ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের তিন সপ্তাহ পার হতে চলেছে। এ সময়ে নারী, শিশুসহ সাত হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। তবে এই যুদ্ধ বন্ধের বদলে সম্প্রসারণের পথে এগোচ্ছেন বিশ্বনেতারা। চলমান যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মুসলিম সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি), আরব লীগ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জোট (এএসইএএন), উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ (জিসিসি) থেকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ যুদ্ধবিরতির আহ্বান বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়।
সর্বশেষ ২৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ ও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে ইসরায়েলের রোষানলে পড়েছেন এর মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
গাজায় নিরপরাধ নাগরিকদের হত্যার নিন্দা ও নিরাপত্তা পরিষদের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান বলেন, ‘গাজার অধিবাসীদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির প্রচেষ্টা ও ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর সম্মিলিত সহিংসতা প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতা আমাদের প্রত্যাশিত নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা আনবে না। জাতিসংঘের আইন ও রেজুলেশন অনুসরণের ক্ষেত্রে দ্বিমুখিতা এই সংকটের বাইরেও ভয়াবহ পরিণতি তৈরি করেছে, যা আইনের নীতি ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার বৈধতাকে প্রভাবিত করছে। নিরাপত্তা পরিষদ যে লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা পালনের এখনই সময়। সামরিক অভিযান বন্ধসহ বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এখনই দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে।’
এ সময় তিনি অতিদ্রুত যুদ্ধের অবসান, জরুরি সহায়তা প্রেরণ, বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তাসহ অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানান।
এদিকে গত বুধবার তুরস্কের সংসদ অধিবেশনে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দ্বিরাষ্ট্রীয় শান্তি সম্মেলন আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান। এতে এ অঞ্চলের সব পক্ষকে একসঙ্গে বসে সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের পাশাপাশি অন্য দেশগুলোকে ইসরায়েলের ওপর চাপ তৈরির আহ্বান জানান তিনি।
তা ছাড়া ফিলিস্তিন ইস্যু ও আল-কুদসের সম্মান রক্ষায় প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সংস্থা অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনকে (ওআইসি) অন্তত এ সময়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে বলেন তিনি। তিনি ফিলিস্তিনে ন্যায্য শান্তি-নিরাপত্তা ও নাগরিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং মানবিক সহায়তা প্রদানে মুসলিম দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
এদিকে যুক্তরাজ্যের প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতাদের ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানানোর দাবি জানিয়েছেন দেশটির দেড় শতাধিক মুসলিম কাউন্সিলর। গত বুধবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে লেবার মুসলিম নেটওয়ার্ক নামের সংগঠনটি বলে, ‘আমরা লেবার পার্টিকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানোর অবস্থান গ্রহণ করতে অনুরোধ করছি। আমরা ব্রিটিশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিরীহ মানুষের জীবন বাঁচাতে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’