টাঙ্গাইলের ২০১ গম্বুজ মসজিদে সাউন্ড সিস্টেম উপহার হিসেবে দিয়েছে ঢাকাস্থ চীন দূতাবাস। মসজিদে উন্নতমানের সাউন্ড সিস্টেম স্থাপনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সরবরাহ করেছে।
শনিবার (১১ ডিসেম্বর) বিকাল ৫টায় সাউন্ড সিস্টেমের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ গ্রহণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য আবদুল হান্নান ও আবদুল করিম।
মসজিদ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ২০১ গম্বুজ মসজিদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মসজিদ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ঢাকাস্থ চীন দূতাবাস কর্তৃপক্ষ। তারা মসজিদের মসুল্লিদের নামাজের সুবিধার্থে সাউন্ড সিস্টেম উপহার দেওয়ার আগ্রহ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার সাউন্ড সিস্টেমের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ মসজিদে পাঠানো হয়।
সাউন্ড সিস্টেমের যন্ত্রাংশগুলোর মধ্যে রয়েছে, ১ সেট হাই-পারফরমেন্স মিক্সার, ১ সেট ওয়্যারলেস মাইক্রোফোন, ২০ সেট কলাম স্পিকার, ২০ সেট ওয়াল স্পিকার, ২ সেট মাইক্রোফোন ষ্ট্যান্ড, ৫ সেট মাইক্রোফোন, ১ সেট হ্যান্ডগ্রীপ মেগাফোন, ১৬ সেট হর্ন, প্রয়োজনীয় ক্যাবল ও অন্যান্য এক্সেসরিজ।
উপহার পেয়ে ২০১ গম্বুজ মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, মসজিদের নির্মাণ কাজে সবার অংশগ্রহণ মসজিদের অবশিষ্ট নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন হতে সহায়তা করবে। সাউন্ড সিস্টেম উপহার দেওয়ার জন্য তিনি চীন দূতাবাসের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও গনচীনের জনগণকে ধন্যবাদ জানান।
২০১ গম্বুজ মসজিদটি টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার ১০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে নগদা শিমলা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামে অবস্থিত। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয়। নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের মা রিজিয়া বেগম।
নির্মাণাধীন মসজিদটিতে ২০১৮ সাল থেকে পবিত্র ঈদের নামাজ আদায় শুরু হয়েছে। পবিত্র শবেবরাত ও শবেকদর উপলক্ষে ওয়াজ ও দোয়া মাহফিলের কার্যক্রমও চলে। মসজিদের বাম পাশে মাজারের মতো একটি স্থাপনা রয়েছে। সেখানে একজনের কবর দেওয়ার মতো জায়গা ফাঁকা পড়ে আছে। মসজিদের নির্মাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের এখানে সমাহিত হওয়ার কথা রয়েছে।
মসজিদ সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ৪৫১ ফুট উচ্চতার একটি বিশাল বড় মিনার তৈরি করা হয়েছে। প্রায় ৫৭ তলা উঁচু ভবনের সমান এই মিনারের ৫০তলা পর্যন্ত থাকবে লিফট সুবিধা। নাম হবে রফিকুল ইসলাম টাওয়ার। নির্মাণ শেষ হলে দিল্লির কুতুব মিনারকে পেছনে ফেলবে রফিকুল টাওয়ার। কুতুব মিনার ২৪০ ফুট উঁচু।
মসজিদটির পশ্চিমাংশে উত্তর-দক্ষিণে বয়ে গেছে যমুনার শাখা ঝিনাই নদী। এটি মসজিদের সৌন্দর্যকে দিয়েছে ভিন্নমাত্রা। মসজিদের উত্তর দিকে অবস্থিত অজুখানা। বিশাল বড় অজুখানায় বসে অজু করার জন্য ছোট ছোট চেয়ারের মতো ১১৬টি আসন রয়েছে। অজুখানার ছাদ ছাইরঙা ক্ষুদ্রকায় পাথরের মতো মোজাইক করা। তাতে মধ্যম গভীর পানির আধার। সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য অজুখানাটি সামান্য বাঁকা করে নির্মাণ করা হয়েছে।
দ্বিতীয়তলায় প্রধান দরজা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে ৫০ মণ পিতল। এখানে একসঙ্গে ১৫ হাজার মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন। দ্বিতল এই মসজিদটি নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে বিভিন্ন ধরনের উন্নতমানের টাইলস- যা মিসর থেকে আনা হয়েছে। মসজিদের অভ্যন্তরের দেয়ালের চারদিকে একসারি টাইলস লাগানো হয়েছে, যাতে খণ্ড খণ্ড করে পুরো পবিত্র কোরআন লিপিবদ্ধ। মেহরাবের পাশে লাশ রাখার জন্য হিমাগার তৈরি করা হয়েছে। এখানে থাকবে জানাজার নামাজের ব্যবস্থা। প্রায় ১৫ বিঘা জমির ওপর নির্মাণাধীন এই মসজিদটি সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হলেও এতে সহস্রাধিক বৈদ্যুতিক পাখা যুক্ত করা হবে।
মসজিদের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ একই। মানে ১৪৪ ফুট করে। দৃষ্টিনন্দন মসজিদটির ছাদের মূল গম্বুজের উচ্চতা ৮১ ফুট। এই গম্বুজের চারপাশ ঘিরে ১৭ ফুট উচ্চতার আরও ২০০ গম্বুজ তৈরি করা হয়েছে। মসজিদের চার কোনায় রয়েছে ১০১ ফুট উঁচু চারটি মিনার। এছাড়া ৮১ ফুট উচ্চতার আরও চারটি মিনার পাশাপাশি স্থাপন করা হয়েছে। গম্বুজ আর মিনারগুলোতে দৃষ্টিনন্দন উন্নতমানের টাইলস বসানো।
ধর্মপ্রাণ মুসলমানসহ ভ্রমণপিপাসু অসংখ্য মানুষ এটা দেখার জন্য ও সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রতিদিন ছুটে আসেন এখানে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে কিছুদিন মসজিদটি বন্ধ ছিল। আবার তা চালু হয়েছে এবং যথারীতি নামাজও আদায় হচ্ছে। মুখরিত হয়ে উঠেছে দর্শনার্থীদের ভিড়ে।
মসজিদটির উত্তর-পশ্চিম দিকে একটি ছয়তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে বিনামূল্যে হাসপাতাল, এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা থাকবে। এই বিল্ডিংয়ের ছাদে উঠলে মসজিদ ও নদীর সৌন্দর্য পুরোপুরি উপভোগ করা যায়।
মসজিদের পাশে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা গাড়ি রাখার স্থান। মসজিদের সামনে রয়েছে কয়েকটি দোকান। খাবার হোটেলসহ আরও আছে শো-পিস, আচার, খেলনাসহ বেশ কিছু জিনিসপত্রের দোকান। ছোটদের জন্য আছে ট্রেন, নাগরদোলা, নৌকা দোলনা ইত্যাদি খেলার ব্যবস্থা।
এলাকাবাসীর প্রত্যাশা, পুরোপুরি নির্মাণ কাজ শেষ হলে গিনেস রেকর্ড বুকে স্থান করে নেবে ২০১ গম্বুজ মসজিদ। এই মসজিদ ঘিরে আশপাশে তৈরি হচ্ছে ফাইভস্টার হোটেল, আবাসিক হোটেল, মার্কেট, হেলিপ্যাডসহ অত্যাধুনিক সব বিল্ডিং।
মসজিদের ব্যয় ধরা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। এই মসজিদের কারুকাজ অন্যসব মসজিদের তুলনায় একটু ভিন্নতর।