সমাজসেবায় অসামান্য অবদানের জন্য পদ্মশ্রী পুরস্কার গ্রহণ করেছেন ভারতের উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা শরিফ চাচা নামে খ্যাত মোহাম্মদ শরিফ। ৮ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছ থেকে তিনি এই পুরস্কার গ্রহণ করেন।
পদ্মশ্রী পুরস্কার ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা। শিল্পকলা, শিক্ষা, বাণিজ্য, সাহিত্য, বিজ্ঞান, খেলাধুলা, সমাজসেবা ও সরকারি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়।
২০২০ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে মোহাম্মদ শরিফের নাম ঘোষণা করা হয়। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে গত বছর এ অনুষ্ঠান স্থগিত রাখা হয়।
ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যার বাসিন্দা ৮৩ বছর বয়সী মোহাম্মদ শরিফ। সবার কাছে তিনি শরিফ চাচা নামেই পরিচিত। আগে তিনি সাইকেল মেরামতের কাজ করতেন। ২৯ বছর আগে ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময় শরিফের বড় ছেলে মোহাম্মদ রইস খান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার শিকার হন। রইস খান ছিলেন একজন রসায়নবিদ। সুলতানপুরে যাওয়ার পথে তাকে মেরে ফেলে দাঙ্গাবাজরা। অনেক চেষ্টা করেও ছেলেন লাশ খুঁজে পাননি। নিজের ছেলের লাশ দাফন করতে না পারার বেদনা ভুলতে শুরু করেন অন্যদের লাশ সৎকার। গত তিন দশকে তিনি হাজার হাজার অজ্ঞাত মরদেহ কারও দাবি ছাড়াই শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছেন। ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের দাবি তিনি ২৫ হাজারের বেশি লাশের সৎকার করেছেন।
মুসলমান, হিন্দু, শিখ ও খ্রিস্টান যেকোনো ধর্মের মরদেহের শেষকৃত্য সম্পাদন করেন। যথাযথ সম্মান দিয়ে লাশ দাফন কিংবা দাহ কাজ করেছেন।
সাধারণত ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কেউ লাশ দাবি না করলে পুলিশ ওই লাশের শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে মরদেহ হস্তান্তর শুরু করে। তার এমন মহৎ উদ্যোগ সবাইকে আলোড়িত করে।
জন্মের পরই মাকে হারান মোহাম্মদ শরিফ। বড় হয়েছেন দাদা-দাদীর কাছে। তাকে স্কুলে পাঠানোর সাধ্য তাদের ছিল না। খুব অল্প বয়সে তাকে কাজে নেমে পড়তে হয়। কিভাবে বাইসাইকেল সারাই করতে হয়, সেই কাজ শিখেছিলেন।
লাশের সৎকারের পাশাপাশি তিনি সাইকেল মেরামতের দোকানটিও চালাতেন। ওই আয় দিয়ে তার পরিবার চলে। প্রথম দিকে লাশ সৎকারের জন্য কেউ কোনো খরচ দিতো না। তখন লাশ বহনের জন্য তিনি নিজ অর্থায়নে চার চাকার একটি ঠেলাগাড়ি কেনেন। পরে অবশ্য বিভিন্ন সংস্থা, ব্যক্তি তার উদ্যোগে এগিয়ে আসে।