কয়েক ডজন মুসলান যুবককে জোর করে দাড়ি কামাতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে উজবেকিস্তান পুলিশের বিরুদ্ধে। দেশটির রাজধানী তাসখন্দ থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ইয়াঙ্গিউল শহরে এ ঘটনা ঘটে। সংবাদমাধ্যম রেডিও ফ্রি ইউরোপের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইয়াঙ্গিউল শহরে পুলিশ পুরুষদের ডেকে নিয়ে তাদের দাড়ি কামানোর জন্য বাধ্য করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক অধিকারকর্মী বলেন, গত এক মাসে শুধুমাত্র ইয়াঙ্গিউলেই ২২ জন পুরুষের দাড়ি কামিয়েছে পুলিশ। সেখানে শুধুমাত্র ধার্মিক পুরুষদেরই দাড়ি কামাতে বাধ্য করা হয়।
তবে ভুক্তভোগী ওই যুবকরা বলছে, যারা ফ্যাশনের জন্য দাড়ি রেখেছে পুলিশ তাদের টার্গেট করে না। তারা শুধু মুসলমানদের টার্গেট করে।
ইয়াঙ্গিউলের এক বাসিন্দা বলেন, ‘পুলিশ বলছে, আমাদেরকে দেখতে সন্ত্রাসীদের মতো দেখাচ্ছে। আমরা আমাদের ঐতিহ্য এবং মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত অনুসারে দাড়ি বড় করেছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের অধিকার লঙ্ঘন করেছে।’
তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হচ্ছে, কিছু নাগরিককে তাদের আইডি কার্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ চেহারা রাখার জন্যই দাড়ি কামানো ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর বেশি কিছু নয়।
মধ্য এশিয়ার একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র উজবেকিস্তান। ১৯২৪ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্গত ছিল। ১৯৯১ সালের ৫ ডিসেম্বর গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে উজবেকিস্তান দেশের জন্ম হয়।
উজবেকিস্তানের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর প্রধান ধর্ম ইসলাম। সেখানে মুসলিম ৮৮ শতাংশ (বেশিরভাগ সুন্নি), ইস্টার্ন অর্থডক্স ৯ শতাংশ ও অন্যান্য ৩ শতাংশ। উজবেকিস্তান বহু মুসলিম মনীষীর স্মৃতিধন্য দেশ। ইমাম বুখারি, ইমাম নাসাঈ ও ইমাম তিরমিজি (রহ.)-এর বহু স্মৃতি জড়িয়ে আছে এ দেশে। বিখ্যাত ঐতিহাসিক আলবেরুনি উজবেকিস্তানের মানুষ ছিলেন।
১৯৯১ সালের ৫ ডিসেম্বর স্বাধীন উজবেকিস্তানের জন্ম হয়। দেশটি স্বাধীন হলেও সোভিয়েত আমলের কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম সেক্রেটারি ইসলাম করিমভ ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দ থেকে উজবেকিস্তানের শাসন ক্ষমতা ধরে রাখেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি স্ট্যালিনবাদী মানসিকতা নিয়ে দেশ পরিচালনা করেন। ১৯৯৯ সালে এক আদেশে তিনি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেন। ইসলামপন্থীদের ওপর চলতে থাকে বেপরোয়া নির্যাতন, ধরপাকড় ও নিগ্রহ। তার আমলে দেশটি ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতীক’ হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃতি পায়। নিপীড়নের ভয়াবহতায় নিজেই নিজের রেকর্ড ভাঙতেন করিমভ। তিনি দুই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ফুটন্ত পানিতে ফেলে সিদ্ধ করে মেরেছেন বলে জানান দেশটিতে নিযুক্ত সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ক্রেইগ মারি। এমনকি করিমভের নিপীড়ন থেকে রক্ষা পাননি তার সম্ভাব্য উত্তসূরি বড় মেয়ে গুলনারা। টুইটারে সরকারের সমালোচনা করায় তাকে ২০১৪ সাল থেকে গৃহবন্দি করে রেখেছে করিমভ সরকার। মা ও ছোট বোনের কড়া সমালোচক গুলনারা তার বাবা করিমভকে স্ট্যালিনের সঙ্গে তুলনা করেন। ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ করিমভ মারা গেছেন।
উজবেকিস্তানের মুসলমানরা তাদের হারানো ঐতিহ্য ও অধিকার ফিরে পেতে প্রাণান্তকর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।