মহামারি করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন মৃত্যু সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে সংক্রমিত আরও ৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় করোনায় সংক্রমিত ৫ হাজার ৭২৭জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। বুধবার (২৩ জুন) স্বাস্থ্য অধদিফতররে অতরিক্তি মহাপরচিালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসমিা সুলতানা স্বাক্ষরতি এক সংবাদ বজ্ঞিপ্ততিে এ তথ্য জানানো হয়।
এ মুহূর্তে করোনা প্রতিরোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থেকে নিজেকে জীবানুমুক্ত রাখা। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশেষভাবে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। ইসলাম এমন একটি পরিপূর্ণ ধর্ম যেখানে ছোট থেকে ছোট বিষয় সম্পর্কেও বিধি বিধান রয়েছে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। শুধু বাহ্যিক পরিচ্ছন্নতার কথা ইসলাম বলে না বরং অভ্যন্তরীণ পরিচ্ছন্নতার শিক্ষাও দেয়। যিনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং পবিত্রতা অবলম্বন করে জীবন পরিচালনা করেন আল্লাহতায়ালা তাকে ভালোবাসেন।
যেভাবে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং পবিত্রতা লাভে সচেষ্টদেরও ভালোবাসেন’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২২২)।
প্রকৃত পক্ষে মানুষ আল্লাহতায়ালার প্রেমিক তখনই হয় যখন তওবা ইস্তেগফারের মাধ্যমে নিজের বাহ্যিক পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ পরিচ্ছন্নতার প্রতিও দৃষ্টি দেয়। ঈমানের দাবি করার পরে নিজেদের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ পরিচ্ছন্নতার প্রতি দৃষ্টি দেয়া মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেকের কর্তব্য, যেন আমাদের আত্মা ও দেহ একযোগে আল্লাহতায়ালার প্রেম ভালোবাসাকে আকৃষ্ট করতে পারে।
মহানবী (সা.) যেমন নিজে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতেন তেমনি সকলকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকারও নসীহত করতেন। হজরত আবু মুসা আশআরী (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আত্তুহুরু শাতরুল ঈমান’ অর্থাৎ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্রতা অবলম্বন করা ঈমানে অঙ্গ (মুসলিম, কিতাবুত তাহারাত, বাব ফাযলু ওয়াযু)। উল্লিখিত হাদিস থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়, একজন মোমিনের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি দৃষ্টি দেয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। শুধু নিজেকে পরিষ্কার রাখলেই চলবে না বরং চারপাশের পরিবেশকেও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
বর্তমান করোনাভাইরাসের আতঙ্কে আমরা সবাই যেখানে আতঙ্কিত সেখানে শুধু নিজের ঘর আর নিজেকে পরিষ্কার রাখলেই চলবে না বরং পুরো পরিবেশের নিরাপত্তার চিন্তাও আমাকে করতে হবে। আশপাশের পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখা আপনার আমার সবার কর্তব্য। সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাও আমার দায়িত্ব।
এছাড়া বর্তমানে আমরা যে যেখানেই অবস্থান করছি আমাদের উচিত সেখান থেকে অন্যত্র না যাওয়া। কেননা এ বিষয়ে মহানবীর (সা.) কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
হাদিসে এসেছে মহানবী (সা.) বলেছেন- ‘যখন কোনো এলাকায় মহামারি ছড়িয়ে পড়ে তখন যদি তোমরা সেখানে থাকো তাহলে সেখান থেকে বের হবে না। আর যদি তোমরা বাইরে থাকো তাহলে তোমরা সেই আক্রান্ত এলাকায় যাবে না।’ (বোখারি, মুসলিম)
কতইনা চমৎকার শিক্ষা মহানবী (সা.) আমাদেরকে দিয়েছেন। এর ওপর আমল করা বর্তমান সময়ের জন্য আমাদের মূল কাজ।
আপনি আমি গ্রামে বা শহরে যেখানেই থাকি না, আপনার আমার সবার উচিত হবে পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। তাই আসুন, নিজে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি এবং অন্যকে উৎসাহিত করি।
আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে ক্ষমা করে বিশ্বকে মহামারি করোনা থেকে রক্ষা করুন, আমিন।
লেখক: ইসলামী গবেষক ও কলামিস্ট, ই-মেইল- masumon83@yahoo.com