শেষ হলো ২৫ দিনব্যাপী ইসলামি বই মেলা। শুরুর দিকে খুব বেশি ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি না থাকলেও শেষ সময়ে জমে ওঠে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ চত্বরে ইসলামি বই মেলা। শেষ দিকে ঢাকা ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে মেলায় এসেছেন বই প্রেমীরা। এবার মেলা নিয়ে ভিন্ন উচ্ছ্বাস দেখা গেছে অনেকের মাঝেই।
শুক্রবার (১২ নভেম্বর) মেলার শেষ দিন সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ায় বায়তুল মোকাররমের মেলা চত্বরে ছিল উপচে পড়া ভিড়। গভীর রাত পর্যন্ত চলে বই কেনাবেচা। এবার বই মেলায় ব্যাপক সাড়া মেলায় প্রকাশক-বিক্রেতা ও আয়োজকেরা খুশি। নতুন নতুন বই পাওয়ায় খুশি ক্রেতারাও।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে গত ১৯ অক্টোবর থেকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ চত্বরে ইসলামি বই মেলার আয়োজন করা হয়। এবারের বই মেলায় ৩২টি প্রতিষ্ঠান মোট ৬৩টি স্টল দেয়। প্রথমে মেলার সময়কাল পক্ষকালব্যাপী হলেও পরে প্রকাশকদের চাহিদার কারণে আরও ১০ দিন বাড়িয়ে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত করা হয়। সে অনুযায়ী শুক্রবার ছিল মেলার শেষ দিন। আয়োজনের প্রতিদিনই বেলা গড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেলায় ভিড় জমাতে থাকে বই প্রেমীরা। বিশেষত প্রতিদিনই বেলা ৩টার পর পাঠকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছিল বই মেলা প্রাঙ্গণ। পাঠকের উপচে পড়া ভিড়ে ব্যস্ততার মধ্যে ছিলেন স্টলের বিক্রেতারা। ইসলামি বই মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিটি প্রকাশক ও প্রকাশনীর কর্তা ব্যক্তিরা এজন্য বেশ খুশি।
শেষ দিন ছিল ক্রেতাদের অনেক সমাগম। নারী-পুরুষ থেকে সব বয়সী মানুষই মেলায় এসেছেন। প্রতিটি স্টলের সামনেই ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। বিশেষ করে এবারের মেলায় যুবকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বিভিন্ন মাদরাসা ও স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরাও মেলায় বই কিনতে আসে। মেলায় শিশুদের উপযোগী বইও এনেছেন বিক্রেতারা। সেসব স্টলে অভিভাবকদের ভিড় করতে দেখা যায়।
সারা বছরের তুলনায় এ বছর কেবল বই মেলায় তিনগুণের বেশি বই বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছে স্টলগুলোর বিক্রেতারা। মেলায় ক্রেতা সমাগম বেশি হওয়ায় খুশি ইসলামিক ফাউন্ডেশনও। ইফার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক ড. আব্দুস সালাম শেষ দিনের বিকেলে মেলা চত্বরে আসেন। তিনি ঘুরে ঘুরে মেলার স্টল পরিদর্শন করেন।
করোনার কারণে গত বছর মেলার আয়োজন করা যায়নি। এজন্য এ বছর মেলায় ক্রেতা উপস্থিতি বেশি হয়েছে বলে সবাই মনে করছেন। সেই সঙ্গে ইসলামি বইয়ের প্রতি মানুষের চাহিদা বাড়ছে। ইসলামি বইমেলা নিয়ে পাঠক, প্রকাশক ও দর্শনার্থীদের উচ্ছ্বাস দেখে মেলা বিষয়ে ১০টি প্রস্তাবনার কথা জানিয়েছে তরুণ লেখকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম। প্রস্তাবনাগুলো হলো-
১. ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক ইসলামি বই মেলা পুরো রবিউল আউয়াল মাসব্যাপী আয়োজন করা।
২. মেলার স্থান-পরিধি আরও সম্প্রসারিত করা।
৩. ইসলামি ধারার যত অভিজাত ও প্রসিদ্ধ প্রকাশনী আছে সবগুলোকে মেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া।
৪. মেলা চত্বরে লেখক কর্নার বা লেখক মঞ্চ রাখা।
৫. নতুন প্রকাশিত বইয়ের মোড়ক ও পাঠ উন্মোচনের জন্য জায়গা রাখা।
৬. শিশুতোষ বইয়ের আলাদা কর্নারের ব্যবস্থা
৭. সপ্তাহের অন্তত এক দিন শুধু নারী ও শিশুদের জন্য নির্ধারণ করা। (সেদিন মাহরাম পুরুষদের নিয়ে নারীরা মেলায় আসবেন)।
৮. মেলার প্রচার-প্রচারণায় কর্তৃপক্ষ আরও জোরাল ভূমিকা পালন করা।
৯. মিডিয়া সেলের ব্যবস্থা রাখা।
১০. তথ্য কেন্দ্র রাখা।
গত ৫ নভেম্বর, শুক্রবার সন্ধ্যায় মেলা চত্বর থেকে এক ফেসবুক লাইভে লেখক ফোরাম কর্তৃপক্ষ এ প্রস্তাবনার কথা জানান।