লোকমুখে শোনা যায়, বৃহস্পতিবার মৃত ব্যক্তির আত্মা তাদের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে আসে। এ ধারণাটি একেবারেই ভুল। মৃত ব্যক্তি বা মৃতের আত্মা কখনোই আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে আসে না।
সাধারণ মৃতরা রুহের জগতে থাকে। ঈমানদারদের রুহ থাকে ইল্লিয়্যিনে। ইল্লিয়্যিনের পরিচয় দিয়ে মুফাসসির সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ইল্লিয়্যিন অর্থ জান্নাত অথবা সপ্তম আকাশে আরশের নিচে অবস্থিত একটি স্থান।
আর কাফেরের রুহ থাকে সিজ্জিনে। এটা জাহান্নাম নয় কিন্তু এখানের পরিবেশ জাহান্নামের মতোই। কবরের আজাব বলতে যা বুঝায়, তা এই সিজ্জিনেই হবে।
এ দুই জগতের অবস্থান সম্পর্কে আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন।
তবে যে কোনো সময় মৃত ব্যক্তির মাগফেরাতের দোয়া করলে সঙ্গে সঙ্গে তা মৃতের রুহে পৌঁছে দেওয়া হয়। নফল নেক কাজের সওয়াবও পৌঁছে দেওয়া হয়। বিশেষত দান-সদকার সওয়াব। দুনিয়ায় করে যাওয়া তার সদকায়ে জারিয়া, দ্বীনি ইলম প্রসারের ব্যবস্থা এবং সন্তানের নেক দোয়া মৃত্যুর পরও সবসময় তার রুহে পৌঁছুতে থাকে।
বৃহস্পতিবার আত্মা বাড়িতে আসার যে কথাটি শোনা যায় এর তাৎপর্য হলো- প্রতি বৃহস্পতিবার তথা জুমাপূর্ব রাতে কবরবাসীরা যে কোনো জিয়ারতকারীর অপেক্ষায় থাকে। কেউ যদি জিয়ারতে যায় কিংবা ঘরে বসেই সওয়াব পাঠায় তাহলে পুরা কবরবাসী আনন্দিত হয়। এমনও আছে কোনো মানুষ ঘনঘন যদি নিজ পিতা-মাতা বা আত্মীয়ের কবর জিয়ারতে যায়, তাহলে সঙ্গের কবরবাসীরা তার বাবা-মা বা আত্মীয়ের রুহকে জিজ্ঞেস করে আজ কি তোমার ছেলে, নাতি, ভাই, ভাতিজা বা আত্মীয়টি আসবে না, বা এখনও আসছে না কেন? কিংবা এ বৃহস্পতিবার এলো না কেন? তাহলে তো আমরাও তার দোয়ার বরকতে কবরে অনেক শান্তি পেতাম। এভাবে জুমার রাত দিন ২৪ ঘন্টার মধ্যে কিংবা সারা সপ্তাহ যখনই কেউ কবর জিয়ারত করে, দোয়া-দরুদ পড়ে আর সব ঈমানদার নারী-পুরুষের জন্য দোয়া করে তখন সবার মধ্যেই আনন্দের সাড়া পড়ে যায়।
এক হাদিসে আছে, মৃত ব্যক্তিরা সমুদ্রে হাবুডুবু খাওয়া মানুষের মতো। যে একটা অবলম্বনের জন্য হা-হুতাশ করতে থাকে। যদি কোনো ডিঙ্গি বা কাঠের টুকরা পায় অথবা কোনো উদ্ধারকারী তাকে জাহাজে উঠায় তখন তার যেমন আনন্দ লাগে, মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়াকারী, জিয়ারতকারী, সওয়াব রেসানীকারী (দোয়াকারী) লোকটিকে মৃতের তেমনই প্রিয় ও কাঙ্খিত বলে মনে হয়।