্ট্রের রাজধানীতে প্রথম যে কোরআন প্রকাশ হয়েছিল তা এই কাজান শহরে হয়। তখন কাজান ছিল ইসলামি বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম শহর। যদিও এই শহরটি তৎকালীন রাশিয়ান সম্রাটের অধীনে ছিল এবং তদানীন্তন আরবি বইয়ের মুদ্রণের ক্ষেত্রে অনেক বিধি-নিষেধের মুখোমুখি হতে হয়েছিল।’
তাতারস্তানের মুফতি আরও বলেন, ‘আরবি গবেষণা অনুসারে, বিশ্বের প্রথম মুদ্রিত কোরআন শরিফ ১৫৩৭ সালে ইতালির ভেনিসে প্রিন্ট ও প্রকাশিত হয়েছে এবং তারপরে ১৬৯৪ সালে জার্মানির হামবুর্গে প্রিন্ট ও প্রকাশিত হয়েছে। ১৭৮৭ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে তৃতীয়বারের মতো কোরআন শরিফ প্রিন্ট ও প্রকাশিত হয়েছে। রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে মুদ্রিত কোরআন শরিফটি কাজানের মুফতির তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়। তবে এই সমস্ত পাণ্ডুলিপির বেশ কয়েক স্থানে ত্রুটি ছিল। অর্থাৎ এ সব পাণ্ডুলিপি উসমানি বর্ণমালায় লেখা হয়নি, অথবা আয়াতের মধ্যে কোনো ফাকা স্থান রাখা হয়নি এবং এ সব পাণ্ডুলিপির মধ্যে গুরুতর টাইপোগ্রাফিক ত্রুটি ছিল যা মুসলমানরা তেমনভাবে গ্রহণ করেনি।’
তাতারস্তানের মুফতির দাবি, ‘কাজান শহরে প্রথম সঠিক মুসহাফ প্রকাশিত হয়। এই মুসহাফের প্রচ্ছদে লেখা আছে, এটি ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে কাজান শহরে প্রকাশিত হয়েছে।’