মিডিয়া ইসলামের খুব বেশি সমালোচনা করে, ক্ষেত্রবিশেষ অযাচিত রিপোর্ট করে, এ অভিযোগের ভিত্তি আছে বলে স্বীকার করেছেন সর্বাধিক বিক্রিত ব্রিটিশ জাতীয় সংবাদপত্র সানডে টাইমস সম্পাদক এমা টাকার।
তিনি বলেছেন, ব্রিটিশ সংবাদপত্রগুলো মুসলমানদের নিয়ে তাদের কাভারেজে ভুল করেছে। তিনি এমন সময় এই কথা বললেন, যখন ব্রিটেনের মুসলিম কাউন্সিলের একটি রিপোর্টের মাধ্যমে এটা প্রকাশিত হতে যাচ্ছে যে, ‘ব্রিটিশ মিডিয়া ইসলামের খুব বেশি সমালোচনা করে থাকে।’
এমা টাকার ওই রিপোর্টকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘রিপোর্টে গণমাধ্যমের সমালোচনা রয়েছে এটা যেমন তিনি জানেন, তেমনি তার নিজের পত্রিকাও যে সেক্ষেত্রে বাদ যায়নি সেটাও তিনি জানেন।’
তিনি বলেন, ‘ওই (রিপোর্টের) সমালোচনাগুলোর মধ্যে কিছু কিছু বৈধ। কিছুগুলোর ব্যাপারে আমি বিনীতভাবে একমত নই। সব, যদিও, দরকারি। সেই বিস্তৃত পাঠকদের সেবায় এগিয়ে যেতে, আমরা ওটার প্রতিটি অংশের মতামত শুনতে চাই।’
টাকার আরও জানান, তার সংবাদপত্রে আরও বৈচিত্র্যময় কর্মী নিয়োগ করতে হবে, যাতে পত্রিকাটি ইসলাম নিয়ে তার কাভারেজ উন্নত করতে পারে এবং স্পষ্ট করে বলবে যে, ‘কখনও কখনও আমরা বিষয়গুলোকে ভিন্নভাবে দেখবো।’
গত বছর পত্রিকাটির সম্পাদকের দায়িত্ব লাভ করা টাকার বলেন, ‘এই ধরনের একটি প্রতিবেদনে অবশ্যই অতীতের ওপর ফোকাস থাকবে। আমার কাজ ভবিষ্যতের দিকে মনোনিবেশ করা। আমি চাই আমাদের কাভারেজ ন্যায্য কিন্তু নির্ভীক হোক। আমাদের কর্মীরা শক্তিশালী কিন্তু দায়িত্বশীল হোক।’
প্রভাবশালী ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ান জানায়, ব্রিটেনের মুসলিম কাউন্সিলের একটি প্রকল্প ‘সেন্টার ফর মিডিয়া মনিটরিং’ ওই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। ২০১৮ সালের শেষ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ব্রিটিশভিত্তিক সংবাদ প্রদানকারীদের দ্বারা প্রকাশিত ৪৮,০০০টি অনলাইন নিবন্ধ বিশ্লেষণের পর এর গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেন যে, ৫৯% ক্ষেত্রেই নেতিবাচক আচরণ বা গুণাবলীর সঙ্গে মুসলিম কিংবা ইসলামকে যুক্ত করা হয়েছে।
অন্যদিকে, সাধারণভাবে ডানপন্থী প্রকাশনাগুলো বামপন্থী প্রকাশনাগুলোর চেয়ে ইসলাম সম্পর্কে বেশি সমালোচনা করেছে। স্পেক্টেটরে মুসলমানদের সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি নিবন্ধ (৩৭%) ছিল যাকে ‘বিরোধী’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। দ্য নিউ স্টেটসম্যানের নিবন্ধ আনুপাতিকভাবে সবচেয়ে বেশি (১৬%) মুসলমানদের ‘সমর্থক’ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
মিডিয়া মনিটরিং সেন্টারটির প্রতিষ্ঠাতা মিকদাদ ভার্সি ব্রিটিশ মিডিয়া মুসলিমদের বর্ণনার জন্য যে ধরনের ভাষা ব্যবহার করেন, তা পরিবর্তনের জন্য বহু বছর ধরে চাপ দিয়ে আসছেন। তিনি নিয়মিত ‘প্রেস রেগুলেটর ইপসো’ ব্যবহার করে ইসলাম সম্পর্কে করা রিপোর্ট সংশোধনের জন্য চাপ দিয়ে থাকেন। সম্প্রতি তিনি লেখক এড হোসেনের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মানহানির মামলা করেছেন।
সপ্তাহের শুরুতে, স্পেক্টেটর কলামিস্ট চার্লস মুর রিপোর্ট প্রচারের জন্য ভার্সির সঙ্গে কথা বলতে রাজি হওয়ার জন্য টাকারের সমালোচনা করেন। মুর দাবি করেন, ভার্সি ‘মুসলিম সম্পর্কিত বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ আচরণের জন্য তদবির’ করেন এবং ইসলাম সম্পর্কে যা লেখা যেতে পারে তা নিয়ন্ত্রণ করে ‘মুক্ত গণমাধ্যমকে অসম্ভব করে তোলার’ চেষ্টা করছেন।
রিপোর্টের লেখকরা বলেছেন যে, তারা মুসলমানদের কোনো সমালোচনা করা হবে না, এমন কাভারেজ চান না। তবে তারা ব্রিটিশ মিডিয়ায় প্রতিবেদনের মান উন্নত করতে চান।