হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ন্যায়সঙ্গত হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া পরিহার করবে আমি তার জন্য জান্নাতের বেষ্টনীর মধ্যে একটি ঘরের জিম্মাদার; আর যে ব্যক্তি তামাশার ছলেও মিথ্যা বলে না আমি তার জন্য জান্নাতের মধ্যখানে একটি ঘরের জিম্মাদার, আর যে ব্যক্তি তার চরিত্রকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে আমি তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থিত একটি ঘরের জিম্মাদার।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৪৮০০
আলোচ্য হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মুমিনদের বাক-সংযমে উদ্বুদ্ধ করেছেন। বিশেষত তিনি ঝপড়া পরিহার ও হাসির ছলে মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। মুমিন ভালো কথা ও জিকিরের মাধ্যমে তার জিহ্বাকে সজীব রাখে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে তোমার জিহ্বাকে সজীব রাখো।’ -সুনানে তিরমিজি : ৩৩৭৫
অসংযত বাক্য ব্যয়ের যত বিপদ
অসংযত ও অনিয়ন্ত্রিত বাক্য ব্যয় মানুষকে পৃথিবীতে লাঞ্ছিত এবং পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কোরআন ও হাদিসে সব ধরনের অসংযত বাক্য ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে, যার কয়েকটি তুলে ধরা হলো।
মুখের উপার্জন জাহান্নাম
হজরত মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করেন, ‘হে আল্লাহর নবী, আমরা যে কথাবার্তা বলি এগুলো সম্পর্কেও কি পাকড়াও করা হবে? তিনি বললেন, হে মুয়াজ, তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক! মানুষকে শুধু জিহ্বার উপার্জনের কারণেই অধোমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ -সুনানে তিরমিজি : ২৬১৬
কথায় কথায় শপথকারী লাঞ্ছিত হয়
যারা কথায় কথায় শপথ করে তারা লাঞ্ছিত হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অনুসরণ করো না তার, যে কথায় কথায় শপথ করে, যে লাঞ্ছিত- পেছনে মানুষের নিন্দাকারী, যে একের কথা অপরকে লাগিয়ে বেড়ায়।’ -সুরা কালাম : ১০-১১
অভিশাপ করা নিন্দনীয়
মানুষকে অভিশাপ করা নিন্দনীয়। যে ব্যক্তি মানুষকে বেশি বেশি অভিশাপ করে আল্লাহ পরকালে তাদের সুপারিশ ও সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন না। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘বেশি বেশি অভিশাপকারী কেয়ামতের দিন সুপারিশকারী ও সাক্ষ্যদাতা হবে না।’ -সহিহ মুসলিম : ২৫৯৮
বিতর্ক-বিবাদ পথভ্রষ্টতার কারণ
বিতর্ক ও বিবাদ মানুষকে সত্য ও সুপথ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো সম্প্রদায় সুপথ পাওয়ার পর আবার পথভোলা হয়ে থাকলে তা শুধু তাদের বিবাদ ও বাকবিতণ্ডায় জড়িত হওয়ার কারণেই হয়েছে। তারপর তিনি এ আয়াত তেলাওয়াত করেন- ‘এরা শুধু বাকবিতণ্ডার উদ্দেশ্যেই আপনাকে এ কথা বলে। বস্তুত এরা এক ঝগড়াটে সম্প্রদায়।’ -সুরা জুখরুফ : ৫৮; সুনানে তিরমিজি : ৩২৫৩
মুমিন কথাবার্তায় সংযত হয়
অর্থহীন কথাবার্তা পরিহার মুমিনের বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনরা সফলকাম হয়েছে, যারা তাদের নামাজে বিনয়ী, যারা অর্থহীন কথা-কাজ থেকে বিরত থাকে।’ -সুরা মুমিনুন : ১-৩
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।’ -সহিহ মুসলিম : ৪৭
মুমিন কাউকে বাক্যবাণে জর্জরিত করে না
মুমিন কথাবার্তায় সংযত হয়। সে কাউকে কথার মাধ্যমে আহত করে না। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রকৃত মুসলিম সে, যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে।’ –সহিহ বোখারি : ৬৪৮৪
যেসব কথায় কল্যাণ রয়েছে
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ কল্যাণকর কথার কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের বেশিরভাগ গোপন পরামর্শে কোনো কল্যাণ নেই। তবে কল্যাণ আছে যে নির্দেশ দেয় দান-খয়রাত, সৎকাজ ও মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপনের; আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আকাঙ্ক্ষায় কেউ তা করলে আল্লাহ তাকে অবশ্যই মহাপুরস্কার দেবেন।’ -সুরা নিসা : ১১৪