আল্লাহতায়ালার অপার কৃপায় আমরা পবিত্র মাহে রমজানের রহমতের দশক অতিবাহিত করছি, আলহামদুলিল্লাহ। রমজান মাস এলে রোজার সঙ্গে সঙ্গে যে ইবাদতটির নাম সর্বাগ্রে আসে, তা হলো তারাবির নামাজ। তারাবি শব্দের আভিধানিক অর্থ বিশ্রাম বা আরাম।
তারাবির নামাজে চার রাকাত নামাজ পড়ার পর কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নেওয়া হয়, তাই পরিভাষাগতভাবে এ নামাজকে তারাবির নামাজ বলা হয়। ইসলামি স্কলাররা অধিকহারে কল্যাণ কামনায় তারাবির নামাজের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।
অনেকের মতে, তারাবির নামাজ আসলে তাহাজ্জুদ নামাজেরই আরেকটি নাম, কিন্তু রমজান মাসে সর্ব সাধারণ যেন এ থেকে অধিকহারে কল্যাণমণ্ডিত হতে পারে এ জন্য সাধারণ মানুষকে রাতের প্রথম ভাগে অর্থাৎ এশার নামাজের পরপরই এ নামাজ পড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণিত হাদিস থেকে জানা যায়, তিনি (রা.) বলেছেন, ‘একদিন গভীর রাতে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বাহির হয়ে মসজিদে গেলেন এবং নামাজ পড়লেন, কিছু লোকও তার (সা.) পেছনে নামাজ পড়লেন। ভোর হওয়ার পর লোকজন পরস্পরের সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করায় দ্বিতীয় রাতে লোক সংখ্যা আরও বেড়ে গেল এবং তারা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে নামাজ পড়ল। এ দিন ভোর হওয়ার পর লোকদের মাঝে আরও বেশি আলোচনা হল এবং তৃতীয় রাতে মসজিদের লোক সমাগম আরও বেশি হল, মহানবী (সা.) বাইরে বের হয়ে নামাজ পড়লেন আর তারাও তার (সা.) সঙ্গে নামাজ পড়লেন। যখন চতুর্থ রাত এলো তখন এতো লোক সমাগম হল যে, মসজিদে স্থান সংকুলান হলো না। কিন্তু মহানবী (সা.) এ রাতে তারাবির নামাজের জন্য বের হলেন না, এমনকি ভোর হয়ে গেলে ফজরের নামাজের জন্য বের হলেন এবং ফজরের নামাজ শেষে লোকদের দিকে মুখ ফিরিয়ে তাশাহহুদ পাঠের পর বললেন, তোমাদের বিষয়টি আমার কাছে গোপন ছিল না। কিন্তু আমি আশঙ্কা করছিলাম যে, এ নামাজ না আবার তোমাদের ওপর ফরজ করে দেওয়া হয় আর তোমরা তা পালনে ব্যার্থ হও। হজরত রাসুলুল্লাহ্ (সা.) ইন্তেকাল করলেন এবং এ নামাজের বিষয়টি তেমনই রইল।’ -সহিহ বোখারি
হজরত আবদুর রহমান বিন আবদুল কারি (রা.) বর্ণনা করেছেন, রমজানের এক রাতে আমি হজরত উমর বিন খাত্তাব (রা.)-এর সঙ্গে মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হলাম এবং দেখলাম, লোকেরা পৃথক পৃথক দলে বিভক্ত হয়ে আছে। কেউ একা একা নামাজ পড়ছিল, আবার কেউ কেউ এভাবে নামাজ পড়ছিল যে, তার পেছনে কিছু লোক নামাজ পড়ছিল। এ অবস্থা দেখে হজরত উমর (রা.) বললেন, আমার মনে হয় সবাইকে একজন কারির পেছনে একত্রিত করে দিলে ভালো হয়। অতঃপর তিনি (রা.) দৃঢ় প্রত্যয় করলেন এবং উবাই বিন কাবের পেছনে তাদের সবাইকে মুক্তাদি হিসেবে একত্রিত করে দিলেন।
তারাবি নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে উল্লেখ আছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের আশায় রমজানে তারাবির নামাজ আদায় করে তার পূর্ববর্তী সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ -বোখারি ও মুসলিম
এ থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায়, তারাবির নামাজ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আমাদের প্রভূ প্রতিপালক যিনি সকল কল্যাণের মালিক এবং সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী, তিনি প্রতি রাতে এমন সময় পৃথিবীর নিকটতম আকাশে নেমে আসেন যখন রাতে এক-তৃতীয়াংশ বাকি থাকে আর বলেন, কে আমাকে ডাকে যেন আমি তার ডাকে সারা দেই, কে আমার কাছে প্রার্থনা করে যেন আমি তাকে দান করি এবং কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে আর আমি তাকে ক্ষমা করে দেই।’ -বোখারি
আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি ও তার ভালোবাসা পেতে চাইলে নফল ইবাদত একান্ত প্রয়োজন। আমরাও যেন পবিত্র এই রমজানে ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি অনেক বেশি নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার নৈকট্য প্রাপ্তগণের অন্তর্ভুক্ত হতে পারি, সেই তাওফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
ই-মেইল- masumon83@yahoo.com