সৌদি আরবে তাবলিগ জামাত নিষিদ্ধ, সৌদি আরবের মসজিদে একযোগে তাবলিগের বিরুদ্ধে খুৎবা প্রদান এবং তাবলিগকে সন্ত্রাসের উৎস বলে অভিহিত করার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম মুফতি আবুল কাসেম নুমানি।
তাবলিগ জামাতের বিরুদ্ধে সৌদি সরকারের এমন মনোভাবের নিন্দা জানিয়ে বিশ্ববিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেওবন্দ কর্তৃপক্ষ বলেছেন, ‘সৌদি আরব যেনো নিজেদের সিদ্ধান্তের ওপর দ্বিতীয়বার দৃষ্টি দেয় ও তাবলিগের বিরুদ্ধে এমন জঘণ্য অপবাদ দেওয়া থেকে বিরত থাকে।’
রোববার (১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় দেওবন্দের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিটি দারুল উলুম দেওবন্দের প্যাডে লিখিত এবং তাতে মুহতামিম মুফতি আবুল কাসেম নোমানির স্বাক্ষর রয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘হজরত মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) দারুল উলুম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিসিন, শায়খুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দি (রহ.)-এর অন্যতম ছাত্র ছিলেন। তিনিই তাবলিগ জামাত প্রতিষ্ঠা করেন। যার অধীনে বড়দের নিষ্ঠাপরায়ণ চেষ্টা ও মেহনত দ্বীনি ও আমলি ক্ষেত্রে উপকার বয়ে আনছে। শাখাগত মতভেদ সত্ত্বেও তাবলিগ জামাত নিজের মিশনে কাজ করে যাচ্ছে। গোটা বিশ্বে তাদের কাজ ছড়িয়ে আছে। এর সঙ্গে যুক্ত সদস্য ও জামাতের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর শিরক, বিদআত ও সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। দারুল উলুম দেওবন্দ এর নিন্দা জানাচ্ছে। পাশাপাশি সৌদি সরকারের কাছে আবেদন করছে, তারা যেন নিজেদের এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে দ্বিতীয়বার ভাবে এবং তাবলিগ জামাতের বিরুদ্ধে এ ধরনের অপতৎপরতা থেকে বিরত থাকে।’
এর আগে ৬ ডিসেম্বর সৌদি আরবের ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রী ডা. আবদুল লতিফ আলে শায়খের নির্দেশে জুমার খুতবায় তাবলিগ জামাতের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে আদেশ দেওয়া হয় এবং মন্ত্রণালয় থেকে সরবরাহকৃত খুতবায় তাবলিগের নিন্দা করা হয়। ওই খুতবায় তাবলিগ জামাতের ওপর আনা হয় বেশ কিছু ভিত্তিহীন অভিযোগ।
তাবলিগ বিষয়ে সৌদি আরবের এমন সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার আলেমরাও। তাদের মতে, সৌদি আরবের এমন সিদ্ধান্ত ইসলামের বিরুদ্ধে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ।
সৌদি আরবের এমন অযৌক্তিক সিদ্ধান্তে বিশ্বের শান্তিকামী মুসলিম ধর্ম প্রচারকরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আলেমদের দাবি, তাবলিগ জামাত একটি দ্বীনি প্রতিষ্ঠান। এ জামাত শান্তি ও শুভেচ্ছার বার্তা দেয়। সৌদি সরকারের এমন মনোভাব কোনোভাবেই কাম্য নয়। সৌদি আরবের উচিত তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা।
ভারতের বিশিষ্ট লেখক ডক্টর ওবায়েদ ইকবাল আসিম বলেছেন, ‘সৌদি সরকার এ বিষয়ে যে অবস্থান নিয়েছে তা গ্রহণীয় নয়। তাবলিগ জামাত প্রসংশনীয় কাজ করে। তাবলিগ জামাত সারাবিশ্বে শান্তি ও সদিচ্ছার সঙ্গে তাদের ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করছে। ধর্ম ও মসজিদ থেকে দূরে থাকা মানুষগুলোকে তারা নামাজের কাছাকাছি আসতে, মসজিদমুখী হতে উৎসাহিত করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সৌদি আরবের আগে বিশ্বের কেউ তাবলিগ জামাতের পদ্ধতির দিকে আঙুল তুলতে পারেনি, তাই মনে হচ্ছে, সৌদি সরকারের এই সিদ্ধান্ত ইসলামের বিরুদ্ধে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ।’
ভারতের বিশিষ্ট আলেম মাওলানা নাদিম আল ওয়াজিদি সৌদি সরকারের সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘সৌদি সরকারের কাছ থেকে এই দায়িত্বজ্ঞানহীন মনোভাব প্রত্যাশিত ছিল না। সৌদি সরকারকে যদি তাবলিগ জামাতের ব্যাপারে অবস্থান নিতেই হয়, তাহলে ভারত-পাক উপমহাদেশ ও অন্যান্য দেশের আলেমদের সঙ্গে নিয়ে গবেষণা করা উচিত ছিল।’
তিনি বলেন, ‘সৌদি সরকারের এমন পদক্ষেপ বিশ্বের অন্যান্য দেশে ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলবে, যেখানে তাবলিগ জামাতের মতো ধর্মীয় সংগঠনের ওপর নিষেধাজ্ঞা শুরু হতে পারে। এর সম্পূর্ণ দায় সৌদি আরবকে নিতে হবে।’