বিশ্বময় মহামারি করোনার পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। অপর দিকে গত ২৪ ঘণ্টায় বারতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। আর মারা গেছে আড়াই হাজারের বেশি মানুষ। আমরা যদি এখনও সচেতন না হই তাহলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বলা কঠিন।
তাই আল্লাহতায়ালা এখনও যাদেরকে সুস্থ রেখেছেন তাদের অনেক বেশি সৃষ্টিকর্তার শুকরিয়া আদায়ের পাশাপাশি বিশেষ ইবাদত-বন্দেগিতে রত হওয়া উচিত।
আল্লাহতায়ালার কৃপায় মাগফিরাতের দশকের রোজা আমরা অতিবাহিত করছি, আলহামদুলিল্লাহ। রোজা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়। ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল ভিত্তির তৃতীয়টি হলো রোজা। ইসলামী বিধান অনুসারে প্রাপ্তবয়স্ক এবং সুস্থ প্রত্যেক মুসলিমের জন্য রমজান মাসের রোজা রাখা ফরজ।
বিভিন্ন ধর্মে উপবাস প্রথা প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে চলে আসছে। তবে সর্বশেষ ও পরিপূর্ণ ধর্ম ইসলামে এর ধরনটা একটু ভিন্ন। ইসলামের মূল উৎস কোরআন করিম। এতে উদাত্ত কন্ঠে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘হে যারা ঈমান এনেছ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে করে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পার’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৩)। উল্লিখিত আয়াত থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায়, কেবল ইসলামের সাথেই রোজার সম্পৃক্ততা সুনির্দিষ্ট নয়, বরং কোরআন করিম অবতীর্ণ হওয়ার পূববর্তী মাজহাবগুলোতেও রোজাকে একটি ধর্মের বিশেষ অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
পবিত্র কোরআনের উক্ত আয়াত থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয় তাহলো ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসাবে রোজা অর্থাৎ উপবাসব্রত পালন করা কোন না কোন আকারে সকল ধর্মেই ছিল, আছে। অধিকাংশ ধর্মগুলোতে এবং নিম্ন, মধ্য ও উচ্চ শ্রেণির কৃষ্টির মধ্যে, উপবাসব্রত একটি সাধারণভাবে নির্দেশিত ব্যাপার। আর যেখানে এই ধরণের নির্দেশ নেই, সেখানেও প্রাকৃতিক প্রয়োজনের তাগিদে অনেকেই উপবাস করে থাকেন।
ইসলাম ধর্মে রোজার গুরুত্ব এ কারণেই অত্যধিক যে, রোজা মানব হৃদয়ে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, ভক্তি ও তাকওয়ার মান বৃদ্ধি করে এবং রোজাদারের যাবতীয় পাপ মোছন করে জান্নাত লাভের নিশ্চয়তা প্রদান করে।
যেভাবে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে-হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি বিশ্বাস এবং আন্তরিকতা আর উত্তম ফল লাভের বাসনায় রমজান মাসে রোজা রাখে, তার পূর্বের সর্বপ্রকার পাপ ক্ষমা করা হবে’ (বোখারি ও মুসলিম)।
উপরোক্ত বিশ্লেষণের দ্বারা একথা সুস্পষ্টভাবে প্রতিপন্ন হয় যে, কোরআন করিমের সুরা বাকারার ১৮৩ আয়াতটি ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত। তবে ইসলাম ধর্ম এই উপবাস ব্রতের মধ্যে নবরূপ ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য তুলে ধরেছে। ইসলাম পরিপূর্ণ ধর্ম। তাই ইসলামেই রোজাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ণ করে একে পালনের জন্য ফরজ করা হয়েছে এবং এর প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে রমজানের গুরুত্ব উপলব্ধি করে রোজা রাখার তৌফিক দিন। সেই সাথে আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে তার রহমতের বারি ধারায় সিক্ত করুন, আমিন।
লেখক: ইসলামী গবেষক ও কলামিস্ট, ই-মেইল- masumon83@yahoo.com