মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১২ রবিউল আউয়াল দুনিয়াতে শুভাগমন করেন। নবীর মুবারক দায়িত্ব বা রিসালাতের মহামিশনের সফলতা সম্পন্ন করেন তিনি। ইসলামি সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠার সূচনা যে হিজরত, তা-ও সংঘটিত হয়েছিল এ মাসেই। আবার এই মাসেরই ১২ তারিখে আখেরি নবীর তিরোধান বা ওফাত হয়েছিল।
কালক্রমে দিনটি মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সীরাতুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। যার এর অর্থ হলো প্রিয় নবী (সা.)–এর জন্মানুষ্ঠান এবং তাঁর পথে চলার সঙ্কল্প গ্রহণ। ধীরে ধীরে এর সঙ্গে ‘ঈদ’ শব্দ যোগ হয়ে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রূপ লাভ করে। যার অর্থ হলো মহানবী (সা.)–এর জন্মোৎসব। এ পর্যায়ে আরেকটি পরিভাষাও প্রচলিত হতে থাকে ‘সিরাতুন নবী (সা.) অর্থাৎ নবী (সা.)–এর জীবন চরিত বা জীবনী আলোচনা অনুষ্ঠান।
বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মতারিখ নিয়ে সিরাত গ্রন্থ, জীবনীকার, ইতিহাসবেত্তা ও জ্যোতির্বিদদের মধ্যে বিস্তর মতপার্থক্য রয়েছে। তবে প্রায় সবাই এ বিষয়ে একমত যে তাঁর জন্ম হয়েছিল রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ সোমবার প্রত্যুষে বা ভোরবেলায় তথা উষালগ্নে। প্রসিদ্ধমতে, সেদিন ছিল ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ২০ এপ্রিল (১২ রবিউল আউয়াল)। আর তিনি ইহলোক থেকে চিরবিদায় নেন রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ দ্বিতীয় সোমবার অপরাহ্ণে বা গোধূলিলগ্নে। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমন ও প্রস্থান একই দিনে, এ কথাই সর্বজনবিদিত সত্য।
মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর পরিচয় প্রকাশ করা। নবী-রাসুল প্রেরণের লক্ষ্য হলো মানুষকে আল্লাহর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। তাই আল্লাহকে পেতে রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর আদর্শ অনুসরণ করতেই হবে। অর্থাৎ রাসুলে আকরাম (সা.) যা করেছেন বা করতে বলেছেন, তা করতে হবে। আর যা করেননি বা করতে বারণ করেছেন, তা বর্জন করতে হবে। আল্লাহ তায়ালার ইবাদতের উদ্দেশ্যে কোরআনের নির্দেশনায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করাই ইসলামের মূল শিক্ষা।
এজন্য কোরআনের সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ৩১-এ স্পষ্টভাষায় বলা হয়েছে, ‘বলুন (হে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসবে, তবে আমার অনুকরণ করো; আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন।’
হাদিস শরিফে আছে, ‘তোমরা কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ মুমিন হবে না, যতক্ষণ না আমি হব তার নিকট তার পিতা-পুত্র ও যাবতীয় সবকিছু হতে প্রিয়।’ (বুখারি, প্রথম খণ্ড: হাদিস: ১৩ ও ১৪)
অতএব নবীপ্রেম ও নবীর অনুসরণ মুমিন-মুসলমানের অপরিহার্য কর্তব্য। এরই ভিত্তিতে শান্তির ধর্ম ইসলামের সাম্য ও ন্যায়নীতি ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবনে সগৌরবে প্রতিষ্ঠা করা। এই শিক্ষা প্রদানই নবী বা রাসুল প্রেরণের মূল উদ্দেশ্য; যা পবিত্র কোরআনে বারবার বিবৃত হয়েছে, ‘তিনি সে মহান প্রভু যিনি রাসুল প্রেরণ করেছেন, সঠিক পন্থা ও সত্য ধর্মসহযোগে, যাতে সে ধর্মকে প্রকাশ করতে পারেন সর্ব ধর্মের শিখরে।’ (সুরা-৪৮ ফাৎহ, আয়াত: ২৮)
প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি দরুদ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। কোরআনে এসেছে ‘অবশ্যই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর প্রতি দরুদ প্রেরণ করেন। হে মুমিনরা! তোমরাও তাঁর প্রতি যথাযথ দরুদ ও সালাম পেশ করো’ (সূরা : আহজাব, আয়াত : ৫৬)। এমনকি, "আসমান যমীনের মাঝে দুআ ঝুলন্ত থাকে। তুমি তোমার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদ পেশ করা পর্যন্ত তা উপরে ওঠে না।" -জামে তিরমিযী, হাদীস ৪৮৬।
নবী মুহাম্মাদ মুস্তাফা আহমদ মুজতাবা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন শেষ নবী, সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, বিশ্বমানবতার জন্য রহমত স্বরূপ। তাঁর প্রতি লক্ষকোটি দরুদ ও সালাম:
"আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া’আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া’আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া’আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া’আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ”। (বুখারী, মিশকাত পৃঃ ৮৬, হা/৯১৯)
অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ ও তার বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করুন, যেভাবে আপনি ইবরাহীম ও তাঁর বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করেছিলেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত সম্মানিত।
হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ ও তার বংশধরদের উপর বরকত নাজিল করুন, যেভাবে ইবরাহীম ও তাঁর বংশধরদের উপর বরকত নাজিল করেছিলেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত সম্মানিত।”